মোদিকে রুখতে মরিয়া মানুষজন জবাব দেবেন ইভিএমে : অভিষেক

নিজস্ব প্রতিনিধি— সপ্তাহান্তে জোড়া কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের৷ আগামী ২০ মে উলুবেড়িয়ায় পঞ্চম দফায় নির্বাচন এবং আগামী ১৩ মে বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে চতুর্থ দফায় নির্বাচন রয়েছে৷ এবার এই দুই কেন্দ্র জয়ের উদ্দেশ্যেই অভিষেক উলুবেড়িয়ায় সাজদা আহমেদের সমর্থনে করেন জনসভা এবং কীর্তি আজাদের সমর্থনে বর্ধমানের রামনগর ফুটবল মাঠ থেকে হাটতলা পর্যন্ত করেন রোডশো৷ উভয় কর্মসূচী থেকেই দফায় দফায় আক্রমণ শানান বিজেপিকে, অস্ত্র করেন ‘বিজেপি পরিকল্পিত সন্দেশখালিকান্ড’৷ অভিষেকের ভাষায়, “এদের (বিজেপি) কাছে দুটো ইসু্য ছিল৷ এক, চাকরি এবং দুই, সন্দেশখালি৷ দুই বেলুনেই আলপিন ফুটে গেছে৷ ” সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সেনাপতি বলেন, “আজ সন্দেশখালি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বিজেপি দলটাই জালি৷ এই নিকৃষ্ট রাজনৈতিক দল কেবল নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেশবাসীর কাছে বাংলার দশ কোটি মানুষকে ছোট করেছে৷ আগামী ২০ তারিখ এই বিজেপিকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া উচিৎ নয় যারা ২০০০ টাকার বিনিময়ে মহিলাদের ইজ্জত বেচে দিয়েছে?” বিজেপির মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে স্টিং ভিডিওতে বুথ প্রতি বিজেপির মদের খরচ বলতে শোনা যায়৷ সেই প্রসঙ্গেই অভিষেক কটাক্ষ করে বলেন, “প্রতি বুথে মদের খরচ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা লাগলে বাংলার আশি হাজার বুথে সেই খরচ হবে চল্লিশ কোটি টাকা৷ বিজেপি বাংলা জুড়ে তার নেতাদের চল্লিশ কোটি টাকার মদ খাওয়াবে!” পাশাপাশি এদিন উলুবেড়িয়া থেকেই বিস্ফোরক দাবি করেন অভিষেক৷ সিবিআইয়ের চাপে মৃতু্য হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ সুলতান আহমেদের, মন্তব্য তাঁর৷ সভামঞ্চে সাজদা আহমেদের জন্য ভোট চাইতে গিয়ে অভিষেকের অভিযোগ, “এই উলুবেডি়য়া কেন্দ্রের মানুষের সর্বক্ষণের কর্মী, সাথী ছিলেন সুলতান আহমেদ৷ সিবিআই দিয়ে অত্যাচার করিয়ে মানুষটাকে মারা হয়েছে৷ ” এর পরই তাঁর আর্জি, “তাঁর সহধর্মিনী আপনাদের কাছে শুধু সমর্থন চাইতে নয়, বিজেপিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করার জন্য আশীর্বাদ, দোয়া চাইতে এসেছেন৷ ” সেই মুহূর্তে মঞ্চে দাঁডি়য়ে চোখ মুছেছিলেন তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রার্থী সাজদা আহমেদ৷

“পাঁচ বছর আপনার ওপর যে লাঞ্ছনা হয়েছে সেটা মাথায় রাখুন”, জনসাধারণকে উপদেশ অভিষেকের৷ ইভিএমের বোতামকেই অস্ত্র বানানোর নির্দেশ যুবরাজের৷ তাঁর ভাষায়, “প্রধানমন্ত্রী রিমোর্ট কন্ট্রোল টিপে আপনাদের টাকা বন্ধ করেছেন৷ ওঁনার হাতে যদি রিমোর্ট কন্ট্রোলের বোতাম থাকে তাহলে আপনাদের হাতে ইভিএমের বোতাম থাকবে৷ আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বোতাম টিপে আমাদের অধিকার আটকাবেন আর আমরা বোতাম টিপে আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেবো৷ ” প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে৷ এবার সেই প্রসঙ্গ টেনেই আক্রমণ অভিষেকের৷ তাঁর ভাষায়, “দশ বছরে ২০ কোটি বেকারের চাকরি হওয়ার কথা অর্থাৎ প্রত্যেক বুথে কমপক্ষে ১০০ জনের চাকরি পাওয়ার কথা৷ বিজেপি যেখানে জিতেছে সেই কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের যদি একটা ছেলে, মেয়েকে এদের নেতারা কার্যের নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন তাহলে আমি তৃণমূলের হয়ে ভোট চাইতে আসবো না৷ ” এরপরই বিজেপি নেতাদের রিপোর্ট কার্ডের ভিত্তিতে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানান সেনাপতি৷ উলুবেড়িয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “এখনও প্রচারে সময় রয়েছে ৭ দিন৷ আপনারাই মঞ্চ ঠিক করুন৷ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে লড়াই হবে৷ ভোকাট্টা করে যদি মাঠের বাইরে বার না করে দিতে পারি তাহলে আমার নাম অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নয়৷ ” ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দশ বছরের রিপোর্ট কার্ড দিয়েছে রাজ্য সরকার, দাবি অভিষেকের৷ “বিজেপির রিপোর্ট কার্ড কোথায়?” প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ পাশাপাশি এখনও শ্বেতপত্র প্রকাশ না করা নিয়েও নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রীকে৷

বাঁকুড়ার এক সভা থেকে বেড়িয়ে কিছু বিক্ষোভরত মহিলাদের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালজ করেছিলেন বুধবার৷ শুভেন্দুর সেই অডিও ক্লিপ শুনিয়ে আক্রমণ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “বিজেপির নেতা যাকে পাশে বসিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মিটিং করেন, তাঁর মুখের ভাষা শুনুন৷