• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

সংসদের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ রাষ্ট্রপতির, আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে বড় চমকের ইঙ্গিত

দিল্লি, ২৭ জুন:  আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ভাষণ দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তৃতীয় মোদী সরকার গঠনের পর এটাই তাঁর প্রথম ভাষণ। নয়া মোদী সরকারের প্রথম দিনের ভাষণে দেশের আর্থিক উন্নতির ওপর জোর দিলেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা ও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যেও জাতীয় স্বার্থে কেন্দ্র সরকারকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি, নতুন সরকারের প্রথম বাজেটে দেশের

দিল্লি, ২৭ জুন:  আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ভাষণ দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তৃতীয় মোদী সরকার গঠনের পর এটাই তাঁর প্রথম ভাষণ। নয়া মোদী সরকারের প্রথম দিনের ভাষণে দেশের আর্থিক উন্নতির ওপর জোর দিলেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা ও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যেও জাতীয় স্বার্থে কেন্দ্র সরকারকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি, নতুন সরকারের প্রথম বাজেটে দেশের জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও দেশবাসীর মধ্যে যথেষ্ট জল্পনা ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

দুই কক্ষের এই যৌথ সভায় তিনি বলেন, “সংস্কার, সম্পাদন এবং রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি ভারতকে বিশ্বের মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। গত দশ বছরের শাসনকালে ভারতের অর্থনীতি ১১তম স্থান থেকে ৫ম স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। মহামারী ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ভারতকে বিশ্বের মধ্যে স্বতন্ত্র জায়গা করে দিয়েছে। ভারত তার আর্থিক উন্নতির মান বাড়াতে পেরেছে।”

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের শুরুতে নব নির্বাচিত সাংসদদের অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি, “বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন”-কে সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুর্মু তাঁর ভাষণে গত এক দশকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবদানগুলি তুলে ধরেন। বিশ্বব্যাপী পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে ভারতের রূপান্তরের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, “আজ, বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির ১৫ শতাংশে ভারতের অবদান রয়েছে। গত ১০ বছরে জাতীয় স্বার্থে গৃহীত সংস্কার ও সিদ্ধান্তের কারণে এটি সম্ভবপর হয়েছে। আমার সরকার ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার জন্য কাজ করে চলেছে।”

চলতি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মুর্মু আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটকে গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই বাজেটে সরকারের ব্যাপক নীতি এবং দূরদর্শিতা প্রতিফলিত হবে। সেজন্য আসন্ন বাজেটে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, “এই বাজেট হবে সরকারের সুদূরপ্রসারী নীতি ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গির একটি কার্যকর দলিল। বড় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি অনেক ঐতিহাসিক পদক্ষেপও এই বাজেটে প্রতিফলিত হবে।”

কৃষি সংস্কারের বিষয়ে, রাষ্ট্রপতি মুর্মু প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের অধীনে ৩.২০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং খারিফ ফসলের জন্য ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এম এস পি) রেকর্ড বৃদ্ধি সহ সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জৈব চাষে ভারতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং ভারতের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত আন্তর্জাতিক মিলট দিবস এবং আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মতো উদ্যোগগুলির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, “আমার সরকার প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির অধীনে দেশের কৃষকদের ৩.২০ লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করেছে। সরকারের নতুন মেয়াদের শুরু থেকে, কৃষকদের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি হস্তান্তর করেছে। সরকার খারিফ ফসলের জন্য এমএসপি-তেও রেকর্ড বৃদ্ধি করেছে। আজকের ভারত তার বর্তমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশের কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন করছে। বর্তমান বিশ্বে জৈব পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ভারতীয় কৃষকদের এই চাহিদা মেটানোর পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে সরকারের। তাই, সরকার প্রাকৃতিক, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের সাপ্লাই চেইনকে একত্রিত করছে।”

মুর্মু উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নের দিকেও মনোনিবেশ করেছেন। তিনি গত এক দশকে বাজেট বরাদ্দের চারগুণ বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করেনা। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় নীতির মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি পর্যায়ক্রমে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA) বাতিলের মাধ্যমে সংযোগ বৃদ্ধি এবং শান্তি প্রচারের প্রচেষ্টার উপর জোর দেন।

সেজন্য মুর্মু বলেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য, আমার সরকার গত ১০ বছরে বাজেট বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়িয়েছে। সরকারের পূর্বাঞ্চল নীতির আইনের অধীনে এই অঞ্চলটি একটি কৌশলগত প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করছে। উত্তর-পূর্বে সব ধরনের সংযোগ বিস্তৃত করা হচ্ছে। আমার সরকার উত্তর-পূর্বে শান্তি আনতে অবিরাম কাজ করে চলেছে। গত ১০ বছরে বেশ কয়েকটি পুরনো সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এজন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করা হয়েছে। সেখানে দ্রুত অগ্রগতি ঘটানোর পরে অশান্তি রোধ সহ অঞ্চলগুলিতে পর্যায়ক্রমে AFSPA(আফস্পা) বাতিলের কাজ চলছে।”

এদিন উল্লেখযোগ্যভাবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থা জারির সমালোচনা করেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে জরুরি অবস্থা জারি হওয়া সংবিধানের ওপর একটি বড় আঘাত বলে দাবি করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন,”আজ ২৭ জুন। অথচ ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল ২৫ জুন। যা সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাতের একটি বড় ও অন্ধকার অধ্যায়। সেদিন সমগ্র দেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কিন্তু দেশ এমন অসাংবিধানিক শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। কারণ ভারতের মূলে রয়েছে, প্রজাতান্ত্রিক ঐতিহ্য।”

প্রসঙ্গত বিরোধীদের বেঞ্চ থেকে ‘NEET’-এর স্লোগানের মধ্যে, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে কথিত প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, সরকার পরীক্ষা পরিচালনার সময় তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর, সংসদের উভয় কক্ষে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।