দিল্লি, ৮ মে: ফের বিতর্কের কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতা শাম পিত্রোদা। ভারতীয়দের চেহারা নিয়ে দ্য স্টেটসম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর তির্যক মন্তব্যে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। দ্য স্টেটসম্যান-এর প্রতিনিধি সন্তু দাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের সময় এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন শাম পিত্রোদা। ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তাঁর সাক্ষাৎকারে কথা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ব ভারতীয়রা চীনাদের মতো দেখতে। আর দক্ষিণ ভারতীয়রা আফ্রিকানদের মতো দেখতে। এই মন্তব্যের পর দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠতেই সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতারা শাম পিত্রোদার এই মন্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। ভারতীয়দের নিয়ে ঘৃণা সুলভ আচরণ করছে বলে দাবি করেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। বিজেপি নেতারা আবার এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি রাহুল গান্ধীকেই আক্রমণ শানিয়েছেন। ভারতীয়দের সম্পর্কে এটাই কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি বলে দাবি করেছেন।
ভারতের গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে গিয়ে পিত্রোদা, দ্য স্টেটসম্যানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা ৭৫ বছর ধরে একটি খুব সুখী পরিবেশে বেঁচে আছি। যেখানে লোকেরা এখানে এবং সেখানে কয়েকটি লড়াইকে বাদ দিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারে। আমরা ভারতের মতো নানা বৈচিত্র্যময় একটি দেশকেও একসঙ্গে ধরে রাখতে পেরেছি। যে দেশে পূর্বাঞ্চলের মানুষদের দেখতে চীনাদের মতো, পশ্চিম অঞ্চলের মানুষগুলিকে দেখতে আরবের মতো, উত্তর অংশের লোকদের দেখতে সাদা মানুষের মতো এবং ভারতের দক্ষিণের মানুষেরা দেখতে আফ্রিকানদের মতো।” শাম পিত্রোদার এই মন্তব্যের পর বিতর্কের ঝড় ওঠে। আর চলতি লোকসভা ভোটের মুখে সেই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকে ভারতীয়দের সম্পর্কে কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘৃণার সঙ্গে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এপ্রসঙ্গে বিজেপি পিত্রোদার মন্তব্যকে “বর্ণবাদী” বলে অভিহিত করেছে। বিজেপি বলেছে যে, এগুলি রাহুল গান্ধীর কথা। এটাই হল কংগ্রেস দলের “মহব্বত কি দুকান”-এর “নফরত কা সামান”।
বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন,”এটাই ভারতীয়দের সম্পর্কে রাহুল গান্ধীর কথা এবং চিন্তাভাবনা। কারণ, আজকাল রাহুল গান্ধীও বিভাজনের রাজনীতি করছেন। এর আগে তাঁরা বর্ণ ও ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন করেছেন। এখন তাঁরা ভারতীয়দের মধ্যে বিভাজন করছেন।”
এদিন বিজেপি মুখপাত্র প্রশ্ন করেন, “ভারতীয়দের চীনাদের মতো দেখতে মন্তব্য করাটা কি বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য নয়? এটা কি অপমানজনক নয়?” তিনি আরও বলেন,”ভারতীয়রা দেখতে আফ্রিকানদের মতো। এই মন্তব্য করাটা কি তাঁদেরকে অপমান করা নয়? ”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই মন্তব্যের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করে যে, কংগ্রেসের “মহব্বত কি দুকান”-এ আসলে “নফরত কা সামান” আছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। এবং পিত্রোদাকে দল থেকে বহিষ্কারের আওয়াজ তুলেছেন। পুনাওয়ালা বলেন,” যতক্ষণ না কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা না দিচ্ছে এবং পিত্রোদাকে দল থেকে বহিষ্কার করছে, ততক্ষণ এটাই কংগ্রেসের উক্তি বলে ধরে নেওয়া হবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ শ্যাম পিত্রোদার মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন। আজ, বুধবার তেলঙ্গানার ওয়ারঙ্গলে বিজেপির ভোটপ্রচারে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মোদী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের শাহজাদার পরামর্শদাতা গাত্রবর্ণ তুলে ভারতবাসীকে আক্রমণ করেছেন। আমি ক্রুদ্ধ। আমাকে আপনারা অনেক কটু কথা বলেছেন। আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু আমার দেশের মানুষকে আক্রমণ করলে সহ্য করব না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের গায়ের রং যা-ই হোক না কেন, আমরা সকলেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজো করি।’’
এবিষয়ে কর্ণাটকের বিজেপি নেতা এবং বর্তমান সাংসদ তেজস্বী সূর্য বলেন যে, ভারতীয়দের সম্পর্কে উইনস্টন চার্চিল যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সঙ্গে পিত্রোদার মন্তব্যের কোনও তফাৎ নেই।তিনি বলেন,”এটা কোনও আশ্চর্য্যের বিষয় নয় যে, আর জি তাঁর (পিত্রোদা) পরামর্শেই চলছেন।”
এদিকে শাম পিত্রোদার এই মন্তব্য প্রসঙ্গে পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান রাজ্য অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেস নেতার তীব্র সমালোচনা করেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি (শাম পিত্রোদা) উত্তর পূর্ব ভারতীয়দের ঘৃণা করেন, অথচ তিনি এখনও ভারতীয়দের মতোই দেখতে। শর্মা তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেন,”শ্যাম ভাই, আমি একজন উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা এবং আমি একজন ভারতীয়দের মতোই দেখতে। আমাদের বৈচিত্রময় দেশ। আমরা দেখতে বিভিন্নরকম। কিন্তু আমরা সবাই এক। আমাদের দেশ সম্পর্কে এই ছোট্ট বিষয়টা অনুধাবন করুন।”
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন যে, রাহুল গান্ধী তাঁর গৃহ শিক্ষকের পরামর্শ পেয়েই দেশে বিভাজনের কথা বলেন।
তবে কংগ্রেস মুখপাত্র তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ আমেরিকা নিবাসী শাম পিত্রোদার মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভারতের জাতিগত বৈচিত্র্যের কথা বোঝাতে গিয়ে শাম পিত্রোদা যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কংগ্রেস তাঁর ওই মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।’’