ভরসা করেছিলেন মোদি-শাহ
নিজস্ব প্রতিনিধি— এবার লোকসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপির বিপর্যয়ে দলের অন্দরে প্রশ্নের মুখে পড়লেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছিলেন শুভেন্দুকে৷ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের থেকেও তাঁর উপর বেশি ভরসা করেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা৷ বিরোধী দলনেতা তাঁর পছন্দের অনেককে প্রার্থী তালিকায় স্থান দিয়েছেন৷ কিন্ত্ত ফলাফলে দেখা গেল, বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে৷ নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জেলায় শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছিল, আপনারা বাংলা থেকে বিজেপিকে ৩০টি আসন দিন৷ প্রধানমন্ত্রীজি বাংলাকে সোনার খনি বানিয়ে দেবেন৷ কিন্ত্ত কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মতো এবারও বাংলা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল৷ সেবার দুশো পারের স্লোগান ৭৭-এ এসে মুখ থুবডে় পডে়ছিল৷ এবার বিজেপির ৩০ থেকে ৩৫-এর গল্প শেষ হয়ে গেল ১২ তেই৷ বিজেপি সূত্রের খবর, প্রার্থী বাছাইয়ে শুভেন্দুর মতামতকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অন্য বিজেপি নেতারা৷ শুভেন্দুর একগুঁয়েমির জন্যই মেদিনীপুর থেকে বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে সরে যেতে হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে৷ সেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে মাত্র আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধান ছিল বিজেপি প্রার্থীর জয়ের৷ সেই কঠিন আসনে এবার লড়াই করতে হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার ভোটে জেতা দিলীপকে৷ অচেনা মাঠে খেলতে প্রথমে অ-রাজি ছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ ঘনিষ্ঠ মহলে দিলীপ জানিয়েছিলেন, নতুন কেন্দ্রে তিনি না দাঁড়াতে পারেন৷ পরে অবশ্য অচেনা মাঠেই চেনা ছন্দে খেলতে নামেন দিলীপ৷ তাঁর হয়ে রাজ্য বিজেপির নেতারা তেমন প্রচার করেননি৷ তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসেছিলেন৷ এক সভায় তিনি মঞ্চে দাঁডি়য়েই দিলীপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ওকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি৷
দিলীপ অবশ্য কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে আমন্ত্রণ জানাননি তাঁর কেন্দ্রে প্রচারের জন্য৷ অথচ দিলীপ যখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি, তখনই গত লোকসভা ভোটে বিজেপি এ রাজ্যে ১৮টি আসন পায়৷ কিন্ত্ত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরই তাঁকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে সভাপতি করা হয়৷ দলের অন্দরে শুভেন্দুর সঙ্গে সুকান্ত এবং দিলীপের মধুর সম্পর্ক নিয়েও নানা চর্চা রয়েছে৷ গত তিন বছরে বিজেপির মঞ্চে একসঙ্গে শুভেন্দু এবং দিলীপকে দেখা গিয়েছে কালেভদ্রে৷ লোকসভা ভোটে ভালো ফল করলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য বিজেপিতে শুভেন্দুর গুরুত্ব আরও বাড়ত৷ কিন্ত্ত এই বিপর্যয়ে তাঁরও কপাল পুড়ল৷ দিলীপ এখনও মুখ খোলেননি৷ তিনি এমনিতেই কাছাখোলা লোক৷ যাকে যা খুশি বলে দিতে তাঁর জুডি় নেই৷ দলীয় বৈঠকে রাজ্য নেতাদের তোপের মুখে পড়তে হতে পারে শুভেন্দুকে৷ ইতিমধ্যেই নেতাদের একাংশ একান্ত আলোচনায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে৷ এই প্রবণতা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ দিল্লিবাডি়র লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কার্যত অগাধ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের চেয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতার উপরে বেশি ভরসা করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ বিশেষত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলার ভোটে শুভেন্দুর মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে বিজেপির অন্দরেই আলোচনা ছিল৷ এখন ভোটের ফলপ্রকাশে শুভেন্দুর গুরুত্ব কোন জায়গায় দাঁড়ালো, তা সময় বলবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷