নবাগত মধুপর্ণাকে রাজনৈতিক ‘হাতেখড়ি’ রথীন, নারায়ণের 

নিজস্ব প্রতিনিধি : একটা সময়ে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে। ২০১৬ সাল থেকে বাগদা বিধানসভায় ফুটতে পারেনি ঘাসফুল। বরং সংশ্লিষ্ট বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রটিও তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার উপনির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। আগামী ১০ জুলাই রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ ও মানিকতলার সঙ্গে বাগদা বিধানসভাতে হবে উপনির্বাচন। বাগদার এক ছটাক জমিও ছাড়তে রাজি নয় বাংলার শাসকদল, দফায় দফায় রাজনৈতিক কর্মসূচি করে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। বহু জল্পনায় ইতি টেনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির বধূ মমতাবালা ঠাকুরের কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুরকে। মাত্র ২৫ বছর বয়সী মধুপর্ণা রাজনীতিতে নবাগত, রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ না বুঝলেও এই উপনির্বাচনে লড়াই যে অত্যন্ত কঠিন হতে চলেছে, তা অজানা নয় মধুপর্ণার। এই নবাগতাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসী, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, ব্যারাকপুরের নবনির্বাচিত সাংসদ পার্থ ভৌমিক, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী-সহ জেলার তাবড় নেতৃত্বরা। সাথে রয়েছেন মধুপর্ণার মা মমতাবালা ঠাকুরও। তাঁরাই যৌথভাবে প্রার্থী মধুপর্ণাকে রাজনৈতিক ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রটিকে পুনরুদ্ধার করতে চান।
বাগদা উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করে শনিবার হেলেঞ্চার নেতাজি শতবার্ষিকী অডিটোরিয়ামে কর্মিসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। দলীয় নির্দেশে এই সভাতেই একসাথে উপস্থিত হয়েছিলেন সুব্রত বকসী, মমতাবালা ঠাকুর, রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, বিশ্বজিৎ দাস, নারায়ণ গোস্বামীরা। এছাড়াও ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, ছাত্র পরিষদের নেতা লিংকন মল্লিক। বুথ এবং অঞ্চল ভিত্তিক দলের পদাধিকারী এবং কর্মীরাও এদিন হাজির ছিলেন। বাগদার ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে দখলে রয়েছে তৃণমূলের। বাকি তিনটি বর্তমানে বিজেপির। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বাগদায় বিজেপির ফল ভালো হয়েছে। মনোনয়ন জমা দিয়ে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মধুপর্ণার দাবি করেছিলেন, বিপুল ব্যবধানে এই আসন জিতে ‘দিদি’কে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে এই আসনটি উপহার দেবেন। দলীয় ছোটোখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন করে এবার সেই লক্ষ্যেই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামীরা। বাগদা উপনির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামী দের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে হারিয়ে কংগ্রেসের দুলাল চন্দ্র বর জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তারপর ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জয়ী হয়েছিলেন। এবারের লোকসভা ভোটেও বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ২০ হাজার ৬১৪ ভোটে পিছিয়েছিল। তাই এই কেন্দ্র ফিরে পেতে এবার মরিয়া শাসকদল। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দলের এই সুপ্ত বাসনাকেই বাস্তবায়িত করতে চান রথীন, নারায়ণরা।
 উল্লেখ্য, বাগদায় যে তিনটি পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল এই হেলেঞ্চা। সেই হেলেঞ্চাতেই কর্মীসভা করে দলীয় নেতা, কর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিলেন নারায়ণ গোস্বামীরা। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে দলীয় নেতা, কর্মীদের যৌথভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান তাঁরা। দলের অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য যেন ভোটের লড়াইয়ে বাধা সৃষ্টি না করে, তার জন্য সুব্রত বকসী, রথীন ঘোষরা এদিন দলীয় কর্মীদের পরামর্শ দেন। এদিনের কর্মীসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নরমে গরমে কর্মীদের বার্তা দিয়ে সুব্রত বকসী বলেন, “ছোটখাটো অভিমান করে যারা বসে আছেন, তাঁরা বাগদায় তৃণমূলকে জয়লাভ করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দিন। দলের একাংশ কর্মীদের নিয়ে কোনো অভিযোগ, অভিমান থাকলে আমাদের অফিসে এসে জানান। নিশ্চিত ভাবে সমাধান করব। অভিমান নিয়ে বসে থাকবেন না।” এদিন রথীন ঘোষ বলেন, “বাগদা উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিধায়ক হলে এলাকার উন্নয়নে গতি আসবে। এই বিষয়টা সাধারণ ভোটারদের কাছে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। রাজ্য সরকারের সামাজিক উন্নয়ন জনসাধারণের নিকট তুলে ধরতে হবে। দলের সকলে মিলে একজোট হয়ে লড়াই করে বাগদার রংকে সবুজ করে তুলব।”