নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ১ জুন, প্রস্ত্ততি শেষ পর্বে

শ্রীধর মিত্র: অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট আগামী শনিবার, ১ জুন৷ ওই দিন নয়টি আসনের ভোটগ্রহণ হবে৷ শুধুমাত্র কলকাতা দক্ষিণ এবং কলকাতা উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের ও যাদবপুর আসনের এবং জয়নগরের মোট পাঁচটি আসনের দায়িত্ব সামলাতে হবে কলকাতা পুলিশকে৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতার দু’টি আসনের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৪০টি ও বুথের সংখ্যা ৫,১৫৮টি৷ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ২৪৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে, এছাড়াও কলকাতা পুলিশের ১১,৩১১ জন বাহিনীও পথে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন৷ কলকাতা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে বসিরহাট আসনের ভাঙ্গর বিধানসভার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে আটটি থানা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরুন আগামী ১ জুন, শনিবার সপ্তম ও শেষ দফার ভোটের দিন ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছেন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল৷ সপ্তম দফার ভোটে কলকাতা পুলিশের এলাকাকে ৩৪৭টি সেক্টরে ভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নিরাপত্তার তাগিদে, থাকছে ১২৪টি ফ্লাইং স্কোয়াড, ৯০টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়ড বাহিনী, ১১৪টি এসএসটি এবং ২৩০টি কিউআরটি ভ্রাম্যমান দল, সারা কলকাতা পুলিশ এলাকায় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মজুত থাকছে৷ এছাড়া কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত ভাঙর এলাকার দায়িত্ব সামলাবেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷

২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশ এলাকার জন্য ১৪৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বরাদ্দ ছিল কমিশন কর্তৃক৷ ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটের নিরিখে ২০২৪ সালে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন অনুযায়ী এবার বুথের সংখ্যা কমে গেলেও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের নিয়ে প্রতিটি সেক্টরের দল গড়া হবে৷ কলকাতার ৫,১৫৮টি বুথই স্পর্শকাতর বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে৷ ১০০ শতাংশ বুথেই ওয়েবকাস্টিং হবে, যার ফলে জাতীয় নির্বাচন কমিশন দফতরে বসে এবং কলকাতার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে বসে ১৯৪০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সচিত্র ছবি সরাসরি দেখতে পারবেন ও প্রয়োজনে নির্দেশ দিতে পারবেন কমিশন থেকে৷

প্রতিটি বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানরা৷ কলকাতা পুলিশের অধীন এলাকায় একটি করে বুথ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৮৫টি, দু’টি করে বুথ রয়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ৬০৪টি, তিনটি করে বুথ রয়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৩১টি, চারটি করে বুথ রয়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ২৮৭টি৷ তবে সর্বোচ্চ ১৫টি বুথ নিয়ে কেন্দ্র থাকছে দু’টি৷ এক বা র্দুটি বুথ রয়েছে যে কেন্দ্রে সেই কেন্দ্রে চারজন বা হাফ সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন থাকবে, আবার তিন থেকে পাঁচটি পোলিং রয়েছে এমন কেন্দ্রে আটজন বা এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মোতায়েন থাকবেন৷ ছয় বা তার বেশি পোলিং স্টেশন যুক্ত কেন্দ্রে ১২ জন বা দেড় সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মোতায়েন থাকবেন৷ বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ভোটপরবর্তী হিংসায় বিরোধী দলের ১০ জনর বশি কর্মী-সমর্থকদের মৃতু্যর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বহু কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়েছিলেন৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে অষ্টাদশ লাকসভা নির্বাচনের পরেও গণনা ৪ জুন হয়ে গেলেও রাজনৈতিক অশান্তি হানাহানিকে স্তব্ধ করতে ও আগাম বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বঙ্গ থেকে প্রত্যাহার হলেই আরম্ভ হতে পারে রাজনৈতিক সংঘর্ষ৷ অগত্যা ৪ জুন গণনার পরেও পক্ষকাল (১৫) দিন ধরে প্রায় ৩২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে যাবে বঙ্গে৷ ওই বাহিনী বঙ্গের সংঘর্ষপ্রবণ জেলায় জেলায় মোতায়েন করা হবে৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই৷


গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় একাধিক মামলা হাইকোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক তদন্তভার নিয়ে ৩০টার মতো মামলা সিবিআই দায়ের করেছে৷ তখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা সংশোধনাগারে আছেন৷
বঙ্গে শুধুমাত্র ভোটপরবর্তী হিংসার ঘটনায় নয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ সন্দেশখালিতে ইডি ও পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এএনাই দলের আধিকারিকরা শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ৷ তাই লোকসভা নির্বাচনে এবং গণনার পরেও বঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷