মির্জা গালিব স্ট্রিটে শুট-আউট, মূল অভিযুক্ত সোনা, গ্রেফতার বেড়ে ৪

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা:  মধ্যরাতে মির্জা গালিব স্ট্রিটে শুট-আউট। গুলিবিদ্ধ হন এক যুবক। এই ঘটনা এখনো পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসছে সোনার। মির্জা গালিব স্ট্রিটে গুলি চালানোর ঘটনায় পার্কস্ট্রিট থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও মূল অভিযুক্ত সোনাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত যে তিনজনকে শনিবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁরা হলেন কলিন স্ট্রিট এর বাসিন্দা আসিফ আহমেদ (৩১), মির্জাগালিব স্ট্রিটের বাসিন্দা ফারুক খান (৪১), মির্জাগালিব স্ট্রিটের বাসিন্দা আফসার আলি (২৪)। সিসিটিভিতে এদের গুলি চালাতে দেখা না গেলেও এই ঘটনার সঙ্গে তাঁরা যুক্ত বলে মনে করছে পুলিশ। এই ঘটনায় আবার রবিবার সকালে সাব্বির নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ এই সাব্বিরকে সিসিটিভি ফুটেজে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে। এই গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্তের নাম সোনা। যে যুবক গুলি খেয়েছে তিনি সোনার নামেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃত সাব্বির মূল অভিযুক্ত সোনার শ্যালক। পুলিশ সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোনার খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন প্রশ্ন উঠছে কে এই সোনা? অপরাধ জগতে তাঁর হাতেখড়িই কবে হয়েছে? ১৯৮৬ সালে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয় ফইউদ্দিন ওরফে সোনার। ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনের কুখ্যাত গ্যাংস্টার আক্তার মেহমুদের হাত ধরেই অপরাধ জগতে পা দেয় সোনা। ওই সময়ই রশিদ আলম ওরফে গব্বরও ওই দলে যোগ দিয়েছিল। পরে গব্বর এবং সোনা মিলে একটি গ্যাং তৈরি করে। ইংলিশে অনর্গল কথা বলা সোনাকে ” কনভেন্টে পড়া গ্যাংস্টার” বলা হত। পার্কস্ট্রিট, ধর্মতলার তাবর তাবর নাইট ক্লাবে তাঁদের যাতায়াত ছিল।

একসময় দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় দাপট চলত সোনা এবং গব্বরের। সোনার বুদ্ধিতেই সোনা-গব্বরের দল চলতো। খাদিম কর্তা পার্থ রায় বর্মনের অপহরণ মামলাতেও অভিযুক্ত হিসাবে নাম ছিল সোনার। ১৯৯৭-৯৮ সালে পরপর দুবার খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হন সোনা। এরপর সোনা গব্বরের দল ছেড়ে তিল জলার চুন্নু মিয়ার দলে যোগ দেয়। তোলাবাজি, রিয়েল এস্টেটের পাশাপাশি ড্রাগ ব্যবসাতেও নাম লিখিয়েছিল সোনা। এরপর সোনা বাসা বদল করি মধ্য কলকাতা থেকে তিলজলার সাপগাছি লেনে চলে আসে। সম্প্রতিকালে সে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।


পুলিশ সূত্রের খবর, সোনার বর্তমান ব্যবসা, মাদকের কারবার এবং রিয়েল এস্টেটের তোলাবাজি। মাঝে সে বেআইনি কল সেন্টারও খুলেছিল। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সোনার আদিবাড়ি বিহারের দারভাঙ্গায়। ঘটনার পর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর সোনার খোঁজ করা হচ্ছে। যদিও এই ঘটনায় সোনার মেয়ের দাবী, নিরাপত্তার খাতিরেই বাবা গুলি চালিয়েছেন। অন্যদিকে যে যুবকের ডান পায়ে গুলি লেগেছে, তার চিকিৎসা চলছে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে বাইকের রেষারেষিকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা হয়, আর তার জেরেই ওই যুবককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।