৩৩ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৩ পার করে দিয়েছে অভিষেক

প্রশান্ত দাস: কথা মতো নিজ গড় ডায়মন্ড হারবারে থেকেই নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের৷ টার্গেট এখন একটাই, সপ্তম দফার নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় জয়কে সুনিশ্চিত করা৷ মঙ্গলে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে জোড়া জনসভা করেন অভিষেক৷ প্রথমে বিষ্ণুপুরের সেঞ্চুরি প্লাইউড পার্কিং গ্রাউন্ডে করেন একটি জনসভা এরপর ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার কামারপোল পালের মোড় থেকে সরিষা ২৪৬ মোড় পর্যন্ত করেন রোডশো৷ উভয় কর্মসূচি থেকেই অভিষেক আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি এবং সিপিএমকেও৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন৷ রোডশো থেকে অভিষেক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তো আসছেন কাকদ্বীপে৷ ক্ষমতা থাকলে কাকদ্বীপে আবাসের শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন৷ ” উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী ফের বাংলায় এসেছেন, কলকাতার রোডশো সহ একাধিক কর্মসূচি রয়েছে উঁনার৷ এই আবহেই স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি যত্নে রাখার পরামর্শ অভিষেকের৷ কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ভোটের সময় আসেন আর ভোট শেষে টাটা বাই৷ আর দেখতে পাবেন না! ২০২১ সালে আমায় জব্দ করতে এই ডায়মন্ড হারবারের সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রে তিন দফায় ভোট করিয়েছিল৷ তাও ৭-০, তৃণমূলের পক্ষে৷ ” এরপরই অভিষেক বলেন, “২০১৯ সালে অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপির কিছু গুন্ডারা কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল৷ আমি কলকাতাবাসী এবং তৃণমূল কর্মীদের বলবো, স্বামী বিবেকানন্দের বাসভবনে স্বামীজীর যে মূর্তি আছে সেটি বুক দিয়ে আগলে রাখুন৷ যাঁরা সারদা মা কে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, আজ লোক দেখাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেছেন৷”

কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বিজেপির দেওয়া নির্দেশ এখন প্রকাশ্যে চলে আসছে, দাবি অভিষেকের৷ নিজ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি বলেন, “ইডি, সিবিআই কাজে লাগিয়ে আমাদের কর্মীদের শেষ দফায় নোটিশ দেওয়া হচ্ছে৷ কাল আমায় আয়কর দফতরের একজন অফিসার ফোন করে জানিয়েছেন, আগামী ৩১ তারিখ এবং ১ তারিখ পাঁচটি জায়গায় তল্লাশি চালানোর কথা বলেছে৷ হাওয়া খারাপ! যা বলছে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে৷” কেন্দ্রীয় বাহিনীও এখন নিরপেক্ষ, তার কারণও শুনিয়েছেন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, “নির্বাচন হয়ে যাওয়া তেত্রিশটা আসনের মধ্যে তৃণমূল তেইশ পাড় করে দিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীও জানে ৪ তারিখ কেন্দ্রে ইন্ডিয়া জোট প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে৷ কেবল সময়ের অপেক্ষা৷ ” এদিনের জনসভা থেকে অভিষেক দফায় দফায় আক্রমণ করেছেন সিপিএমকে৷ প্রথমেই তিনি বলেন, “জ্যোতির্ময় বসু, অমল দত্ত, শমীক লাহিড়ীরা সুদীর্ঘ বছর তিন, চারবার করে জিতে এই কেন্দ্র দখল করে রেখেছিলেন৷

যাঁরা একটা খুঁটি পুঁতে দশ ওয়াটের বাল্ব লাগায়নি, একশো মিটার পাকা রাস্তা করেনি তাঁদের কাছে আমরা গণতন্ত্রের পাঠ পড়তে চাইনা৷” তাঁর আরও সংযোজন, “বিজেপি এবং সিপিএম প্রার্থীকে বলবো অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে হারানোর আগে নিঃশব্দ বিপ্লব পুস্তিকাটা পড়ে দেখো৷ একজনের মাথায় তো চুল নেই৷ আরেকজনের সব চুল পরে যাবে তাও পুস্তিকার পাতা শেষ হবে না৷ বিজেপি আর সিপিএম যাঁরা করেন তাঁদের হাতে তৃণমূল কর্মীদের রক্ত লেগে আছে৷ কোনো সিপিএম অথবা বিজেপি নেতা যদি আমার কার্যের খতিয়ান চান তাহলে আপনারা শুধু ঠিকানা দিন, দু’ঘন্টার মধ্যে নিঃশব্দ বিপ্লব পুস্তিকা পাঠিয়ে দেবো৷” এবার সরাসরি ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থীকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, “বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা করার পর বিজেপির একশো জন নেতা ইস্তফা দিয়েছেন৷ দলীয় লোকেরাই তাঁকে প্রার্থী মানছেন না! বিজ্ঞাপনের বদলে এর পেছনে টাকা খরচা করলে অনেক ভালো প্রার্থী পেতেন৷”


জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি সম্পর্কেও এদিন দুই কর্মসূচি থেকে জনসাধারণকে আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৭০ হাজার ভোট ব্যবধানের লক্ষমাত্রা পাড় করতে হবে এবং ডায়মন্ড হারবারের সাতটি বিধানসভার মধ্যে বিষ্ণুপুরকে এক নম্বরে থাকতে হবে৷” পাশাপাশি তাঁর বার্তা, “ডায়মন্ড হারবারে শেষ দফায় ভোট কারণ বাংলায় সর্বাধিক মার্জিন এখান থেকে হবে এবং বিজেপির কফিনে শেষ পেরেকটাও এই ডায়মন্ড হারবারের মানুষ গণতান্ত্রিক ভাবে পুঁতবে৷” ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়েও মঙ্গলবার্তা অভিষেকের৷ যুবরাজ বলেন, “রেমালের ফলে যাঁদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছেন আগামী সাতদিন ধরে সার্ভে চলবে তারপর আগামী পনেরো দিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণ পৌঁছে যাবে৷” নিজ কার্যের খতিয়ান তুলে বলেন, “রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে এই জেলায় একাধিক বাড়ি, চাষযোগ্য জমি নষ্ট হয়েছে, কোথাও মানুষ আহত হয়েছেন আবার কোথাও বিদু্যৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে৷ একটা বিজেপি নেতাকে দেখেছেন পাশে দাঁড়াতে? আমি কাল আমতলায় এসে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছি৷ বিষ্ণুপুরের একাধিক রিলিফ ক্যাম্পে গিয়ে পরিস্থিতির তদারকি করেছি৷ রেমালের কারণে মহেশতলার ৩৩ নং ওয়ার্ডে বিদু্যৎপৃষ্ট হয়ে একজন মারা গেছেন৷ দু’ঘন্টার মধ্যে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বলেছি সব দায়দায়িত্ব আমার কাঁধে তুলে নিলাম৷” উল্লেখ্য, এদিনের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুর বিধানসভার বিধায়ক দিলীপ মন্ডল, বিষ্ণুপুর এক নম্বর ব্লকের সভাপতি পলাশ কর্মকার, ডায়মন্ড হারবার-যাদবপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব৷