• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

নিশীথের গড়ে বিজেপির ধস! কোচবিহারে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের রাশ চলে যাচ্ছে তৃণমূলের হাতে

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার – তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল নিশীথের গড়। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা সময়‌ও পার হয়নি। এরই মধ্যে বিজেপি দলের অধীনে থাকা দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা ও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন একটি এবং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন দুইটি গ্রাম পঞ্চায়েত

সুভাষ মন্ডল, কোচবিহার – তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল নিশীথের গড়। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা সময়‌ও পার হয়নি। এরই মধ্যে বিজেপি দলের অধীনে থাকা দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা ও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন একটি এবং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন দুইটি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও মাথাভাঙ্গা মহকুমার পারডুবি ও নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত‌ও তৃণমূল কংগ্রেস দখল নিয়েছে। পারডুবি ও নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ভেটাগুড়ি ১ নং এবং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ভেটাগুড়ি ২ নং ও মাতালহাট গ্রামপঞ্চায়েত এতদিন ছিল বিজেপির দখলে। লোকসভার ভোট মিটতে না মিটতেই রাতারাতি রং বদলে গেল তার। এর ফলে দিনহাটা ও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মোট ৩৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত‌ই বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ল।

এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দলের প্রার্থী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের পরাজয়ের পর বিজেপি দলের অধীনে থাকা তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধস নামে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উপ-প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য পঞ্চায়েত সদস্যরা কাল বিলম্ব না করে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ঝান্ডা হাতে তুলে নেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের কার্যালয় বলে পরিচিত দিনহাটার ‘সুভাষ ভবন’-এ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। এছাড়া, বিজেপি শাসিত মাথাভাঙ্গা মহকুমার পারডুবি ও নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাথাভাঙ্গার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এ সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেস দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, জেলায় ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল মোট ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। শুক্রবার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেস দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাকি রইল আর উনিশটি গ্রাম পঞ্চায়েত। জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে এবং উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রধান ও সদস্যরা খুব শীঘ্রই তৃণমূল কংগ্রেস দলে নাম লেখাবেন বলে তিনি আশা করেন।

এবিষয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতে লোকসভা ভোটের নির্বাচনী ফলাফলের পর এমন কী ঘটল, যে ফল বের হওয়ার তিন দিনের মাথাতেই দল পরিবর্তন করতে হল প্রধান ও উপপ্রধানসহ পঞ্চায়েত সদস্যদের। তাঁদের প্রশ্ন, এ রাজ্যে শাসক বিরোধী হয়েও গত কয়েক বছর তাঁরা বিজেপি দল ও নেতৃত্বের নির্দেশ মতো গ্রাম পঞ্চায়েত চালিয়েছেন। শুধুমাত্র লোকসভা নির্বাচনে নিশীথ প্রামাণিকের পরাজয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দল পরিবর্তন করতে হল কেন? নিশীথের অনুপস্থিতিতে তাঁরা কি কোনও রাজনৈতিক চাপের আঁচ আগে থেকেই অনুমান করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে আসার পর গত কয়েক বছর ভেটাগুড়ি ও মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েত হয়ে উঠেছিল বিজেপি দলের দুর্গ। কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকাতেও তার প্রভাব ক্রমশ বিস্তার লাভ করে। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিনহাটা ও সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেস দখল নিলেও উল্লিখিত তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের রাশ চলে যায় বিজেপির দখলে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের প্রভাব ও প্রতাপের কারণেই মূলত ওই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে যায়। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মাথাব্যথার শুরু এখান থেকেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সম্ভবত রাজনৈতিক বৃত্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ভেটাগুড়ি মাথাব্যথার কারণ। তাই হয়তো তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে উপর্যুপরি রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হয় ভেটাগুড়ির মাটিতে। নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ির নাকের ডগায় বসে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব অবস্থান-বিক্ষোভ করে। অভিযোগ, আর পাল্টা অভিযোগে মাঝে মধ্যেই অশান্ত হয়ে ওঠে দিনহাটা ও কোচবিহার সড়কের ওপর ভেটাগুড়ি বন্দর এলাকা। কারণে-অকারণে এই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দোকানপাট, হাট বাজার এবং এমনকি এই পথে চলাচলকারী নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তিও ছিল যথেষ্ট। এছাড়া ভেটাগুড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম এলাকাতে মানুষের শান্তিও যথেষ্ট বিঘ্নিত হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই পরিসরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির শাসন ক্ষমতা বিরোধী শিবির থেকে শাসক শিবিরে চলে যাওয়ার পর নিশীথের গড়ে শান্তি কতটা ফিরে আসে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।