‘রাজ্য সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নির্মাণে স্কুল পড়ুয়াদের ব্যবহার করা হচ্ছে’ : কুনাল

“স্কুলের আগে বা স্কুল ছুটির পরে যদি কেউ প্রতিবাদ এবং মিছিল করেন, তাতে কারও কিছু বলার নেই”, সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তবে কেন এই প্রসঙ্গের উত্থাপন? উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে স্কুল পড়ুয়ারা মিছিল করায় হাওড়ার তিনটি স্কুল যথাক্রমে হাওড়ার বালুহাটি হাইস্কুল, বালুহাটি গার্লস হাইস্কুল এবং ব্যাঁটরা রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়কে শোকজ করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। অভিযোগ, স্কুলের সময়ে মিছিল হয়েছে। স্কুলে পঠনপাঠনের সময় মিছিল করার বিষয়টিকেই অপরাধ হিসেবে দেখেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক। এরপরই নিন্দার ঝড় উঠেছে শিক্ষামহলে। শিক্ষা দফতর কি প্রতিবাদের পায়ে শিকল পরাতে চাইছে? সর্বত্র উঠছে এই প্রশ্ন। যদিও এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি ময়দানে নেমেছেন কুনাল ঘোষ। তৃণমূলের তরফে গোটা বিষয়টিকে ‘কুৎসা এবং অপপ্রচার’ বলেই দাবি করেছেন কুনাল। তিনি এদিন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “স্কুলের আগে বা স্কুল ছুটির পরে যদি কেউ প্রতিবাদ করেন অথবা মিছিল করেন, তাতে কারও কিছু বলার নেই।” এরপরই শোকজ নোটিশ নিয়ে দলের তরফের ব্যাখ্যা শুনিয়েছেন কুনাল। তাঁর ভাষায়, “শিক্ষা দফতর একবারও বলেনি যে, স্কুল পড়ুয়াদের প্রতিবাদে শামিল হওয়া যাবে না। বলা হয়েছে, স্কুলে পঠনপাঠনের সময়ে তা যেন না হয়। কোথাও কোথাও তা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছিল। সেই কারণেই শিক্ষা দফতর এই নোটিশ জারি করেছে।” যদিও এই প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের আক্রমণ শানাতেও ভোলেননি কুনাল। স্কুল পড়ুয়াদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, মন্তব্য তৃণমূল মুখপাত্রের। এক কথায়, শিক্ষা দফতরের ভূমিকা নিয়ে যে শাসক বিরোধী তরজা শুরু হয়েছিল, তাতেই ইতি টানার চেষ্টা করেছেন কুনাল।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রাজ্য সরকার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরির উদ্দেশ্যে স্কুল পড়ুয়াদের ব্যবহার করছে প্রতিবাদের মাধ্যমে, এমনটাই ইঙ্গিত কুনালের। নিজ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় স্কুল পড়ুয়ারা জানেই না ঘটনাটা কী ঘটেছে। এও জানে না, অতীতে কী ঘটত বা দেশের অন্যান্য রাজ্যে কী ঘটছে। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নির্মাণের জন্য কোথাও কোথাও স্কুল পড়ুয়াদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গোটা বিষয়টিতে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এবং এবিপিটিএরও ভূমিকা রয়েছে।” শিক্ষা দফতরের তৎপরতা প্রসঙ্গে কুনালের বক্তব্য, “আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ নিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় স্তরে কিছু রাজনৈতিক শক্তি স্কুল পড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটতে বাধ্য করছে। কোথাও স্কুলে কর্মরত কোনও কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাও রাজনৈতিক পক্ষপাত করে কচিকাঁচাদের পথে নামাচ্ছেন। শিক্ষা দফতর সেটাকেই রুখতে চেয়েছে।” কুনাল এদিন বুঝিয়ে দিলেন, স্কুল পড়ুয়াদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পডুয়ারা যাতে স্কুলের সময়ে কোনও অন্য কর্মসূচিতে অংশ না নেয়, সেই মর্মে শুক্রবারই রাজ্য সরকারের অন্যতম শীর্ষমহল থেকে রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাতে আরজি কর কাণ্ডের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, সেটি একটি ‘সাধারণ নির্দেশিকা’। তাহলে সেই সাধারণ নির্দেশিকার মধ্যেই কি আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ নিহিত ছিল, যা বোধগম্য হয়নি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে? এই নিয়ে বিস্তর জল্পনা থেকেই যাচ্ছে।

তবে ঠিক কি ঘটেছিল শুক্রে? শুক্রবার বিকেলে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি মিছিল হয়েছিল হাওড়ায়। সেই প্রতিবাদে হাওড়া জেলার তিনটি স্কুল অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। সেগুলি হল হাওড়ার বালুহাটি হাইস্কুল, বালুহাটি গার্লস হাইস্কুল এবং ব্যাঁটরা রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়। তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, স্কুলের পঠনপাঠনের সময় কেন স্কুলের শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা মিছিলে অংশ নিয়েছেন, কেন স্কুলে এমন কর্মকাণ্ড হবে, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। শুক্রবারেই পাঠানো হয়েছে ওই চিঠিটি। নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কারণ ব্যাখ্যার নির্দেশও দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে উল্লেখ করা ছিল নোটিশে। এরপরই শোরগোল পড়ে যায় শিক্ষামহলে। তাহলে কি ইঙ্গিতে বাক স্বাধীনতা হরণ করার প্রয়সী হলো শিক্ষা দফতর? এই প্রশ্নই উঠতে থাকে। বিরোধীদের বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের পায়ে শিকল পরাতেই তৎপর হয়েছে শিক্ষা দফতর। যদিও কুনাল দলীয় অবস্থানকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলের আগে বা স্কুল ছুটির পরে মিছিল করা যেতেই পারে। তবে শিক্ষা দফতরের এই নোটিশ নিয়ে যে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবেই দ্রুত তার মোকাবিলা করতে নেমেছে তৃণমূল, এমনটাই বলছে রাজনৈতিক মহল।