মরুরাজ্যে গেহলটই

অশোক গেহলট ও অনন্য কংগ্রেস নেতারা। (Photo: Twitter/@avinashpandeinc)

রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শচীন পাইলট বলছে রাজ্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নির্দেশে এদিন সকালে তাঁর বাসভবনে হাজির হন ১০৬ জন বিধায়ক। রাজস্থান বিধানসভার আসন সংখ্যা ২০০। মজার কথা হল বিরোধীরা নয় সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রীই বলছেন সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। শচীন পাইলট আবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও।

দলের মধ্যে এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও শাসকদলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের এমন আচরণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বাধ্য। এর আগে মধ্যপ্রদেশেও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সেখানে কমলনাথের কংগ্রেস সরকার জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগের ফলে ভেঙে যায়। এখন তিনি বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য। আর কংগ্রেসের বাইশজন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ফলে সেখানে শিবরাজ চৌহানের নেতৃত্বে আবার বিজেপি সরকার গঠন করতে পেরেছে।

জ্যোতিরাদিত্যর পথ অনুসরণ করে তবে কি শচীন পাইলট বিজেপি যোগ দিচ্ছেন। এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু সোমবার শচীন সাফ জানিয়েছেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না, আবার জয়পুরে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকেও তিনি থাকছেন না। সোমবারই শচীনের বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল বলে খবর।


প্রশ্ন হল তবে তিনি কেন হঠাৎ দিল্লিতে চলে এলেন। কেনই বা রাজস্থানের বৈঠকে যোগ দিলেন না। কেন তিনি বারবার ত্রিশজন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে আছেন বলে ভয় দেখাচ্ছেন। তিনি আসলে কংগ্রেস নেতৃত্বকে একটা বার্তা দিতে চাইছেন যে তাঁর কথা মেনে নিলে তিনি আর বিজেপিতে যাবেন না।

কিন্তু মজার কথা হল রবিবার কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতৃত্ব তথা গান্ধি পরিবারের কেউই শচীনের সঙ্গে দেখা করেননি। শচীন নাকি মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেতে মরিয়া হয়েই এমন আচরণ করছেন বলে কংগ্রেস দলের একাংশের অভিমত। অনেকদিন আগেই নাকি শচীন তাঁর এক অনুগামীকে দিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষে।

কিন্তু শচীন তাতে রাজি না হয়ে দিল্লি এসে অশোক গেহলটের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন। অথচ শচীনের দায়িত্বে রয়েছে পাঁচটি মন্ত্রক তবুও নাকি তিনি কোনও গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না। ফলে ক্রমে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। তা তিক্ততায় পরিণত হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য কংগ্রেস পরিষদীয় দলের পক্ষে হুইপ জারি করা হয়। যদিও বৈঠকে শচীন ও তাঁর অনুগামীদের উপস্থিত না হওয়ারই সম্ভানা প্রবল। রবিবার গভীর রাতেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানিয়েদেন, সরকারের কোনও ভয় নেই। সরকারের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করে বিধায়করা তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে রাজস্থানে দলের সঙ্কট মেটাতে দিল্লি থেকে জয়পুরে গিয়েছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। তিনি জানান, সোনিয়া গান্ধির বার্তা নিয়ে তিনি জয়পুরে এসেছেন। শচীন চাইলে তাঁর বক্তব্য জানাতে পারেন। শচীন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী না হতে পেরে প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। গত রাজ্যসভা ভোটের পর তাকে কেন পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছিল? এজন্য তিনি খুবই ক্ষুব্ধ হন।

পুলিশ নাকি সাফাই দিয়েছে ফোনে আড়ি পেতে তারা নাকি জানতে পেরেছে শচীন রাজস্থানের সরকার ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু দলের মধ্যে বা সরকারের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তাকে না জিজ্ঞেস করে কেন পুলিশ ডেকে পাঠাল তা রাজনৈতিক মহলের মাথায় আসছে না। পুলিশ কি একজন উপমুখ্যমন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তিকে ডেকে পাঠাতে পারে এ প্রশ্ন উঠছে। তবে কি রাজস্থানের রাজনীতির দিশা নির্দেশ করছে পুলিশ এ প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হয়েও শচীনকে পুলিশ কেন ডেকে পাঠাল তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। দলের মধ্যে যে ঐক্যে ফাটল ধরেছে তা তার বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার। তিনি সাফাই দিয়েছেন তাকেও নাকি পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছিল।

একজন মুখ্যমন্ত্রীকে পুলিশ ডেকে পাঠাচ্ছে সরকার ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার কারণে রাজনৈতিক মহল এটা মেনে নিতে পারছেন না। এখানে পুলিশের কোনও ভূমিকাই তো থাকার কথা নয়। রাজস্থানে বিজেপির বিধায়কের সংখ্যা ৭৩। সরকার গড়তে হলে তাদের আরও ৩৫ জন বিধায়কের সমর্থন দরকার।

কিন্তু বিজেপি শচীনকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে দিতে রাজি নয়। কারণ সেখানে বিজেপির নেত্রী বসুন্ধরা রাজে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ফলে শচীন কংগ্রেস ছাড়লেও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারছেন না। রাজস্থানে বিধানসভায় ম্যাজিক সংখ্যা ১০১। কংগ্রেসের বিধায়ক ১০৭। এর মধ্যে ৯৭ জন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের প্রতি রবিবার পর্যন্ত আস্থা জানিয়েছেন। কমবেশি দশ জন বিধায়ক পাইলটের দিকে ঝুঁকে আছেন।

এখন শচীন সোমবার বিজেপিতে যোগদানের কথা অস্বীকার করায় কংগ্রেস সরকারের বিপদ অনেকটাই কেটে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। গত মার্চ মাসে মধ্যপ্রদেশের একদা কংগ্রেস মুখ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তার সঙ্গে দলত্যাগ করেন আরও বাইশ কংগ্রেস ৰ্বিায়ক।

এই দল কদলের ফলে সংখ্যালঘু কমল নাথের কংগ্রেস সরকারের পতন হয়। সেই ঘটনার চার মাসের মধ্যে কংগ্রেসের অপর নেতা শচীন পাইলটকে ঘিরে কংগ্রেসে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। জ্যোতিরাদিত্যের পথেই হাঁটনে শচীন বলে জল্পনা চলছে।

এদিকে রবিবার মধ্যরাতে কংগ্রেস নেতা অবিনাশ পান্ডে জানিয়েছেন রাজস্থান সরকার নিরাপদ। ১০৯ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। রাজ্যে অশঅক গেহলট ও কেন্দ্রে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বেই কাজ করতে চায় রাজস্থানের কংগ্রেস দল বলে তিনি সাফ জানান।

তবে বিজেপি রাজস্থানের সরকার ফেলতে যে চেষ্টা করছে তার প্রমাণ মিলেছে কংগ্রেস নেতাদের বাড়িতে আয়কর হানা থেকেই। কেন্দ্রীয় সরকার কংগ্রেসের নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সরকার ভেঙে দিতে চাইছে বলে অবিনাশ পান্ডে দাবি করেছেন।