লোকসভা নির্বাচনের আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার আগেই গোটা দেশে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অর্থাৎ সিএএ কার্যকর করা হল৷ বিল পাস হওয়ার প্রায় সাডে় চার বছরেরও বেশি সময় পর জারি হয়ে গেল সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি৷ বিজেপি আগে থেকেই এই আইন লাগুর কথা বলে আসছিল৷ কিন্ত্ত প্রশ্ন উঠছে এটি লাগুর টাইমিং নিয়ে৷ মোদি সরকারের এরূপ সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক প্রভাব কতটা পড়বে এখন বলা সম্ভব না হলেও, প্রতিবেশী দেশগুলিতে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে ফিরে আসা হাজার হাজার মানুষের জন্য নাগরিকত্ব এক কথায় বরদানের থেকে কম নয়৷ সিএএকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে, এই পদক্ষেপটি সেই সমস্ত লোকদের জন্য যাঁরা সবকিছু হারিয়ে ফিরে এসেছেন তাদের জন্য স্বপ্নের মতো৷ বিভ্রান্তির কারণে তাদের অবস্থা ছিল বেদনাদায়ক৷ নতুন আইনের বিধান অনুযায়ী, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে নির্যাতিত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ইত্যাদি মানুষ ভারতে এলে নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে৷
আসলে, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুসারে, ভারতে নাগরিকত্ব পেতে, এগারো বছর দেশে থাকতে হয়েছিল৷ এখন এই মেয়াদ কমিয়ে ছয় বছর করা হয়েছে৷ এটি উল্লেখযোগ্য যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যখন ২০১৯ সালে সংসদ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল, তখন বিভ্রান্তি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল৷ প্রকৃতপক্ষে, এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারও বিরোধীদের বোঝাতে সফল হতে পারেনি যে এই আইনটি কারও নাগরিকত্ব কেডে় নেওয়ার জন্য নয় বরং প্রতিবেশী দেশগুলিতে নিপীড়নের পরে দেশান্তরিত ভারতীয়দের ন্যায্য নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে৷ কিন্ত্ত এই ইসু্যতে তীব্র রাজনীতির শোরগোল এতটাই জোরালো ছিল যে সিএএ ইসু্যতে অপ্রত্যাশিত বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ এর বিরুদ্ধে দিল্লিতে দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছে৷ যা শেষ পর্যন্ত সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়৷ যাইহোক, দেশে সিএএ প্রয়োগ করে, বিজেপি তার লক্ষ্য বিভাগকে আশ্বস্ত করেছে যে এটি তার মূল এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ বিষয়কে বাস্তবায়িত করেছে৷ নির্বাচনের ঠিক আগে এর বাস্তবায়নও সেদিকেই ইঙ্গিত করে৷
যাইহোক, হাজার হাজার মানুষ যারা বছরের পর বছর ধরে ভারতে আসার পরে নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অফিসে ঘোরাঘুরি করবেন৷ এই মানুষদের পৃথিবীর আর কোথাও থাকার জায়গা ছিল না৷ তবে, প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিভাজনের অসঙ্গতি এবং সেসব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের অসহিষ্ণুতা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতে আসা ছাড়া উপায় ছিল না৷ গত কয়েক বছরে, আফগানিস্তানে অভু্যত্থানের পর, তালেবানদের দ্বারা হিন্দু ও শিখদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের কারণে, এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ আফগানিস্তান ছেডে় চলে গেছে৷ তবে, এখন নতুন আইনে এই লোকেরা তাদের নাগরিকত্বের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন৷ তবে যারা এই বিষয়টির বিরোধিতা করছেন তাদের নিজস্ব যুক্তি রয়েছে৷ এ নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও স্বাভাবিক৷ এ নিয়ে ধর্মের রাজনীতি করার অভিযোগও উঠেছে৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ইসু্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে দল ও বিরোধীরা৷
তবে রাজনীতি ছাড়াও এই সমস্যার একটি মানবিক দিকও রয়েছে৷ যারা উন্নত জীবনের আশায় দেশে এসেছেন তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে হবে৷ নির্বাচনের আগে আইন সংক্রান্ত বিধি-বিধান পরিষ্কার হয়ে গেছে এটা ভালো ব্যাপার৷ ২০১৯ সালে যখন এটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল তখন এটি ঘটতে পারেনি৷ এখনই নিয়ম ঠিক না করলে নতুন লোকসভা অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারত৷ এটা বলা যেতে পারে যে কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা সম্পন্ন করেছে৷ এখন সিএএ-র বিরোধীরাও প্রতিবাদের যুক্তিতে তাদের মতামত উপস্থাপন করতে পারে৷ তবে একই সাথে, সিএএ নিয়ে কিছু অংশের যে আশঙ্কা রয়েছে তা সময়মতো সমাধান করাও ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব৷ তা না হলে আগের মতো আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে৷