ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের, ভাইরাল ভিডিও

কলকাতা, মে: সন্দেশখালির বিজেপির মণ্ডল সভাপতির ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তোলপাড় রাজ্যের রাজনৈতিক মহল গত ২১ এপ্রিল একটি স্টিং অপেরেশনের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সন্দেশখালি বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল একজন সাক্ষাৎকারীর সঙ্গে কথা বলছেন সেই সাক্ষাতে গঙ্গাধর বাবু দাবি করেছেন, ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ধর্ষণের ঘটনায় ঘটেনি তিনি দাবি করেন, ঘটনাটিকে ধর্ষণে রূপান্তর করা হয়েছে সবই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে করা হয়েছে শুভেন্দু বাবু এলাকার নেতাদের বোঝান, তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা না গেলে সন্দেশখালি নিয়ে আন্দোলন করা যাবে না এজন্য শুভেন্দু অধিকারী সন্দেশখালির বিজেপি নেতাদের মোবাইল টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন বলে অভিযোগ একইভাবে সন্দেশখালির বাসিন্দা জবারানি সিংহেরও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে প্রথমে এই ভিডিওটি তৃণমূল তার এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করে এরপর সেটি ভাইরাল হয় আজ, শনিবার রাজ্যের বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে খবর করে যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থাগুলি

এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, সন্দেশখালির স্টিং দেখে বোঝা যায় বিজেপির মধ্যে পচন কতটা গভীর। বাংলার সংস্কৃতিকে হেয় করতে সব স্তরে অপমান করার ষড়যন্ত্র। ইতিহাসে দিল্লির কোনও শাসক দল রাজ্য এবং জনগণকে এভাবে অপমান করেনি। দিল্লির ষড়যন্ত্রমূলক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলা রুখে দাঁড়াতে হবে। মানুষ কী জবাব দেবে তা ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে। এদিন সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও লেখেন,’সন্দেশখালি স্টিং বিজেপির পচন কতটা গভীর তা সামনে এনেছে। বাংলার প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা সংস্কৃতির প্রতি তাদের ঘৃণার কারণে বাংলাবিরোধীরা যে কোনও কারণে বাংলাকে অপমান করার ছক কষে। ভারতের ইতিহাসে এর আগে কখনও দিল্লিতে ক্ষমতাসীন দল পুরো রাজ্য তার জনগণকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেনি। ইতিহাস সাক্ষী থাকবে যে, দিল্লির ষড়যন্ত্রকারী শাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে বাংলা জেগে উঠেছে।

একই অভিযোগ করেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বিষয়টির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘সন্দেশখালি স্টিং ভিডিও দেখে আমি হতবাক হয়েছি। প্রত্যেক নাগরিককে বাংলা বিরোধীদের বর্জনের সাক্ষী হতে হবে। ভারতীয় জনতা পার্টির তুচ্ছ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে বদনাম করার অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। এই ঘৃণ্য কাজটি ইতিহাসে ক্ষমতার সবচেয়ে বড় অপব্যবহারের প্রতীক।


এদিকে এই ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন সন্দেশখালি এর মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল। আজ তিনি একটি পাল্টা ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, স্টিং অপারেশনের কণ্ঠস্বর বিশেষ প্রযুক্তিতে বদলানো হয়েছে। এনিয়ে তিনি সিবিআইয়ের কাছে যাবেন বলে দাবি করেছেন। বসিরহাট লোকসভার বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র জানিয়েছেন, পুরো ঘটনা তৃণমূলের চক্রান্ত। এই ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘তৃণমূল প্রলোভন দেখিয়ে এমনটা করিয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে।

বিরোধী দলনেতা টাকা মোবাইল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আমি জেনে বলব। তৃণমূলের গলা, নাকি কার গলাআপনাদের ভাবতে হবে না। মিমিক্রি করা হয়েছে কি নাআমি জেনে বলব

প্রসঙ্গত গত জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযানের সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীবাদের জনরোষের শিকার হয় ইডি আধিকারিক তাঁদের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর বেশ কিছুদিন জলঘোলা হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তর সর্দাররা বিভিন্ন অত্যাচারের অভিযোগে আক্রান্ত হন স্থানীয় জনতার হাতে। তাঁদের বাড়ি খামারে আক্রমণ করেন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকার মহিলাদের ওপর অত্যাচার জমি, ভেড়ি দখলের অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁদেরকে একে একে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবশেষে গ্রেপ্তার হন এদের মূল মাথা শেখ শাহজাহান তাঁর অন্যান্য ঘনিষ্ঠ শাগরেদরা। বিষয়টি এখন সিবিআইএর তদন্তের অধীনে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এতদিন শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার অজিত মাইতিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্য?