বিক্ষিপ্ত হিংসার চিত্র বনগাঁ-ব্যারাকপুরে

ব্যারাকপুরে ‘পার্থ হাওয়া’, হাত ছাড়া হতে চলেছে অর্জুনের?

নিজস্ব প্রতিনিধি— সোমবার লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ভোট হচ্ছে মোট সাতটি আসনে৷ বিগত চারটি দফার নির্বাচন তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ ভাবে হলেও পঞ্চম দফার চিত্রটা খানিক বদলে যায়৷ বারংবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ এবং ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিক্ষিপ্ত অঞ্চল৷ কখনও ব্যারাকপুরে ভোটারদের গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে৷ কখনও আবার দেখা যায়, প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া৷ আবার কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেই শুরু হয় বিক্ষোভ৷ এদিন সকাল-সকাল নৈহাটি বড় মার মন্দিরে পুজো দিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে নিজ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক৷ বাদ যাননি অর্জুন সিংও৷ তবে সকাল গড়াতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে টিটাগড় থেকে আমডাঙ্গা সর্বত্র৷ যদিও অধিকাংশ জায়গায় পৌঁছে গিয়ে জনসাধারণের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন পার্থ৷

ব্যারাকপুরের বড়গাছিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথ নম্বর ১২২, ১২৩ তে বাডি় বাডি় গিয়ে ভোট করানোর অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ আমডাঙার অন্তর্গত এই কেন্দ্রে পার্থ ভৌমিক আসার সাথে সাথে এই অভিযোগ করেন স্থানীয় ভোটাররা৷ তাছাড়াও কেবল আমডাঙ্গাতেই বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর কথা বলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক৷ অন্যদিকে, টিটাগড় থেকে কাঁচরাপাড়া, ভোটের দিন বেরিয়ে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল, ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংকে৷ টিটাগড় পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোনু সাউ এর সাথে বচসায় জড়ান অর্জুন৷ তিনি অভিযোগ করেন, অর্জুন এলাকায় ঢুকে ইচ্ছেকৃত ভাবে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেন৷ এরপরই অর্জুনকে লক্ষ করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ‘গো ব্যাক’ স্লোগান৷ দেখানো হয় কালো পতাকাও৷ এমনকি, মহিলাদের বিক্ষোভের মুখেও পডে়ন অর্জুন৷ কিছুক্ষেত্রে পরিস্থিতির সামাল দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীই৷ তবে আবার দেখা গেছে, ক্ষিপ্ত জনতাকে হটাতে লাঠিপেটাও করতে হয়েছে বাহিনীকে৷ অন্যদিকে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হয় টিটাগড়ে৷ বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন আর তারপরই ভাঙচুর করা হয়েছে তাঁর গাডি়৷ জানা গিয়েছে, শাসকদলের লোকজন বুথ জ্যাম করে ভোট করাচ্ছিলেন৷ এই নিয়ে অভিযোগ পেতেই সংশ্লিষ্ট বুথে যাচ্ছিলেন কৌস্তভ৷ এরপর তিনি পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা৷ বুথে ঢুকতে গেলে তাঁর গাডি় ভাঙচুর করা হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা৷ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল৷ এছাড়াও বিক্ষিপ্ত ভাবে বিজেপি-তৃণমূল বচসায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে এই কেন্দ্রের একাধিক এলাকা৷


অন্যদিকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রও৷ এদিন এই লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন করেন তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস৷ সেই সময় বনগাঁ ৯৫/ ২৬৩ নম্বর বুথে তাঁকে ঘিরে ধরেন দলেরই কর্মী সমর্থকরা৷ বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তাঁরা৷ জানালেন, মহিলাদের সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করেছেন রাজ্য পুলিশেরই এক কর্মী৷ বিষয়টি শুনেই ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল প্রার্থী৷ অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান তিনি৷ উলুবেড়িয়া এবং জাঙ্গিপাড়ার পর এবার মহিলাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠলো কল্যাণীতে৷ এবারও অভিযোগের তীর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের বিরুদ্ধেই৷ শাসকদলের অভিযোগ, কল্যাণীর তৃণমূল কাউন্সিলর নিবেদিতা বসুকে হেনস্থা করেছে সিআরপিএফ৷ অন্যদিকে তৃণমূল-বিজেপি দু পক্ষের ধস্তাধস্তিও চলে বিভিন্ন জায়গায়৷ ফলে কোথাও আহত হন বিজেপি কর্মী, আবার কোথাও তৃণমূল কর্মী৷

এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘বিগত বছর গুলিতে যেভাবে ব্যারাকপুর উত্তপ্ত হয়ে উঠতো সেই তুলনায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে অনেক কম৷ যতটা সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি৷’ নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত বাংলায় ৩২.৭০ শতাংশ ভোট পডে়ছে৷ যা দেশের মধ্যে এখনও সর্বোচ্চ৷ সকাল ১১টা পর্যন্ত কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, বনগাঁয় ৩১.৮১ শতাংশ এবং ব্যারাকপুরে ২৯.৯৯ শতাংশ ভোট পড়ে৷ দুপুর ৩টে পর্যন্ত বনগাঁয় ৬১.৮৩ শতাংশ এবং ব্যারাকপুরে ৫৫.৩৪ শতাংশ ভোট পড়ে৷ সকাল ১১টা পর্যন্ত রাজ্যের সাত লোকসভা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ১০৩৬টি অভিযোগ জমা পডে়ছে নির্বাচন কমিশনের কাছে৷ দলগত ভাবে সব থেকে বেশি অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম, ৭৯টি৷ তৃণমূল অভিযোগ করেছে ৫০টি৷ বিকাল সাডে় ৪টে পর্যন্ত বাংলার সাত লোকসভা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ১৯১৩টি অভিযোগ জমা পডে়ছে৷ যার মধ্যে তৃণমূল অভিযোগ করেছে ৭৪টি এবং বিজেপির তরফে ১৪২টি অভিযোগ জমা পডে়ছে৷ বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির শান্তনু ঠাকুর এবং তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও অর্জুন-গড় ব্যারাকপুরে সাধারণ জনগণের সদর্থক প্রতিক্রিয়া পার্থর দিকেই৷ তাহলে এবার কি অর্জুন-গড় এবার ‘পার্থ-গড়’-এ পরিণত হতে পারে? আশাবাদী শাসকদল৷ বর্তমানে ভোটবাক্সের দিকে তাকিয়ে বঙ্গবাসী৷