‘প্রধানমন্ত্রীর নারীশক্তি কোথায়?’
নিজস্ব প্রতিনিধি– প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষায়, ‘‘নারী সম্মান সবার আগে৷’’ এবার সেই নারীকেই সম্মান দিতে ব্যর্থ হলেন বিজেপি নেতৃত্ব৷ অভিযোগের তীর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের দিকে৷ পৈতৃক ভিটে থেকে শান্তনু অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করেছিলেন নিজের জ্যেঠতুতো বোনকেই! সে ঘটনার এক মাস পার হয়ে গেলেও, এখনও সেই ঘরে বোনকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না শান্তনু৷ পৈতৃক ভিটে থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের অভিযোগ তুলে ঠাকুরবাডি়তেই এবার ‘আমরণ অনশন’ এ বসলেন শান্তনুর বোন তথা ঠাকুরবাডি়র কন্যা৷ মতুয়া ধর্মমেলা চলাকালীন বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরের তালা ভেঙে ঢুকেছিলেন বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুর৷ পরে সেই ঘরে তালা দিয়ে জানিয়েছিলেন, বড়মার ঘর কেবল ভক্তদের৷ এবার থেকে ভক্তরাই পুজো করবেন৷ সেই ঘর ফিরে পাওয়ার দাবিতেই মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ঠাকুরবাডি়তে বীণাপানি দেবীর ঘরের সামনেই ‘আমরণ অনশন’ এ বসলেন মতুয়া সংঘের সংঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুর৷ ঠাকুরবাড়ির কন্যার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মমতাবালা এবং একাধিক মতুয়া ভক্ত৷ বুধবার অর্থাৎ এই অনশণের দ্বিতীয় দিনেও মধুপর্ণা নিজ দাবিতে অনড় থাকেন৷
বীণাপানি দেবীর পাশের ঘরে থাকতেন মমতাবালা ঠাকুর এবং তাঁর কন্যা মধুপর্ণা৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সম্পর্কে মধুপর্ণা শান্তনু ঠাকুরের জ্যেঠতুতো বোন৷ এই ঘটনায় মমতাবালা অভিযোগ করেছিলেন, শান্তনু ঠাকুর মমতাবালার নিজ ঘর থেকে তাঁকেই বিতাডি়ত করেছেন৷ গোডাউন ঘর এবং আশপাশের কিছু ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকছেন তিনি৷ বীণাপানি দেবীর ঘরের পাশে একটি খাটিয়া পেতে, সেখানে বসে মধুপর্ণা এবং তাঁর মা মমতাবালা অনশন চালাচ্ছেন৷ পিছনে ব্যানারে লেখা ‘আমরণ অনশন৷ আমাদের পৈতৃক ভিটেবাডি় থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার কি অপরাধ? তার জন্যই কি আমাদের ঘরছাড়া হয়ে থাকতে হবে? সমগ্র ভারতবাসী কাছে এর বিচার চাই৷’ মধুপর্ণা এদিন বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর নিজের জোর খাটিয়ে এক মাস আগে আমাদের বাডি় থেকে বার করে দিয়েছেন৷ দিদির ছেলে ছোট৷ সেই বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারছি না৷ ঠাকুমার (বীণাপাণি দেবী) ঘরে ঢুকতে পারছি না৷ ঘরদোর নোংরা হয়ে রয়েছে৷ পরিষ্কার করতে পারছি না৷ আমরা এর বিচার চাই৷’’ শান্তনুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে মধুপর্ণা আরও বলেন, ‘‘আমরা মেয়ে বলে কি নিজের বাবার সম্পত্তিতে যেতে পারব না? মেয়ে বলে কি অধিকার থেকে বঞ্চিত হব? শান্তনু ঠাকুর আমাদের উৎখাত করেছেন৷ আমরা, সমগ্র মতুয়া সমাজ ভারতবাসীর কাছে এর বিচার চাই৷’’ অনশনে মঞ্চ থেকে মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সন্তান মধুপর্ণা ঠাকুর আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছে৷ কারণ, আমরা কোনও বিচার পাচ্ছি না৷ কোর্টে গিয়েছি৷ সেখানেও কোনও বিচার পাচ্ছি না৷ বিজেপির হার্মাদ ও বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর বাডি় থেকে বাইরে বার করে দিয়েছেন কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী এবং সন্তানকে৷ আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি আমরা৷’’ প্রধানমন্ত্রীর নারীশক্তি নিয়েও সরব মমতাবালা৷ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে কী পাপ করেছে সে৷ মেয়ে হওয়ায় তাঁকে তাঁর পিতৃভিটে থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে বিজেপি৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমরা বিচার চাইছি৷ উনি নারীশক্তির কথা বলেন৷ কিন্ত্ত আজ একজন নারীকে তাঁর দলের এমপি পথে বসিয়ে দিয়েছেন৷ আমরা ভারতের মানুষের কাছে, পশ্চিমবাংলার মানুষের কাছে বিচার চাইছি৷’’ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনায় এক্স হ্যান্ডেলে শান্তনু তথা বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে লিখেছে, ‘‘মোদীর মডেল, নারীর সম্মান নয় নারীর অপমান৷ বড়ো মায়ের ঘর অপরিষ্কার এবং অন্ধকারে নিমজ্জিত৷ এটিই প্রমাণ করে বিজেপির এজেন্ডা আসলে মতুয়া বিরোধী৷’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মতুয়া মহা ধর্মমেলা চলাকালীন প্রয়াত বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘর দখল ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছিল ঠাকুরবাডি়৷ তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, একটি হাতুডি় দিয়ে কোলাপসিবল গেট ভাঙার চেষ্টা করছিলেন শান্তনু ঠাকুর৷ সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয়বাহিনীও৷ তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, মমতাবালা ঠাকুরের বাডি়তে চড়াও হওয়া সকলের হাতেই ছিল ধারালো অস্ত্র৷ অভিযোগ উঠেছিল, বড়মা বীণাপানি দেবীর ঘর দখল করতেই হামলা করেছিলেন শান্তনু৷ সাংবাদিক বৈঠক করে পুরনো ইতিহাস তুলে ধরে শান্তনুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতাবালা ঠাকুর৷ তিনি দাবি করেছিলেন, বিয়ের পর থেকেই তিনি বড়মার বাডি়র একটি ঘরে থাকতেন৷ আরেকটি ঘরে বড়মা থাকতেন৷ তাহলে তাঁর নিজ ঘর থেকে তাঁকে কেন উচ্ছেদ করা হবে? অন্যদিকে শান্তনু এই জল্পনায় গুরুত্ব না দিয়েই বলেছিলেন, এটি তাঁর ঠাকুমার ঘর তাই তিনি ঢুকতেই পারেন৷ ঘরটি ‘হেরিটেজ’ এর তকমা পাবে৷ সেই ঘটনার এক মাস পাড়, এখনও নিজ ঘরে ঢুকতে পারেননি মমতাবালা এবং তাঁর মেয়ে মধুপর্ণা৷ এবার এই সম্পূর্ণ ঘটনার বিচার চেয়েই আমরণ অনশন শুরু করলেন তাঁরা৷