উত্তরবঙ্গে এইমস হাসপাতালসহ দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ স্থাপন নিয়ে সরব বিরোধী রাজনৈতিক দল

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার, ১৪ এপ্রিল— ভোট আসতেই উত্তরবঙ্গে এইমস হাসপাতাল নিয়ে সরব হল কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে এইমস হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল বেশ কয়েক বছর আগেই৷ কেন্দ্রীয় সরকার তা মঞ্জুর করলে খুশির হাওয়া ছডি়য়ে পডে় গোটা উত্তরবঙ্গ সহ পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান, নিম্ন অসম ও অন্যান্য স্থানে৷ কিন্ত্ত কোনও এক অদৃশ্য কারণে উত্তরবঙ্গের ভাগ্যে বরাদ্দ এইমস হাসপাতাল চলে যায় দক্ষিণবঙ্গের কল্যাণীতে৷ আর এই নিয়েই শুরু হয় রাজনৈতিক চর্চা৷ ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেডে় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার আগে উদয়ন গুহ এই এইমসের জন্য সরব হয়েছিলেন৷ সে সময় শিলিগুডি়তে তিনি বিশাল জমায়েত করে এইমসের দাবি জানিয়েছিলেন৷ দল বদল করে শাসক-শিবিরে যোগদানের পর উদয়ন গুহর মুখে এনিয়ে অবশ্য কোনো কথা শোনা যায়নি রাজনৈতিক স্তরে৷ বিরোধী শক্তিও এতদিন চুপচাপ থেকে ভোটের ময়দানে নামার পর সোচ্চার হয়েছে এইমস হাসপাতাল নিয়ে৷ বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তাদের দাবিদাওয়ার মধ্যে এইমস হাসপাতালকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা প্রাক্তন সাংসদ নৃপেন রায়, আব্দুর রউফ, বিকাশ মণ্ডল থেকে শুরু করে সিপিএমের অনন্ত রায়, তারাপদ বর্মন, শুভ্রালোক দাস, প্রবীর পাল প্রমূখদের কথায় ঘুরে ফিরেই উত্তরবঙ্গে এইমস হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়টি উঠে আসে৷ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী নিতীশ চন্দ্র রায় সহ কংগ্রেস দলের প্রার্থী পিয়া রায় চৌধুরীর মুখেও এইমস হাসপাতাল স্থাপনের জোরালো দাবি জানানো হয়৷

তাদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতার কাছে কল্যাণীতে এই এইমস হাসপাতালকে চক্রান্ত করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ প্রাক্তন সংসদ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নৃপেন রায় বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গের মাটিকে নাকি ভালোবাসেন৷ উত্তরবঙ্গের মানুষকে নাকি তিনি ভালোবাসেন৷ নৃপেন রায়ের প্রশ্ন, এটাই কি উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালবাসার নমুনা৷ বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নৃপেন রায় বলেন, দিনহাটার মত কোচবিহার জেলার বৃহত্তম মহকুমায় একটি মাত্র কলেজ৷ এখানে দ্বিতীয় কলেজের জন্য অনেক দাবি দাওয়ার পর রাজ্য মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় কলেজ স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদন পায়৷ সেই খবর রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, উদয়ন গুহ সহ কোচবিহার জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা বরাই করে প্রচার‌ও করেন৷ তার কিছুদিন পর হঠাৎ অদৃশ্য কারণে উত্তরবঙ্গ দরদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে ভাষণের মাঝে দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ স্থাপনের বিষয়টি নাকচ করে দেন৷ দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ স্থাপন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পরও কি করে মুখ্যমন্ত্রী তা বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন তা নিয়ে তারা জোর প্রশ্ন তোলেন৷ দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ স্থাপন না হওয়ায় প্রায় হাজার দশেক ছাত্রছাত্রীকে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয় একমাত্র কলেজে বলে অভিযোগ করেন বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ৷ অনুরূপভাবে এইমস হাসপাতাল না হওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গের মানুষকে কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতে ছুটতে হয় ভিন্ রাজ্যে৷ যেমন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরিব খেটে খাওয়া মানুষকে ছুটতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোজগারের আশায়৷ পরিযায়ী এইসব শ্রমিকদের ভোট এলেই ফিরিয়ে আনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস৷ তৃণমূল কংগ্রেস দলের ভোট বাক্স ভরাতে এদেরকে নিয়ে আসা হয় দূর দূর রাজ্য থেকে৷ ভোট গেলে এদের খোঁজ রাখেনা শাসক শিবির৷ তাদেরই বক্তব্যে উঠে আসে দিনহাটায় বছর দুয়েক ধরে বন্ধ থাকা কমল গুহর হাতে গড়া মহিলা শারীরিক শিক্ষা শিক্ষণ কলেজের কথা৷ এই কলেজটি বন্ধ থাকার ফলে প্রতিবছর শ’খানেক ছাত্রী শারীর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং পরবর্তীকালে কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলছে না তাদের৷

জাতীয় কংগ্রেসের নেতারাও সরব হয়েছেন কোচবিহার জেলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে৷ কংগ্রেস দলের প্রার্থী পিয়া রায় চৌধুরী, কমল দাশগুপ্ত, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ডা: মোঃ ফজলে হকের ছেলে আজিজুল হক, আইনজীবী হরিহর রায় সিংহ প্রমুখের মুখেও এইমসের কথা উঠে আসে৷ উত্তরবঙ্গে এইমস হাসপাতাল স্থাপন হলে এতদঅঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন ঘটতো বলে তারা মনে করেন৷ সাধারণ ও গরীব মানুষকে ছুটতে হতো না ভিন্ন রাজ্যে৷ তাদের অভিযোগ, কি এমন হলো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ থেকে এইমস হাসপাতালকে তুলে নিয়ে গেলেন কল্যাণীতে৷ এভাবে উত্তরবঙ্গের মানুষকে ভালোবাসা যায় কিনা তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন৷