খালিস্তানি বিতর্কে শিখদের ৩৬ দিনের প্রতিবাদে শামিল শশী পাঁজা

নিজস্ব প্রতিনিধি— বাংলায় খালিস্তানি বিতর্কের ৩৬ দিন পার৷ নিজ পাগড়ির সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে ইতি টানতে নারাজ শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এবার তাদের প্রতিবাদে সামিল হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা৷ পাশাপাশি প্রতিবাদী শিখদের অনুরোধ করলেন আপাতত তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার জন্য৷ পরবর্তীতে শিখদের আন্দোলনে তাদের পায়ে পা মেলাবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমগ্র তৃণমূল কংগ্রেস, এমনটাও প্রতিশ্রুতি দিলেন শশী পাঁজা৷

কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের বিজেপির সদর দফতরের বাইরে চলছে শিখ সম্প্রদায়ের অবস্থান বিক্ষোভ৷ এক নয়, দুই নয়, এ আন্দোলন দীর্ঘ ৩৬ দিনের৷ কিন্ত্ত কোনো সাড়া নেই বিজেপি নেতৃত্বদের৷ মঙ্গলবার বিজেপির সদর দফতরের বাইরে শিখদের অবস্থান বিক্ষোভে উপস্থিত হন ডাঃ শশী পাঁজা এবং স্থানীয় বিধায়ক৷ ‘খালিস্তানি’ মন্তব্যে যেমন একদিকে বিজেপির নিন্দা করেছেন তেমনি আন্দোলনরত শিখদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন শশী পাঁজা৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এমন মন্তব্য কেবল শিখদের কাছে নয় বরং সমগ্র বাংলার মানুষের কাছে লজ্জাজনক৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও এর তীব্র নিন্দা করে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন৷ এমন মন্তব্যের পরও কোনো বিজেপি নেতৃত্ব শিখদের কাছে ক্ষমা চাননি এটি আরো লজ্জাজনক৷ এমনকি সম্প্রতি রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন, তিনি বিষয়টিতে আলোকপাত করেননি বরং নীরব থেকে গেছেন৷ বিজেপি শিখদের ‘খালিস্তানি’, মুসলিমদের ‘পাকিস্তানি’ এবং বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে, এটিই তাদের ডিএনএ, এটিই তাদের চরিত্র৷ ক্ষমা চাওয়ার সাহস নেই বিজেপির৷ এইভাবেই শিখদের অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়ে কেন্দ্রের দিকে কটাক্ষের তীর ছুঁড়েছেন শশী পাঁজা৷

পাশাপাশি প্রতিবাদী শিখদের ভরসার কাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় শশী পাঁজাকে পাঠিয়েছেন শিখদের কাছে৷ মুখ্যমন্ত্রী তথা সমগ্র তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে শশী পাঁজা নমনীয়তার সুরে শিখদের কাছে আপাতত তাদের এই দীর্ঘদিনের আন্দোলন স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করেন৷ আগামীদিনে শিখদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের সম্মানরক্ষার লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসও সামিল হবে, এই বার্তাই দেন তিনি৷ তবে কেন এই আন্দোলন স্থগিত রাখতে হবে? সেই কারণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শশী৷ চলছে পবিত্র রমজান মাস, হোলি উৎসব তাছাড়াও সামনেই রয়েছে রামনবমী, বাংলার নববর্ষ সহ একাধিক উৎসব৷ এই উৎসবের মরশুমে প্রত্যেকের নিজ পরিবারের সাথে সময় কাটানো অধিক প্রয়োজনীয়৷ সেইখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন শিখরা৷ এটি গোটা বাংলার কাছে যথেষ্ট লজ্জাজনক৷ সবদিক বিচার বিবেচনা করেই আন্দোলন স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছেন শশী পাঁজা সহ সমগ্র তৃণমূল কংগ্রেস৷


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সন্দেশখালি পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন৷ পথে তাঁকে ধামাখালিতে আটকায় পুলিশ৷ পুলিশের সাথে শুরু হয় বাকবিতন্ডা৷ অভিযোগ, সেখানে কর্তব্যরত পাগডি়ধারী আইপিএস অফিসার যশপ্রীতের উদ্দেশে ‘খালিস্তানি ‘মন্তব্য উডে় আসে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে৷ যদিও শুভেন্দুর তরফে জানানো হয়েছে, তিনি একথা বলেননি৷ বরং তিনি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের সম্মান করেন৷ এই ইসু্যকে কেন্দ্র করে চড়েছে রাজনৈতিক সংঘাতের পারদ৷

এরপর জল গড়িয়েছে অনেক দূর৷ নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ‘গুরুদ্বার বড়া শিখ সংগত’ আবেদন জানিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে যেন বিজেপি নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে প্রচারে অংশগ্রহণ না করতে দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকেও চিঠি দিয়েছেন তারা৷ তারপর এই সম্পূর্ণ ঘটনায় নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা এবং তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের শিখদের প্রতি দুর্ব্যবহার৷ যদিও এখনও কোনো বিজেপি নেতৃত্বে মর তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এই ঘটনায়৷