খায়রুল আনাম
লোকসভা ভোটে দলীয়স্তরে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ৩ এপ্রিল বীরভূম জেলা সফরে এসে, তারাপীঠে একটি লজে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের সাথে আলোচনা ছাড়াও ওই কর্মী সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়ে যান যে, কোথাও লোকসভা ভোটে দলের ফল খারাপ হলে সেখানকার নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হবে৷ কলকাতায় ২৭ জুলাই যে শহীদ সমাবেশ হবে, সেখানেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে৷ একদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জেলার সব দায়িত্ব নিজের হাতে সামলাতেন৷ কিন্ত্ত গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন৷ সেখানেই রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডলও৷ এই প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের ১৮ সদস্যের একটি সমীক্ষক দল জেলায় ঘুরে ঘুরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ, পানীয় জল, রাস্তা, আলো, আবাস প্লাস যোজনার বাড়ি নির্মাণ-সহ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে৷ লোকসভা ভোটের আগে জেলায় এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য জনসভা করার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলার যে সব নেতাদের মধ্যে ঝিমুনিভাব এসেছিলো, তাঁরাই এখন দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন৷ জেলার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিনবারের দলীয় তারকা সাংসদ শতাব্দী রায় এবারও দলীয় প্রার্থী হওয়ায় তাঁর সাথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথাও বলে গিয়েছিলেন৷
এবার শতাব্দী রায় তাঁর লোকসভা এলাকার বিধানসভা ভিত্তিক সাংসদ তহবিলের টাকায় কী কী উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার হিসাব সামনে নিয়ে এলেন স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে তিনি জানান, একজন সাংসদ তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলে প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা করে পান৷ গত পাঁচ বছরে তিনি তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলে যে ১৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন তা খরচ করতে পেরেছেন৷ অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে মাত্র ২২৩ টাকা৷ সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলে যে টাকা পাওয়া যায় তাতে বড় সেতু-সহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ করা যায় না৷ এবারও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শতাব্দী রায় বলেন, আগামীতে দিল্লিতে গিয়ে সাংসদ তহবিলের টাকা বাড়ানোর দাবি জানাবো৷ শতাব্দী রায় আরও অভিমত ব্যক্ত করেন যে, করোনাকালে সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে আট কোটি টাকা করে কেটে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেই টাকা রাখা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর নিজের তহবিলে৷ কিন্ত্ত সেই টাকার কী হলো, সেটা তো জানাতে হবে৷ তারাপীঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জানিয়ে যান যে, সাংসদের কেটে নেওয়া টাকায় প্রধানমন্ত্রীর জেট বিমান কেনা হয়েছে৷ সেইসাথে তাঁর অভিযোগ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে এসব করা হয়৷ কিছু লোক থাকেন যাঁরা নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করেন৷ আমাদের কাছে থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলো অথচ আমরা কিছুই জানতে পারলাম না৷ শতাব্দী রায় এবার প্রচারে বেড়িয়ে এসব বিষয়গুলির উপরে যেমন জোর দিচ্ছেন তেমনি, নিজেকে বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অনেকের আবদার মানতে, তাঁদের সাথে সেল্ফিও তুলছেন৷