জোট জল্পনা অব্যাহত- বিজেপি শিবসেনা জোট মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করবে নাকি শরদ পাওয়ার হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী দু’পক্ষের মধ্যে চিড় ধরিয়ে রাজনৈতিকভাবে ফের গুরুত্ব পেতে অ-বিজেপি সরকার গঠনে সমর্থ হবেন– পুরােটাই ভবিষ্যত বলবে। তবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে ঘুটি সাজাচ্ছে জল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সব পক্ষ।
অ-বিজেপি সরকার গঠনে কংগ্রেসের সমর্থন যে প্রাসঙ্গিক হয়ে দাড়িয়েছে তা বলা বাহুল্য, তাই বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন বাতিল করে দিয়ে ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি নেতা শরদ পাওয়ার মুম্বই ফিরে এসেছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে পাওয়ারের সােমবার দিল্লি যাওয়ার কথা থাকলেও মারাঠা নেতা শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনে কংগ্রেসের সমর্থনের ব্যাপারে আলােচনা করতে আগামিকাল দিল্লি যাবেন। শিবসেনা-বিজেপি সরকার গঠনের প্রশ্নে ক্ষমতা ভাগাভাগির ৫০-৫০ ফর্মুলা নিয়ে চলা ঠান্ডা যুদ্ধ ও দরকষাকষির মধ্যে শরদ পাওয়ার তড়িঘড়ি দিল্লি সফরটি সেরে ফেলতে চান।
শিবসেনাকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছেন শরদ পাওয়ার কংগ্রেসের থেকে পরােক্ষ সমর্থন চাইছেন এটাকে শিবসেনার ‘প্ল্যান বি’ বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা তকমা দিয়েছেন। শিবসেনার প্ল্যান বি হল, ছােটো দলগুলি ও নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন করা। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত প্ল্যান বি নিয়ে শরদ পাওয়ারের বাসভবনে গিয়ে আলােচনা করার পর এনসিপি নেতা কোর কমিটির বৈঠক করেন।
তিরিশ বছর ধরে বিজেপি-শিবসেনা জোট বহাল, কিন্তু ভােটের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকে জোট শরিকদের মধ্যে দূরত্ব লক্ষ্য করা গেছে। বিজেপি ও শিবসেনা জোট মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে- বিজেপি’র ঝুলিতে ১০৫টি আসন ও শিবসেনার ঝুলিতে ৫৬টি আসন। এতদূর ঠিক থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী পদ সহ একাধিক মন্ত্রক নিয়ে চাপা উত্তেজনা শুরু হয়েছে–ক্ষমতা ভাগাভাগির ৫০-৫০ ফর্মুলা নিয়ে শিবসেনা বিজেপি’র ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এনসিপি ৫৪টি ও কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছে। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে ১৪৫টি আসন দরকার।
এদিকে, ভারতীয় জনতা পার্টি অবশ্য এখনই আশা ছেড়ে দিচ্ছে না, তাদের আশা দ্রুত শিবসেনা ফিরে এসে আলােচনায় বসতে চাইবে। ভারতীয় জনতা পার্টির এক নেতা বলেন, ‘হাতে খুব একটা বেশি সময় নেই, আমরা চাই শরিক দল শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠন করা নিয়ে আলােচনায় বসতে’। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাটিল বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত শিবসেনা-বিজেপি সম্পর্ক ফের ঠিক হয়ে যাবে’।
বিজেপি’ও প্ল্যান বি নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত- শিবসেনা যদি শেষ মুহুর্তেও পেশী আস্ফালন করে তাহলে বিজেপি এককভাবে সরকার গঠন করার দাবি জানাবে। দলের কার্যনির্বাহী দলের তরফে বলা হয়, একক সর্বোচ্চ দল হিসেবে আমাদের দলের মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করবেন। তারপর বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষা করা হবে। ১৫ জন নির্দল বিধায়ক আমাদের সমর্থন করছেন। বিজেপি’র মিত্র পক্ষ রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়া, রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষ, রায়ক্রান্তি সংগঠনের সদস্যরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিজেপি’কে সরকার গঠন করতে দেওয়ার অনুরােধ জানাবেন। তারা প্রস্তাবনায় জানিয়েছেন, বিজেপি ১০৫টি আসন নিয়ে সর্বোচ্চ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৫জন নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ হুসেন দাওয়ানি কংগ্রেস সভানেত্রী সােনিয়া গান্ধিকে চিঠি লিখে মহারাষ্ট্রে অ-বিজেপি প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে শিবসেনাকে সমর্থন করার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী প্রতিভা পাটিল ও প্রণব মুখােপাধ্যায়ের পক্ষে শিবসেনা সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এখন মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করার জন্য শিবসেনা যদি কংগ্রেসের সমর্থন চায়, তাহলে অ-বিজেপি সরকার গঠন করতে দলের শিবসেনাকে সমর্থন করা উচিত।