রাজনীতির ক্রিজেও দাপট দেখালেন পাঠান

৮৫ হাজার ভোটে পরাজিত বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর

কুশল কুমার বাগচি, বহরমপুর, ৪ জুন— গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ২২টির মধ্যে ২০টিতে জয়ী হয়ে যে একাধিপত্য দেখিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, লোকসভা নির্বাচনে তা গেল ছাপিয়ে৷ জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুরে জয়ী হলেন তিন প্রার্থী যথাক্রমে ইউসুফ পাঠান, আবু তাহের খান এবং খলিলুর রহমান৷ তিনটি কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থীরা রয়েছেন তৃতীয় স্থানে৷ এদিন সন্ধ্যার পরে মুর্শিদাবাদ জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যানুসারে বহরমপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইউসুফ পাঠান পেয়েছেন ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৮৬টি ভোট৷ অন্যদিকে অধীর চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৪ লক্ষ ৩৮হাজার ৫২৩টি৷ বিজেপি প্রার্থী ডা: নির্মলকুমার সাহা পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭১টি ভোট৷ ইউসুফ পাঠান জয়ী হয়েছেন ৮৫ হাজার ৬৩ ভোটে৷ অন্যদিকে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী খলিলুর রহমান পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪৪৯টি ভোট৷ বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মর্তুজা হোসেন পেয়েেছন ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ১০৫টি ভোট৷ বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৬৮টি ভোট৷ খলিলুর রহমান জয়ী হয়েেছন ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৪৪টি ভোটে৷ মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আবু তাহের খান পেয়েছেন ৬ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৮৩টি ভোট৷ অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী সিপিএমের মহম্মদ সেলিম পেয়েছেন ৫ লক্ষ ১৭ হাজার ২৫৮টি ভোট৷ বিজেপি প্রার্থী বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ পেয়েছেন ২ লক্ষ ৯ হাজার ৮৭৬টি ভোট৷ আবু তাহের খান ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫২৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন৷ আবু তাহের খান এবং খলিলুর এ নিয়ে পর পর দু’বার জয়ী হলেন তাদের কেন্দ্রে৷ তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী৷ ইদ্রিশ আলির মৃতু্যর পরে আসনটি ফাঁকা হয়৷ সেই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অঞ্জু বেগমকে ১৫ হাজার ৬১৫ ভোটে পরাজিত করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রেয়াত হোসেন সরকার৷ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার ১৮টি ভোট৷ বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অঞ্জু বেগম পেয়েছেন ৯১ হাজার ৪০৩টি ভোট৷ বি জে পি প্রার্থী ভাস্কর সরকার পেয়েছেন ১৭ হাজার ২৬৫টি ভোট৷

এদিকে জয়ের পরে আবু তাহের খান সাংবাদিকদের বলেন, “মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে এবং একটি বিধানসভার উপনির্বাচনে এই জয় ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ কারণ প্রার্থী ঘোষণার পরে আমরা যেখানেই প্রচারে গিয়েছি, সেখানে মানুষের এত অভ্যর্থনা পেয়েছি, তা দেখে তখনই আমরা নিশ্চিত ছিলাম প্রতিটি আসনে আমরা জয়ী হব৷ বাংলার মা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়নের কাজ করেছেন, তা দেখেই মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন৷” দুই হেভিওয়েট প্রার্থী অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিমের হার নিয়ে তিনি বলেন, “যখনই এই দু’জন জোট বেঁধে নেমেছিল, তখনই মানুষ ঠিক করে নিয়েছিল, তাদের সিদ্ধান্ত৷ কারণ যে সিপিএমের হাতে দীর্ঘ ৩৪ বছর মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট মানুষ ভালো চোখে আগেও নেয়নি৷ এই নির্বাচনেও যে নেয়নি, সেটা প্রমাণ দুই দলের দুই হেভিওয়েটের পরাজয়৷ তাই প্রচারে গিয়ে আমরা জানিয়েছিলাম আমাদের সব প্রার্থী এক লক্ষ ভোটের উপরে জয়ী হবেন৷” আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে আবু তাহের খান বলেন, “অধীর চৌধুরীকে সম্মান করি৷ কারণ তার সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি৷ আমি কংগ্রেস দলের সভাপতিও ছিলাম৷ কিন্ত্ত যেদিন থেকে উনি সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, আমরা সবাই কংগ্রেস ছেডে়ছি৷ কারণ উনি বিজেপি-এর দেখানো পথেই হাঁটছে৷” জয়ের পরে সেই জয় বহরমপুর কেন্দ্রের সমস্ত কর্মীদের উৎসর্গ করেন ইউসুফ পাঠান৷