নিজস্ব প্রতিনিধি : পাটশিল্প সমৃদ্ধ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। কখনও কাঁচা পাটের অভাবে আবার কখনও পর্যাপ্ত জুট সামগ্রী উৎপাদনের ‘অর্ডার’ পাওয়ার অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্যারাকপুরের অধিকাংশ পাটকলগুলি। ফলে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছে ব্যারাকপুরের অর্থনীতি, নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বঙ্গীয় অর্থনীতির উপর। বছরের পর বছর ধরে বেকার থেকে গিয়েছিন পাটকলের শ্রমিকরা। একাধিকবার কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে এই সমস্যার বিষয়টি উত্থাপিত হলেও তার স্থায়ী সমাধান খোঁজা সম্ভব হয়নি এখনও। এই জটিল পরিস্থিতিতে এবার পাটকল শ্রমিকদের আশার আলো দেখালেন ব্যারাকপুরের নবনির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বন্ধ এবং বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকা পাটকলগুলি পুনরায় খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিং কে চিঠি লিখলেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক।
চিঠিতে পার্থ লিখেছেন, হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে অসংখ্য পাটকল। একাধিক কারণে সেই পাটকলগুলি আজ বন্ধ। এই পাটকলগুলি ব্যারাকপুর এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতিকে মজবুত করে আসছে। সেই কারণেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা ব্যারাকপুর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে এসে বসবাস করেন। এক কথায়, এই পাটকলগুলি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমানে সিনথেটিক ফাইবার বা তন্তুর সাথে অসম প্রতিযোগিতায় এবং পাটকলগুলির যথাযথ উন্নয়নের অভাবে একে একে তা বন্ধ হয় গিয়েছে। বিশেষ করে ছোট পাটকলগুলির দুর্দশা চরমে। এই সংশ্লিষ্ট সমস্যার বিষয়টি পার্থ তুলে ধরেছেন নিজ চিঠির মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি তিনি পাটের অর্থনৈতিক উপকারীতা এবং তার পরিবেশ-বান্ধব গুণাবলীর উল্লেখ করেছেন চিঠিতে। বিশ্বব্যাপী জুট সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপক। তাছাড়াও পাট হলো ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের প্রতিস্থাপক। পাটজাত দ্রব্যের সেই বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে ব্যারাকপুর তথা বাংলার অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করতেই সাংসদের আর্জি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিকট। শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এ প্রসঙ্গে পার্থ লেখেন, “একদা পাটশিল্প সমৃদ্ধ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল আজ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। খাদ্যদ্রব্য প্যাকেজিং -এ পরিবেশ বান্ধব জুট সামগ্রী ব্যবহারের পুরনো সরকারী নীতির ফেরৎ আনার দাবীতে মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং -এর কাছে আমার এই আবেদন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে আমার আরও আবেদন এই যে, ঐতিহাসিক কারনেই আমাদের অঞ্চলের এই পাট শিল্পের উপর শুধু বাংলার মানুষই নয়, পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আগত বিশাল সংখ্যক সাধারণ মানুষ নির্ভরশীল। আপনাদের গঠনমূলক রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরেই এই সমস্যার সমাধান নির্ভর করে আছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলার অর্থনীতির অন্যতম মেরুদন্ড এই পাটকল। বিহার, ঝাড়খন্ড সহ বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা এই ব্যারাকপুরে আসেন, পাটকলে কাজ করেন। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে একে একে পাটকলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন শ্রমিকেরা। ‘ওয়েভারলি’, ‘এম্পায়ার’, ‘ইএমকো’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়া’ সহ বহু জুটমিলে পড়েছে তালা। দীর্ঘদিন জুটমিল বন্ধ থাকার কারণে কখনও শ্রমিকেরা বিক্ষোভের পথ বেছে নিয়েছেন, আবার কখনও তাঁরা পেটের দায়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। পার্থ বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচার থেকে ব্যারাকপুরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সাংসদ হওয়ার পর তাঁর প্রথম কাজ হবে ব্যারাকপুরকে গুন্ডারাজ মুক্ত করা এবং দ্বিতীয় কাজ হবে পাটকলগুলিকে পুনরায় খুলে দেওয়া।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যারাকপুর এসে এই পাট প্রসঙ্গের উত্থাপন করে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছিলেন, “ব্যারাকপুরে অনেক পাটকল আছে। এখানের মানুষেরা বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আগে জিজ্ঞেস করুন, প্রধানমন্ত্রী কেন পাট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন?” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও পার্থর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে ব্যারাকপুরে এসে বলেছিলেন, এখানের অসংখ্য পাটকল, চটকলগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে দায়ী বিজেপি সরকার। ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূল জিতলেই, বন্ধ পাটকল এবং চটকলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাবে দল। সেটিই করেছেন সাংসদ পার্থ। নিজ প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। পার্থর এই পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন অসংখ্য পাটকল শ্রমিকেরা।