কর্নাটকে জোট সরকারের ভবিষ্যৎ কোন পথে তা চূড়ান্ত করবেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেশ কুমার । অধ্যক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সন্ধ্যায় বিধানসৌধে গিয়ে অধ্যক্ষ রমেশ কুমারের হাতে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন জোট সরকারের ১০ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়করা। কড়া পাহারার মধ্যে বিধায়কদের অধ্যক্ষ পর্যন্ত পৌঁছান হয়। অধ্যক্ষ ইস্তফাপত্র গ্রহণ করলে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে কর্নাটকের জেডি (এস) কংগ্রেস সরকার।
টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অধ্যক্ষ রমেশ কুমারের হাতে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাওয়ার পর মুম্বই থেকে ১০ জন বিধায়ক বিকেলে বেঙ্গালুরুতে ফিরে আসেন।
আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কর্নাটক বিধানসভার অধ্যক্ষের সামনে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ইস্তফাপত্র গ্রহণযােগ্য হবে কিনা তা ঠিক করার পুরাে ভার দেওয়া হয়েছে অধ্যক্ষ রমেশ কুমারের ওপর।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে কিছুটা সময় চেয়েছেন অধ্যক্ষ রমেশ কুমার। কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই অধ্যক্ষ রমেশ কুমার ইচ্ছুক বিধায়কদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ তােলেন ১০ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক।
অধ্যক্ষ জোট সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে বলে প্রতিবাদ জানিয়ে দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্টে। ওই আবেদনের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিদ্রোহী বিধায়কদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন।
জোট সরকারের ১০ জন বিধায়ককে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষ রমেশ কুমারকে। যে ১০ জন বিধায়ক মুম্বাইতে গিয়েছিলেন, শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বাকি ৬ বিধায়ক বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।
কংগ্রেস বিধায়ক রমেশ জারকিহােলি এবং মহেশ কুমাথহালিকে যাতে রখাস্ত করা হয় অধ্যক্ষের কাছে আজ সেই আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা সিদ্দারামাইয়া। কর্নাটকের পরিস্থিতি নিয়ে আজ লােকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
কর্নাটকে জোট সরকারের পতনের আশঙ্কার মধ্যেও পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। তাঁর জোট সরকারের মন্ত্রী-বিধায়করা দলে দলে ইস্তফা দিচ্ছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী ইস্তফা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করবাে? আমার ইস্তফা দেওয়ার মতাে কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’।
কংগ্রেস ও জেডি (এস) বিধায়কদের মধ্যে যখন বিদ্রোহের আগুন আরও বাড়ছে সেই সময় সরকার ধরে রাখার বিশ্বাস আরও প্রবল হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারাস্বামীর।
অতীতের তুলনা টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘২০০৯-১০ সালে যখন বি এস ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় বিজেপির ১৮ জন বিধায়ক এবং ৮ জন মন্ত্রী বিরােধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা তাে সেই সময় ইস্তফা দেননি’।
২২৪ আসনের কর্নাটক বিধানসভায় কংগ্রেস ও জেডি (এস) জোট সরকারের বিধায়ক সংখ্যা ১১৬। ১৬ জন বিধায়কের ইস্তফা গৃহীত হলে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠাতা হারাবে কুমারস্বামী সরকার।
এদিন প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। সব সমীকরণের সমাধান রমেশ কুমারের হাতেই রইল।