গ্যারান্টির নমুনা

‘মোদি কি গ্যারান্টি’ যে কতটা মিথ্যাচার, তা দেশবাসীকে আজ আর আলাদা করে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না৷ এই মিথ্যাচার এখন বিজেপির অন্দরমহলেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ আর সেই কারণেই পাঁচ দফা ভোট শেষ হওয়ার পর বিজেপির প্রচারে আর তেমনভাবে মোদি কি গ্যারান্টির কথা শোনা যাচ্ছে না৷
মোদির গ্যারান্টির নমুনাগুলি আর একবার আলোচনা করে নেওয়া যাক৷

প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতি বছর দেশের যুবকদের জন্য দু’কোটি চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত তাঁর আমলেই দেশ ৪৫ বছরে বেকারত্বের শীর্ষে পৌঁছেছে৷ ২০১৪ সাল থেকে বেকারের সংখ্যা এক কোটি থেকে চার কোটিতে পৌঁছেছে এবং তাঁর ব্যর্থতাগুলি ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী ‘বেতনহীন গার্হস্থ্য কাজ এবং পকোড়া বিক্রয়’কে সরকারি চাকরি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷

২০১৬-র ২৮ ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্র মোদি ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত কৃষকদের প্রকৃত আয় বছরে মাত্র ২ শতাংশ বেড়েছে৷ ২০২২ সালের মধ্যে আয় দ্বিগুণ করতে প্রয়োজন বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ করা৷ এর ধারেকাছেও নেই প্রকৃত সংখ্যা৷ পরিবর্তে অপর্যাপ্ত নূ্যনতম সহায়ক মূল্য এবং ক্রমবর্ধমান চাষের খরচের কারণে ব্যাপক কৃষি সংকটে কৃষকদের ঋণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে৷ এই পরিস্থিতিতে ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছে৷


মোদি কালো টাকা উদ্ধার করে প্রতি ভারতীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ তবে এই গ্যারান্টিকে মোদির দক্ষিণ হস্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫-তে ‘জুমলা’ বলে স্বীকার করেছিলেন৷ নোট বাতিলের ব্যর্থতার মধ্যেই নীরব মোদি এবং মেহুল চোকসির মতো প্রতারকরা হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারি করে ভারত থেকে পালিয়ে গিয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সংরক্ষণকে কেউ স্পর্শ করতে পারবেন না৷ অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসসি, এসটি এবং ওবিসি প্রার্থীদের জন্য পাঠদানের পদগুলি ‘ডি-রিজার্ভ’ করার জন্য খসড়া নির্দেশিকা জারি করেছে৷ এমনকি বিজেপি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারিকরণ করে এবং স্থায়ী চাকরিগুলিকে চুক্তিবদ্ধ করে পিছনের দরজা দিয়ে সংরক্ষণকে সরিয়ে দিচ্ছে৷ অবশিষ্ট পিএসই-গুলিতে ২.৭ লক্ষ চাকরি এবং ৫ লক্ষ সংরক্ষিত পদ এখনও খালি পড়ে আছে৷

মোদি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গঙ্গা নদীকে পরিষ্কার করা হবে৷ এই খাতে কয়েকশো কোটি টাকা ব্যয় করার পরও গঙ্গা আরও দূষিত হয়েছে৷

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ পুরোপুরি ফাঁকা আওয়াজ তথা ভাঁওতায় পরিণত হয়েছে৷ মোদি শাসনের বছরগুলিতে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে৷
মোদির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রচারাভিযান সম্পর্কে বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের বাজেটের ৭৮.৯ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছিল শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনে৷

মোদি সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে ২০২০ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে ১০ কোটি মানুষ চাকরি পাবে এবং উৎপাদন জিডিপি’র ২৫ শতাংশ উন্নীত হবে৷ কিন্ত্ত কার্যত তেমনটা হয়নি৷ করোনাকালে শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন৷ নোটবন্দি, জিএসটি এবং অপরিকল্পিত কোভিড-১৯ লকডাউনের বিশৃঙ্খলায় ২.৪ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন৷ ডিজিপি’তে উৎপাদনের অংশ মনমোহন সিং জমানার ১৬.৫ শতাংশ থেকে কমে মোদির আমলে ১৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে৷

জুন ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি ১০০টি শহরকে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত এর পরের বছরগুলিতে মোদি সরকার একটিও স্মার্ট সিটি অর্থপূর্ণভাবে রূপায়িত করতে পারেনি৷ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪০০টি প্রকল্পের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ আছে৷
এরপরও গলা ফুলিয়ে মোদিজি চিৎকার করে ‘বিকশিত ভারত’-এর কথা বলেন৷