নিজস্ব প্রতিনিধি – উত্তর থেকে দক্ষিণের দলীয় সংগঠনকে মজবুত করতে একের পর এক সাংগঠনিক বৈঠক করে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ উত্তরবঙ্গের কাজ সেরে এবার টার্গেট করছেন দক্ষিণকে৷ নির্বাচনে জিততে হলে দলীয় কর্মীদের মধ্যে সমঝোতা রাখতে হবে, গোষ্ঠীকোন্দল এড়িয়ে চলতে হবে – বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এই বার্তাই দেন অভিষেক৷ আগামী লোকসভা নির্বাচণের রণকৌশল নিয়ে আলোচনায় দলীয় কর্মীদের দেন একাধিক উপদেশ৷ তৃণমূলকে জেতানোর জন্য নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইতি টানতে হবে৷ কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ফল খারাপ হলে, সরতে হবে ওই ক্ষেত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে৷ বীরভূমের মতো ঝাড়গ্রাম থেকেও কড়া বার্তা দিলেন দলীয় কর্মীদের৷ পাশাপাশি কোন মন্ত্রে বিরোধীদের পরাস্ত করা যাবে সেই পরামর্শও দেন যুবরাজ৷ দিদি গ্যারান্টি বনাম মোদী গ্যারান্টিকে সামনে রেখে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বোঝাতে হবে৷ পাশাপাশি এ বিষয়ে লিফলেট তৈরির নির্দেশ দেন অভিষেক৷ যেখানে বর্ণিত হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গত দশ বছরে কি কি করেছে৷ এক কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কার্যাবলীর তুলনামূলক আলোচনা করা থাকবে ওই লিফলেটে৷ কেন্দ্র সরকারের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে মানুষের ভুল ভাঙানোর সবরকম প্রচেষ্টা করতে হবে, এমনই বার্তা দেন অভিষেক৷ বাংলাবিরোধী বিজেপির কার্যকলাপগুলি তুলে ধরে জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন দলীয় কর্মীদের৷
উল্লেখ্য, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের৷ কিন্ত্ত এই হার চূড়ান্ত ছিল না৷ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রামের চারটি আসনে জয়ী হয়ে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তৃণমূল৷ আর এই সাফল্যকে ধরে রাখতেই মরিয়া অভিষেক তথা রাজ্যের শাসক শিবির৷ এছাড়াও এই কেন্দ্রে রয়েছে কুড়মি ভোটব্যাঙ্ক৷ এই কুড়মি ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই তৃণমূলের পক্ষে থাকবে, আশাবাদী রাজনৈতিক মহলও৷ অভিষেক জনসভা করেছেন বেশ কয়েকটি, তারপরই মনোনিবেশ করেছেন সাংগঠনিক বৈঠকে৷ তার কারণ একটাই, দলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করতে হবে৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে তাতে ইতি টানতে হবে৷ নির্বাচনী কমিটি গুলিতে আলোকপাত করছেন যুবরাজ কারণ এই কমিটিই নির্বাচনে জয়ের চালিকাশক্তি৷
এদিন ঝাড়গ্রাম শহরে অভিষেক এসে পৌঁছলেই হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হয় জনসমুদ্র৷ ব্যাপক মানুষের ভিড় জানান দেয়, তারা অভিষেক অনুগামী৷ অভিষেকও নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে সকলকে প্রতিবার্তা দেন৷ এরপরই উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয় যুবরাজকে৷ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার নেতৃত্ব এবং বিধায়করা৷ পাশাপাশি তিন জেলার সভাপতি, চেয়ারম্যানরাও ছিলেন৷ এছাড়াও তিন জেলার ব্লক সভাপতি, বিভিন্ন শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিরাও উপস্থিত ছিলেন৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য ঝাড়গ্রাম তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী কালিপদ সোরেনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে প্রচারের কাজ৷ কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত কোনো বড়ো মাপের সভা করতে দেখা যায়নি৷ তবে, যুবরাজের নির্দেশের পর এবার বড়ো মাপের নির্বাচনী প্রচারে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে তৃণমূল৷ এরই মধ্যে ‘তপশিলি সংলাপ’ নামক প্রচার অভিযানেও যথেষ্ট সাড়া পেয়েছে তৃণমূল৷ সবমিলিয়ে আগাম নির্বাচনে ঝাড়গ্রামে জোড়াফুল ফুটবে, আশাবাদী তৃণমূল৷