কলকাতা পুরসভা থেকে খুলে ফেলা হল শান্তনু সেনের নামফলক

আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদের জের তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের পরিবারে। আরজি কর-কাণ্ডে নিজের মতামত প্রকাশ্যে জানিয়ে দলের মুখপাত্রের পদ হারিয়েছিলেন শান্তনু সেন। তিনি তৃণমূলের মুখপাত্রের পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে এতদিন কলকাতা পুরসভায় নিজস্ব চেম্বারও ছিল শান্তনু সেনের। কিন্তু শনিবার সকালে দেখা গেল, সেই চেম্বারের দরজা থেকে তাঁর নামফলক খুলে ফেলা হলো। এখানেই শেষ নয়, পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কাকলি সেনকেও দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হল। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, শুক্রবার তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে কাকলিকে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ঘটনার পরে পরেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন শান্তনু-জায়া কাকলি। উভয়ের মধ্যে ঠিক কি কথোপকথন হয়েছে, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছুই জানাননি তাঁরা। তবে পুরসভা সূত্রে খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই যে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে, তা কাকলিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? আরজি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হওয়ার মাশুলই কি গুনতে হলো শান্তনু ও তাঁর পরিবারকে?

রাজনৈতিক মহল বলছে, আরজি কর-কাণ্ডে নিজের মতামত জানানোর পরই দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হয় শান্তনুকে। প্রসঙ্গত, চিকিৎসক হিসেবে গত কয়েকদিন ধরেই আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন শান্তনু সেন। বুধবার পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও উষ্মাপ্রকাশ করেন তিনি। আরজি কর হাসপাতালে পড়াশোনা হয় না বলেও জোরালো দাবি করেন শান্তনু। গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকায় তিনি যে অসন্তুষ্ট তা বুঝিয়ে দেন। পাশাপাশি শান্তনু-কাকলির একমাত্র কন্যা সৌমিলী সেন আরজি করে ডাক্তারি পড়ছেন। মেয়ের সুরক্ষা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। অন্যদিকে, ১৪ অগস্ট রাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিতে মেয়েকে নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন শান্তনু-জায়া কাকলি। এক কথায়, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা পন্থায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেকারণেই দলের সদর দফতর তৃণমূল ভবনে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার ক্লাব কালীঘাট মিলন সংঘে যে ‘মুখ্যমন্ত্রীর দরবার’ বসে, সেখানেও শান্তনুকে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। আর তারপরই শান্তনু-জায়াকে দলীয় কাউন্সিলরদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানোকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রতিবার নির্বাচনের পর নতুন কাউন্সিলরেরা নির্বাচিত হলে তাঁদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির প্রথা রয়েছে কলকাতা পুরসভায়। যেখানে কলকাতা পুরসভার নানা নির্দেশ, কাজকর্মের তথ্য দেওয়া হয় ধারাবাহিক ভাবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের পুর নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন কাকলি। তাঁর আগে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন কাকলির স্বামী শান্তনু। ২০১৮ সালে কাউন্সিলর থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেন। তাই ২০২১ সালের পুর নির্বাচনে তাঁর বদলে প্রার্থী হন স্ত্রী কাকলি। ভোটে জয়ী হলে কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের এক সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশেই কাকলিকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরানো হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, প্রতিবাদের সুর চড়িয়েছিলেন শান্তনু। তাহলে সেই ‘কোপ’ শান্তনুর পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর উপরও পড়লো কেন? আসলে আরজি কর-কাণ্ডে শান্তনুর বক্তব্যকে প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছিলেন স্ত্রী কাকলি। এমনকি আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের খুনের ঘটনার পর প্রকাশ্যেই রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শান্তনু-জায়াও। সেই মাশুলই গুনতে হলো তাঁদের, এমনই মত রাজনৈতিক মহলের।