মস্কো, ৯ মে: ২০২৪ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিই আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য। মার্কিন ফেডারেল কমিশনের প্রদিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নয়াদিল্লির সমালোচনার একদিন পরেই এই দাবি করেছে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক।
রাশিয়া সরকারের নিজস্ব নিউজ চ্যানেল ‘রাশিয়া টুডে’ দাবি করেছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ভারতের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিহাস না বুঝেই ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে “অনর্থক অভিযোগ” করেছে ওয়াশিংটন। মারিয়া বলেন,’ভারতের সাধারণ নির্বাচনের সময় জটিলতা বাড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়, ভারতের শাসকদল বিজেপি বৈষম্যমূলক জাতীয়তাবাদী নীতিগুলির প্রয়োগকারী। ইউএস কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) এই পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়ে ভারত পাল্টা অভিযোগ করে, এই দেশ ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ, বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক নীতি সম্পর্কে কিছুই বোঝে না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন,”ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত একটি পক্ষপাতিত্বমূলক সংস্থা। তারা ছদ্মবেশে এই পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন,”এই সংস্থার কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি না যে, এরা ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ, বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক নীতি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করে। বরং তারা চেষ্টা করছে বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে। যা কোনওদিনই সফল হবে না।”
উল্লেখ্য, ইউএসসিআইআরএফ, গতকাল প্রকাশিত তার প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে যে, গত বছর ভারত সরকার মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, দলিত, ইহুদি এবং আদিবাসী (আদিবাসী)-কে বৈষম্যমূলক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২৩ সালে, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বে গঠিত সরকার বৈষম্যমূলক জাতীয়তাবাদী নীতিগুলিকে শক্তিশালী করে ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছে। এবং মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, দলিত, ইহুদি এবং আদিবাসী (আদিবাসীদের) সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে এমন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA), ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (FCRA), সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA), এবং ধর্মান্তর ও গোহত্যা বিরোধী আইনের ক্রমাগত প্রয়োগের ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে আটক, পর্যবেক্ষণ, এবং নিশানা করা হয়েছে।”
বিষয়টি অস্বীকার করে ভারত। ভোটের সময় পাল্টা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এরপরই আমেরিকাকে তুলোধোনা করল রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক। আমেরিকাকে তুলোধনা করে একাধিক ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়াল রাশিয়া। খালিস্তানি জঙ্গি গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে খুনের চক্রান্তের সঙ্গে ভারত কোনওভাবেই যুক্ত নয় বলে দাবি করে রাশিয়া। কারণ হিসাবে রাশিয়া দাবি করে, সেই অভিযোগের সপক্ষে আমেরিকা কোনও ভারতীয় আধিকারিকের যুক্ত থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। গুরপতওয়ান্তকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় নয়াদিল্লিকে অহেতুক টেনে আনা হচ্ছে বলে দাবি করে মস্কো। একই সঙ্গে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, ভারতে লোকসভা ভোট চলছে। আমেরিকার লক্ষ্য, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভারসাম্য নষ্ট করে নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি করা। তিনি আরও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট যে, তারা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।