কাউন্সিলরদের আচরণে চাপান উতোর
আমিনুর রহমান, বর্ধমান, ১ জুন— লোকসভা ভোটের প্রচারে বর্ধমানের অদূরে জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আর সেই সভায় পানীয় জল সরবরাহ করা হয় বর্ধমান পৌরসভা থেকে৷ বর্ধমান জেলায় লোকসভা নির্বাচন মিটে গেছে৷ তার পরে বর্ধমান পৌরসভার বোর্ড মিটিংয়ে কার্যত চরম ক্ষোভের মুখে পড়লেন চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার৷ দলের তিন জন কাউন্সিলর তার কাছে রীতিমত জবাবদিহি দাবি করেন৷ এ নিয়ে ধুন্দুমার কান্ড ঘটে যায় পৌরসভার সভাকক্ষে৷ সূত্রের খবর ওই তিনজন কাউন্সিলর বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের অনুগামী৷ ফলে দলের মধ্যেই এ ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন ছডি়য়ে পডে়৷ যদিও চেয়ারম্যান সাফ জানিয়ে দেন তিনি আইন বর্হিভূত কোন কাজ করেননি৷
মে মাসের ৩০ তারিখে বর্ধমান শহরের কাছে ঝিঙ্গুটি সাই স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে দলীয় জনসভায় যোগ দিতে আসেন নরেন্দ্র মোদি৷ আর ওই দিনের সভায় ৯ টি পানীয় জলের গাডি় বর্ধমান পৌরসভা থেকে পাঠানো হয়৷ সূত্রের খবর বিজেপির আবেদনে পৌরসভা ওই জলের গাডি় পাঠায়৷ কিন্ত্ত প্রায় এক মাস বাদে পৌরসভার বোর্ড মিটিংয়ে কার্যত চরম ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় চেয়ারম্যানকে৷ বোর্ডের মিটিং চলাকালে পৌরসভার তিন কাউন্সিলর ইন্তেখাব আলম, শ্যামাপদ বন্দোপাধ্যায় ও নূরুল আলম চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকারকে ঘিরে ধরে কার্যত জবাবদিহি আদায় করতে চান৷ অভিযোগ তাকে নানা রকম ভাবে বিব্রত করার চেষ্টা চলে৷ তবে এ ঘটনায় বেশিরভাগ কাউন্সিলর কোন ভাবেই মুখ খোলেননি৷ তিন কাউন্সিলর জানতে চান কেন শহর এলাকার বাইরে কোন একটি জনসভায় জলের গাডি় পাঠানো হলো৷
এমনকি বর্ধমানের ভোটের আগে দলীয় কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও বিজেপি কি ভাবে টাউনহল ভাড়া পেয়েছিল তা নিয়েও জবাব চাওয়া হয়৷ এ সময় পৌরবোর্ড এর বৈঠকে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়৷ তাকে বার বার বলা হয় তিনি তৃণমূলের দৌলতে ওই চেয়ারম্যান পদে বসেছেন৷ সে ক্ষেত্রে দলের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল৷ এখানেই শেষ নয় বর্ধমানের ভোট পর্ব মিটে যাবার পরদিন ১৪ মে পৌরসভার বেশ কয়েকজন কর্মী হাজিরা দেন নি৷ কেন তাদের হাজিরা খাতায় লালকালি পড়লো এদিন তারও জবাব চাওয়া হয়৷ তবে সূত্রের খবর ওই সভায় যারা চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে সরব ছিলেন তারা সবই বিধায়ক অনুগামী বলে পরিচিত৷ আর গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিধায়ক গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের পুরনো নেতৃত্বের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলায় এই ঘটনাকে নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে৷ নাম না করে একশ্রেণীর নেতা নেত্রীরা বলছেন চেয়ারম্যান কে চাপে ফেলতেই এ ধরনের আচরন৷ এদিকে যার বিরুদ্ধে তোপ দেগে কাউন্সিলররা অভিযোগ তোলেন সেই চেয়ারম্যান কিন্ত্ত সাফ জানিয়ে দেন তিনি কোন অন্যায় করেন নি৷ চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার বলেন পৌরসভার নিয়ম মেনে জলের গাডি় পাঠানো হয়৷ যে কেউ আবেদন করলে গাডি় থাকলে তা না দিয়ে অমানবিক কাজ হবে৷ আর বাইরে জল পাঠানো যাবে কিনা সে প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সভাতেও পঞ্চায়েত এলাকায় জল পাঠানো হয়েছে৷ একই সঙ্গে চেয়ারম্যানকে বলা হয় টাউনহল ব্যবহারে দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে কেন বিজেপিকে দেওয়া হলো৷ দরকার হলে অন্য রাজনৈতিক দলকে টাউনহল ভাড়া না দেবার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাউন্সিলররা৷ পরেশবাবু বলেন টাউনহল ফাঁকা থাকায় পৌরসভার আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল৷ অন্যদিকে আর এক প্রশ্নের মুখে পডে় চেয়ারম্যান বলেন দলের লোকজন পৌরসভার কর্মী হিসাবে কাজে যোগ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে না এমন কথা পুর আইনে আছে কিনা জানা নেই৷ তবে আর যাই হোক বর্ধমান পৌরসভার বোর্ড মিটিংয়ে চেয়ারম্যানকে ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছে তা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে৷ আগামীদিনে দল কি ব্যবস্থা নেয় তার দিকেও তাকিয়ে অনেকেই৷