• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

বামেরা বিরোধী ভোট কেটে তৃণমূলের জয়ে সাহায্য করেছেন বলে দাবি করলেন শুভেন্দু

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা:  সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র পরাজয়ের জন্য সিপিএম-কে কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি রাজ্যের ১২টি আসনে বিজেপির পরাজয়ের জন্য বামেদের ভোট কাটার কারণকে দায়ী করলেন। অর্থাৎ তাঁর কথায়, বাম প্রার্থীরা ভোট না কাটলে বিজেপি রাজ্যে মোট ২৪টি আসনে জয়লাভ করতে পারত। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, গত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা:  সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র পরাজয়ের জন্য সিপিএম-কে কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি রাজ্যের ১২টি আসনে বিজেপির পরাজয়ের জন্য বামেদের ভোট কাটার কারণকে দায়ী করলেন। অর্থাৎ তাঁর কথায়, বাম প্রার্থীরা ভোট না কাটলে বিজেপি রাজ্যে মোট ২৪টি আসনে জয়লাভ করতে পারত। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, গত ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে একইভাবে রাজ্যের ৫০টির বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট কেটে তৃণমূলের জয়কে সুনিশ্চিত করেছিল বামেরা।

আজ, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দিবসের অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, কার্যত বিজেপির ভোট কেটে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকেই সহযোগিতা করেছেন বাম প্রার্থীরা। উদাহরণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন যাদবপুর, দমদম, হাওড়া ও তমলুকের মতো লোকসভা কেন্দ্রগুলির কথা উল্লেখ করেন। যদিও তমলুকে প্রায় ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন প্রাক্তন বিচারপতি ও বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবুও তাঁর বিজিত ভোট ব্যবধানের চেয়ে বেশি ভোট পান বামপ্রার্থী সায়ন ব্যানার্জী। অন্যদিকে যাদবপুরে বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে যে ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। তার থেকে মাত্র ৫১১ ভোট বেশি পেয়েছিলেন সিপিএম-এর সৃজন ভট্টাচার্য। অর্থাৎ সায়নী ঘোষ ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ২০১ ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন। আর সৃজন ভট্টাচার্যের প্রাপ্ত ভোট ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭১২ ভোট। একই পরিস্থিতি হয় দমদমে। লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তকে হারিয়েছেন ৭০ হাজার ৬৬০ ভোটে। অথচ এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী পেয়েছেন ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৭৮৪ ভোট। একইভাবে হাওড়াতে বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৪২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এই কেন্দ্রে সেই ব্যবধানের প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক ভোট পান সিপিএম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫টি। একইভাবে ব্যারাকপুরে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং মাত্র ৬৪ হাজার ৪৩৮ ভোটের ব্যবধানে পার্থ ভৌমিকের কাছে হেরেছেন। এই আসনে বাম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ পেয়েছেন ১ লক্ষ ৯ হাজার ৫৬৪ ভোট। মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পল জুন মালিয়ার কাছে হেরেছেন মাত্র ২৭ হাজার ১৯১ ভোটের ব্যবধানে। অথচ এই আসনে বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্টর প্রাপ্ত ৫৭ হাজার ৭৮৫টি। এদিকে বরানগর বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা মাত্র ৮ হাজার ১৪৮ ভোটে বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষকে পরাজিত করেন। অথচ এই কেন্দ্রে সিপিএম-এর তন্ময় ভট্টাচার্য পেয়েছেন ২৬ হাজার ৭৩৫ ভোট। এইসব কারণেই বিরোধী দলনেতা বামেদের দায়ী করেছেন বলে দাবি বিজেপি-র।

এদিন শুভেন্দু দাবি করেন,‘‘সিপিএমের যে এজেন্ডা ছিল, সেই এজেন্ডা অনুযায়ী তারা সফল হয়েছে। তারা হিন্দু ভোট কাটার জন্য দাঁড়িয়েছিল। ওখানে সুজন, এখানে সায়ন, সব্যসাচীরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছিল।’’ তিনি ইন্ডি জোটকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এটা পিন্ডি জোটের কৌশল। পশ্চিমবঙ্গকে যারা ৩৪ বছর ধরে চেটে চেটে খেয়েছে, ৫৪ হাজার লোককে খুন করেছে, যারা সাঁইবাড়ি, নানুর, নন্দীগ্রাম, সূচপুর, আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের পুড়িয়েছে, সব কলকারখানাতে তালা লাগিয়েছে, তাদের এজেন্ডায় তারা সফল হয়েছে। কিন্তু সময় কথা বলবে।’’

প্রসঙ্গত একটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির জয় পরাজয়ে অনেকগুলি ফ্যাক্টর কাজ করে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন কোনও প্রধান ফ্যাক্টর অনুঘটকের কাজ করে সম্ভাব্য সমস্ত ফলাফলকে গুলিয়ে দিতে পারে। এবং সেটাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ২০২৪ লোকসভা ভোটে সারা দেশের মতো এরাজ্যেও বিজেপি-র ভরাডুবি হয়। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও ২০১৯-এ প্রাপ্ত ১৮টি আসন থেকে গেরুয়া শিবির ৬টি আসন খুঁইয়ে মাত্র ১২-তে নেমে আসে। আর শাসকদল তৃণমূলের বিপর্যয়ের যে সম্ভাবনা বিভিন্ন সমীক্ষায় করা হয়েছিল, সেই বিপর্যয় কাটিয়ে তৃণমূল গতবারের থেকে আরও ৭টি আসনে জয়লাভ করে। রাজনৈতিক মহলের সিংহভাগ মানুষের ধারণা, এই ড্যামেজ কন্ট্রোলে মমতার লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, সবুজশ্ৰীর মতো জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিই তৃণমূলকে দুঃসময়ে উতরে দিয়েছে।

তবুও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি পরিস্থিতির মোকাবিলায় একাধিক তত্ত্ব দিয়েছে। এভাবে বাংলার জনমানসে গেরুয়া শিবিরের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে মোদির শপথ গ্রহণের আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লিতে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, কিছুই হয়নি। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কারণ, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের আসন সংখ্যা বাড়লেও শতকরা ভোট বাড়েনি। বরং প্রায় তিন শতাংশ কমে গিয়েছে। অপরদিকে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার প্রায় একই আছে। সুকান্তবাবু সেদিন দাবি করেন, লোকসভায় ছয়টি আসন চলে গেলেও বিধানসভা ভিত্তিক ভোটের নিরিখে বিজেপি এখনও ১০০টি আসনে এগিয়ে আছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় একটু ধাক্কা দিলেই এই সরকার (মমতা সরকার) পড়ে যাবে।