নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন্দ্রের মোদি সরকারের পাশাপাশি ভাবাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরকম অবস্থায় সেদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রাশাসনিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছে এরাজ্যের মমতা সরকার। রাজ্যের কেউ সেদেশে আটকে রয়েছেন কিনা সেবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে প্রশাসন। যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রতি মূহুর্তে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন। এজন্য রাজ্যের তরফে রেসিডেন্সিয়াল কমিশনার প্রতি মুহুর্তে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
ইতিমধ্যে প্রায় ৯৯৮ জন পড়ুয়া ভারতে ফিরে এসেছেন। যার মধ্যে ৭৭৮ জন পড়ুয়া ফিরেছেন বিভিন্ন স্থল সীমান্ত দিয়ে। বাকি ২০০ পড়ুয়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বিমান ধরে দেশে ফিরেছেন। এখনও সেদেশে আটকে রয়েছেন প্রায় চার হাজার পড়ুয়া। ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় সহকারী হাইকমিশনগুলি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ৪০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে। এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যেসব পড়ুয়া ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ডাক্তারি পড়ুয়া। এঁদের অনেকে মেঘালয়, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দা।
জানা গিয়েছে, এইসব পড়ুয়ারা প্রথমে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন, তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন বিষয়টা দু-এক দিনে স্বাভাবিক হয়ে যায় কিনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা আর ঝুঁকি নিতে চাননি। দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। শুধুমাত্র কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরেছেন ৩৩ জন ছাত্রছাত্রী। তাঁরা সকলেই বাংলাদেশের রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া বলে জানা গিয়েছে। যার মধ্যে ৬ জন ভারতীয়, ১৮ জন ভুটানের এবং ৯জন নেপালের ছাত্রছাত্রী। এছাড়া শুক্রবার আগরতলার কাছে আখুরা, মেঘালয়ের ডাউকি আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর দিয়েও বহু পড়ুয়া ভারতে প্রবেশ করেছেন।
হরিয়ানা থেকে চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া আমির নামে এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জানিয়েছেন, “গত কয়েকদিন ধরেই ক্রমশ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। ইন্টারনেট কাজ করছিল না, মোবাইল পরিষেবাও বন্ধ। চোখের সামনে একের পর এক মানুষকে মরতে দেখে আর ঝুঁকি নিতে পারিনি। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কলেজের কয়েকজন ছাত্র দেশে ফিরে আসি। ফেরার জন্য বিমানের টিকিট না পেলেও ঘুরপথে আগরতলা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন।” আমিরের কলেজের আর এক সহপাঠী ফয়েজ আব্দুল্লাহ খান বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বুধবার থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। তখন কলেজের অধ্যক্ষ সম্মতি দিয়ে বলেন, নিরাপত্তাহীন মনে হলে দেশে ফিরে যেতে পারো।
ফিরে আসা পড়ুয়ারা তাঁদের ফেরার অভিজ্ঞতা বলার সময় জানান, তাঁরা গাড়িতে করে দীর্ঘ পাঁচ ছয় ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করে সীমান্তে পৌঁছন। সেসময় বাংলাদেশ প্রশাসনের নিরাপত্তা বাহিনীর এসকর্ট করে সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে যান।
উল্লেখ্য, গতকাল রাত পর্যন্ত ১০৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। শনিবার আরও বহু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসিনা সরকার দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছে। রাজপথে নামানো হয়েছে সেনা ট্যাঙ্কার। দেশজুড়ে যেন এক যুদ্ধ পরিস্থিতি। ঢাকা শহর জুড়ে দাঙ্গা দমনকারী পুলিশ ও সেনা টহল চলছে। দাঙ্গাকারীদের দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত কিছুক্ষণের জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়েছিল। আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কার্ফু লাগু থাকবে। তারপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।