সুলতানপুর, ২৬ জুলাই: কথায় বলে, ‘জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ’। একসময় দেশ ও সমাজের বিশিষ্ট জনেরা নিজের মহান পেশায় থেকেও এইসব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখতেন। সংসারী জীবনে সেটা করেও থাকতেন। তাই কথায় কথায় বলা হতো, ‘উনি জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ জানেন’। এবার কি সংসদের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রেও সেই প্রবাদ সত্যি হতে চলেছে? এক চর্মকারের কাছ থেকে জুতো সেলাই শিখতে দেখে সেই জল্পনা ছড়িয়েছে সমাজ মাধ্যমে।
শুক্রবার কংগ্রেস সাংসদ একটি মামলার জেরে সুলতানপুর আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য মানহানির মামলা হয় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে। গত ২ জুলাই রাহুলকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল সুলতানপুরের সাংসদ-বিধায়কদের আদালত। সেই মতো শুক্রবার রায়বরেলীর সাংসদ আদালতে উপস্থিত হন।
মাঝপথেই একটি দৃশ্য দেখে হঠাৎ থেমে গেলেন। তাঁর গাড়িটি আচমকা থেমে গেল একটি বেড়া দিয়ে ঘেরা দোকানের সামনে। যেখানে একজন বৃদ্ধ বসে জুতো সারাই করছেন। দোকানি নিতান্তই গরিব, তা দোকান ও পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জুতো সেলাই করে কোনওরকমে সংসার জীবন অতিবাহিত করেন। সেই দোকানেই সটান ঢুকে পড়লেন কংগ্রেস সাংসদ। তিনি ওই চর্মকারের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেললেন। খোঁজ নিলেন তাঁর অভাব-অভিযোগের।
জানা গিয়েছে, দোকানির নাম রাম চৈত। তিনি উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের বাসিন্দা। রাহুলের গাড়ি যে এই পথ দিয়ে যাবে, তা তিনি আগে থেকেই খবর পেয়েছিলেন। সেজন্য রাস্তায় হত্যে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। যথারীতি রাহুলের গাড়ি আসতেই হাত দেখিয়ে দাঁড় করান রাম চৈত। কংগ্রেস নেতা নির্দ্বিধায় তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করান। কংগ্রেসের পোস্ট করা সেই ভিডিও ইতিমধ্যে সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তিনি রামের সঙ্গে অন্তত ৩০ মিনিট কথা বলেন। কিভাবে তিনি জুতো সেলাই করেন সেটাও শিখে নেন। যেন নিজের পাড়ার প্রতিবেশী।
ঘটনার পর সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দেন রাম। তিনি এএনআইকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি তাঁকে বলেছি, আমরা আর্থিকভাবে কতটা পিছিয়ে রয়েছি। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। তাঁর কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। আমি তাঁকে দেখিয়েছি কীভাবে আমি জুতো মেরামত করি।’’
প্রসঙ্গত সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে তাঁদের পেশার অনুভূতি অর্জন করা রাহুল গান্ধীর কাছে নতুন ঘটনা নয়। অতীতে দেখা গিয়েছে, কৃষকের ক্ষেতমজুরদের সঙ্গে গ্রামে থেকে তাঁদের সঙ্গে গ্রামীণ জীবনের দুঃখকষ্ট ভাগ করে নিতে। কৃষি ক্ষেতে মাটির বোঝা মাথায় করে বইতে দেখা গেছে। কখনও তিনি লোকাল ট্রেনে সওয়ার হয়েছেন। আবার কখনও কুলির ভূমিকায়ও দেখা গেছে তাঁকে। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিয়েছেন। অনেক কংগ্রেস নেতা বলতেন, রাহুল দেশবাসীর ঘরের ছেলে। তাঁদের সমস্যা নিয়ে সব সময় ভাবেন তিনি।