দিল্লির কুর্সিতে ফের ‘এনডিএ’, শক্তিশালী বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’

এনডিএ: ২৯৩, ইন্ডিয়া: ২৩২, অন্যান্য ১৮

বিজেপি: ২৪১ , কংগ্রেস: ৯৯

তৃণমূল: ২৯, বিজেপি: ১২, কংগ্রেস ১


দিল্লি,৪ জুন: ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৪২টি লোকসভা আসনের ভোটগণনা চলছে আজ৷ এর মধ্যে একমাত্র বাকি থাকছে গুজরাতের সুরাত কেন্দ্র৷ কারণ এই কেন্দ্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবেই জয়ী হয়ে গিয়েছে বিজেপি৷ সাত দফা ভোট শেষে সিংহভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৩০০ বা তার বেশি আসন নিয়ে ফের দিল্লির মসনদে ফিরতে চলেছে৷ যদিও এবার বিজেপি’র ডাক ছিল ‘ইস বার ৪০০ পার, ফির মোদি সরকার’৷ তবে চাণক্য ও অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া-ইন্ডিয়া টুডে সমীক্ষাতে এনডিএ ৪১৫ ও ৪০০-র বেশি আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল৷ যদিও বিরোধীদের তরফ থেকে অভিযোগ এসব ‘মোদি-মিডিয়া’র কারসাজি৷ রাহুল গান্ধি থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেজস্বী যাদবদের মতো বিজেপি-বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা এই সমীক্ষা গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ উল্টে কাউন্টিং এজেন্টদের আজ গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গণনা কেন্দ্রে ধৈর্য সহকারে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে৷ এর আগে গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব প্রায় মিলে গেলেও ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এধরনের সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল খঁুজে পাওয়া যায়নি৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব কতটা মিলবে তা জানা যাবে আজ৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জয়ী হয়েছিল ৩৫৩টি আসনে৷ তার মধ্যে একা বিজেপি পেয়েছিল ৩০৩টি আসন৷ এবার বিজেপি একাই ৩৭০টি আসনে জয়ী হওয়ার জন্য মাঠে নামে৷ এনডিএ-র আসন ৪০০ পার করে দেশের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য মোদি-শাহের দল রীতমতো মরিয়া হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামে৷ তাঁদের সেই পরিশ্রম ব্যর্থ হল।

গত লোকসভা ভোটে বিজেপি কর্ণাটকের ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি আসন জিতেছিল৷ এবারেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে বিজেপি শিবিরের দাবি ছিল৷ তবে এবার সেই আসনগুলির অনেকগুলিতে পিছিয়ে বিজেপি। মাত্র ১৮টি আসনে এগিয়ে এমডিএ, অন্যদিকে কংগ্রেস এগিয়ে ১০টি আসনে। এবার দক্ষিণ ভারতের বিজেপি তামিলনাড়ু এবং কেরলে খাতা খুলতে পারে বলে সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যে বিধানসভায় ধরাশায়ী হল বিজেডি। সেখানে বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে এক্সিট পোলের সমীক্ষা নস্যাৎ করে দিয়ে বিজেপির ভোটে ধস নামিয়ে দিল লক্ষ্মীর ভান্ডার। প্রায় পুরো রাজ্যটা সবুজ হয়ে গেছে। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রাজ্যে ৩১টি আসনে এগিয়ে ঘাসফুল শিবির৷ অন্যদিকে বিজেপি মাত্র ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে আরও ১টি আসনে।

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি গত লোকসভা ভোটে ২-১টি আসন ছাড়া সব আসনেই জয় পেয়েছিল৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয়না৷ হরিয়ানায় বিজেপির আসন গত বারের তুলনায় কমতে পারে৷ দিল্লিতে ৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি’র দখলে ৭টি আসন যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ যদিও পাঞ্জাবে বিজেপি’র ভালো ফল হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি ভালো ফল করতে পারে৷ এ রাজ্যে কমতে পারে কংগ্রেসের আসন৷ নরেন্দ্র মোদি বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল দেখে দাবি করেছেন, মানুষ কাজের খতিয়ান দেখেই বিজেপি ও এনডিএকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন৷ যদিও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদির এই দাবি মানতে নারাজ৷ তবে এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা প্রকাশ করেছেন৷

এবারের নির্বাচনে শুরুতে দেশজুড়ে সেভাবে কোথাও বিজেপি ঝড় দেখা যায়নি৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আদৌ ফিরবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল বিজেপি শিবিরেই৷ কিন্ত্ত সপ্তম দফার ভোটের শেষে বুথফেরত সমীক্ষার সিংহভাগই মোদি সরকারের ওপরই দেশের আমজনতা ভরসা রাখছেন বলে জানানোয় রীতিমতো সেলিব্রেশনের মুডে রয়েছে দলের নেতা-কর্মীরা৷ অন্যদিকে রাহুল গান্ধি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইন্ডিয়া ব্লক ২৯৫টি আসনে জয়ী হতে চলেছে৷

এদিকে সমীক্ষার ফলে ধরা পড়েছে ওড়িশাতেও বিজেপির জয়জয়কার৷ নবীন পট্টনায়েকের দল রীতিমতো ব্যাকফুটে চলেছে বিজেপির কাছে৷ এই রাজ্যের ২১টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেডি মাত্র ২টি আসনে জয়লাভ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷