মহারাষ্ট্রে ভােরবেলায় বিজেপি-এনসিপি জোট সরকার গঠনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট আজ রায় দেওয়ার কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় রায়দানের সময় নির্ধারিত হয়েছে। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি জানান, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি দেখানাের পরই তাঁকে সরকার গঠনের জন্য ডাকা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আদালতে জানানাে হয় দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সমর্থনে এনসিপি’র ৫৪ জন বিধায়ক অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে সমর্থন জানিয়েছে।
অন্যদিকে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের পক্ষে ১৫৪ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বলে অবিলম্বে তাদের সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানাের দাবি করা হয়েছে। এব্যাপারে অবিলম্বে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণেরও দাবি জানানাে হয় সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের পক্ষে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও কিছুটা সময় দিয়ে মঙ্গলবার রায় ঘােষণার কথা জানায়। ক্যাবিনেট বৈঠক ডাকার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়ােগ করে ভাের ৫.৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান ঘােষণা করেন।
আদালতে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রহতােগি জানান, ‘ফড়নবিশের সমর্থনে ১৭০ বিধায়ক রয়েছেন, এবং এটা কোনও জাল নথি নয়’। একারণেই ফড়নবিশকে সরকার গঠনের জন্য ডাকা হয়েছে। বিজেপি ও দুই নির্দল বিধায়কের পক্ষে আইনজীবী মুকুল রহতােগি জানান, ‘রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। রাজ্যপাল কোনও কাজের জন্য উত্তরদায়ী নন… এক্ষমতা সংবিধানের ৩৬১ ধারায় দেওয়া আছে’।
অন্যদিকে কপিল সিব্বল বিজেপির সরকার গঠনকে ‘গণতন্ত্রের জালিয়াতি’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি অবিলম্বে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আবেদন জানান। তিনি প্রশ্ন তােলেন, দেশে কি এমন জরুরি প্রয়ােজন ঘটল যাতে রাত ৭ টা থেকে ভাের ৫.৪৭ টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের ক্ষমতাবলে। রাজ্যপাল কি আর একটা দিন অপেক্ষা করতে পারতেন না? একইভাবে অভিষেক মনু সিংভি অবিলম্বে অন্তর্বর্তী অধ্যক্ষ নিয়ােগ করে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আর্জি জানান।
এনসিপি দলের পক্ষে আদালতে জানানাে হয়, সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সরকার গঠনের সমর্থনের বিধায়কদের সম্মতিপত্রটির সামনে বিজেপিকে সমর্থনের পক্ষে একিট চিঠি জুড়ে দিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে বিজেপির তরফেই। কংগ্রেস দলের পক্ষে অভিষেক মনু সিংভি জানান, রাজ্যপাল কার নির্দেশে ভাের রাতে সরকার গঠন করল এবং কেনই বা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দিষ্ট তারিখ ঘােষণা করলেন না।
‘রাজ্যপাল যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করছেন তা তাঁর কাজেই প্রমাণ করেছেন। রাজ্যপাল পদের মর্যাদা তিনি ভূলুণ্ঠিত করেছেন’ বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী মনু সিংভি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সাপেক্ষে প্রমাণ পেশ করে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের দাবি জানাল শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি। লক্ষণীয়, তাদের সঙ্গে সপাও হাত মিলিয়েছে। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের দাবি জানাতে রাজভবনে গিয়ে তারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ১৬২ জন বিধায়কের স্বাক্ষর পত্র জমা দেন। শিবসেনা’র তরফে ৫৬ জন, কংগ্রেসের ৪৪ জন, এনসিপি’র ৫৪ জনের স্বাক্ষর জমা করেছে। সমাজবাদী পার্টিও তাদের দু’জন বিধায়কের স্বাক্ষর জমা করেছে।
শিবসেনার তরফে জানানাে হয়েছে, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ২৮৮ আসনের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন রয়েছে (শিবসেনার ৫৬ জন, কংগ্রেসের ৪৪ জন, এনসিপি’র ৫৪ জন বিধায়ক রয়েছে)। তাদের করা আবেদনের শুনানি আজ করা হলেও আগমিকাল সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত জানাবে। শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি আবেদন করে জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে অসাংবিধানিক পথে সরকার গঠন করা হয়েছে।
বিজেপি’র তরফে জানানাে হয়েছে, তাদের ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে, তার মধ্যে ৫৪ জন এনসিপি বিধায়ক। শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়েছে তাদের সমর্থনে ১৫৪ জনের সমর্থন রয়েছে। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার বলেন দলের সঙ্গে ৫৩জন বিধায়ক রয়েছেন। অজিত পাওয়ার চালাকি করে সেনা নেতৃত্বাধীন জোটে এনসিপি বিধায়কদের স্বাক্ষরিত পত্র জমা করেছে। তারা আশা করছেন, সুপ্রিম কোর্ট বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন।