• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

আরজি কর কাণ্ডে ‘ভুল’ শোধরাতে চান! অভিষেককে ‘সক্রিয়ভাবে সামনে’ থাকার আর্জি কুনালের

অভিষেক যথেষ্ট ট্যুইট করেছেন এবং পাশে থেকেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলি নিয়ে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনো, এতে অভিষেককে আরও বেশি করে চাইছেন কর্মীরা।

বর্তমানে আরজি কর-কাণ্ডে তোলপাড় রাজ্য, ফলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও খানিকটা চাপে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের একটি এক্স পোস্ট রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। আরজিকর-এর ঘটনায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে ‘সক্রিয়ভাবে সামনে’ চেয়েছেন কুণাল। পাশাপাশি শনিবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডলে কুনালের করা ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।” কিসের চক্রান্তের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন কুনাল? তাঁর পোস্টটি পড়ে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আরজিকর পর্বে কিছু ‘ভুল’ হয়েছে তৃণমূলের।

তবে তা প্রশাসনিক স্তরে না কি সাংগঠনিক স্তরে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন উঠে আসছে, কেনই বা অভিষেককে ‘সক্রিয় ভাবে সামনে’ থাকার আর্জি জানালেন কুনাল? প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অভিষেক নিজেই আরজি কর কান্ড নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কখনও তিনি দোষীদের এনকাউন্টার করার নিদান দিয়েছেন, আবার কখনও কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির আশা রেখেছেন। এমনকি বুধে ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানের সময়ও যখন আরজি করে কার্যত তান্ডব চলেছিল, সেই সময়ও তৎপর ছিলেন অভিষেক। তিনি নিজেই বুধের রাতে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সাথে কথা বলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার আর্জি জানিয়েছিলেন। সুতরাং, আরজি কর কাণ্ডে শুরু থেকেই তৎপর রয়েছেন অভিষেক। এক্ষেত্রে কুনাল তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টের মাধ্যমে ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন তা স্পষ্ট না হওয়ায় জল্পনার দানা বেঁধেছে রাজনৈতিক মহলে।

এবার প্রশ্ন হল, ঠিক কি লিখেছেন তিনি? কুণাল তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “আরজি কর: আমরাও প্রতিবাদী। দোষী/দোষীদের ফাঁসি চাই। তৃণমূল ও বাংলার বিরুদ্ধে শকুনের রাজনীতি করছে বাম-রাম। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব রুখতে লড়াইতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সক্রিয় ভাবে সামনে চাই। আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।” কুণালের ওই পোস্ট সমাজমাধ্যমে রিপোস্ট করা শুরু করেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরাই। নবীন-প্রবীণ বিতর্কের সময়ে অভিষেকের যে আত্মীয়া তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে প্রবীণদের বিঁধেছিলেন, সেই তিনিও কুণালের পোস্ট রিপোস্ট করেছেন। বিভিন্ন জেলার ছাত্র এবং যুব নেতারাও রিপোস্ট করছেন কুণালের পোস্ট। যা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। অভিষেকও কি এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নামবেন? এই জল্পনার মধ্যেই কুনালের পোস্ট ইঙ্গিতপূর্ণ।

কুণাল এ প্রসঙ্গে বলেন, “আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদ, নিন্দা আমাদেরও। বাম এবং রাম, যাদের হাত এসব ঘটনায় রাঙা, তাঁদের নাটক এবং চক্রান্ত করতে দেব না। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের আন্দোলন চলছে। আমরা মানুষকে বাস্তব বোঝাচ্ছি। আমরা কি করেছি, সিপিএম কি করেছিল, আর অন্য রাজ্যে কী ঘটছে, বোঝাচ্ছি আমরা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেমন আমাদের নেত্রী, তেমনই অভিষেক আমাদের সেনাপতি। আমার মতো সাধারণ কর্মী, সৈনিকরা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে লড়ছি।” অভিষেক প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য, “একটা কুৎসিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শকুনের রাজনীতি করা হচ্ছে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশাপাশি আমরা সেনাপতি অভিষেককেও সক্রিয় ভাবে এই লড়াইয়ে সামনে চাই। অভিষেক যথেষ্ট ট্যুইট করেছেন এবং পাশে থেকেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলি নিয়ে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনো, এতে অভিষেককে আরও বেশি করে চাইছেন কর্মীরা।”

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর সংবাদমাধ্যমে যোগাযোগ রাখার কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। ওই কাজের দেখভাল করছে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর দফতর। বিষয়টিকে আরজি কর পর্বে ‘অভিষেকের অসন্তোষ’ হিসাবেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু অভিষেক কর্তৃক দোষীদের এনকাউন্টার করার নিদান দেওয়া, পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলা এবং শুক্রের সকালে কলকাতা পুলিশের আরজি করে হামলার ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করার পোস্ট অভিষেক কর্তৃক ‘রিপোস্ট’ করা এসবই অভিষেক তৎপরতার প্রমাণ। কুণাল যে পোস্ট করেছেন শনিবার, তাতে ভুল শুধরে নেওয়ার কথাও রয়েছে। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, পরোক্ষ ভাবে কুণাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কিছু পদক্ষেপে ভুল রয়েছে।

তবে তা প্রশাসনিক স্তরে না কি সাংগঠনিক স্তরে, তা স্পষ্ট নয়। তবে তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর থেকে সরানোর চার ঘণ্টার মধ্যে যদি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া হত, তা হলে হয়তো এত জলঘোলা হত না। যদিও, এই ঘটনায় অভিষেকের তৎপরতার পরও কুনালের অভিষেকের প্রতি ‘সক্রিয় ভাবে সামনে’ থাকার বিশেষ আর্জির তাৎপর্য কি, তা ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক মহলকে।