নবীনের সম্ভাব্য তামিল ‘উত্তরসূরি’ ওড়িশার রাজনীতির মূল ধারক

ভুবনেশ্বর, ৯ মে – বিজু জনতা দলের সামগ্রিক প্রচারে নবীনের পাশে প্রাক্তন আমলার ছবি৷ চাকরি থেকে আগাম অবসর নিয়ে বিজেডিতে যোগ দিয়েছেন ওড়িশা ক্যাডারের এই আইএএস অফিসার৷ কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নবীনের প্রধান সচিব৷ পেশাদার রাজনীতিকদের মতো আমজনতার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ছবি প্রতিটি ফ্রেমে৷ অথচ ওড়িশার ভোটে তিনি প্রার্থী নন৷

বিজু জনতা দলের ওয়েবসাইটের উপরে বাঁ দিকে প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বিজু পট্টনায়েকের একফালি ছবি৷ ডান দিকে হাসিমুখে ছবি দলের বর্তমান সভাপতি তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের৷ ওয়েবসাইটের বাকি জায়গা জুডে় বিকে পান্ডিয়ান৷ সেই পান্ডিয়ানের রাজনীতিতে যোগদানের সন্ধিক্ষণে জোড়া শঙ্খে ফুঁ দেওয়ার ডাক দিয়ে দল ও সরকারের এই উত্তরসূরিকে নিয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছেন নবীন৷ শঙ্খ হল বিজু জনতা দলের নির্বাচনী প্রতীক৷

১৩ মে থেকে ওড়িশায় চার দফা ভোট শুরু হতে চলেছে৷ বিগত কয়েকবারের মতো এবারও লোকসভার সঙ্গে রাজ্য বিধানসভারও ভোট হচ্ছে৷ এই দুই লড়াইয়ে বিজেডির প্রচারের প্রধান মুখ এবার আগাম অবসর নিয়ে রাজনীতিতে আসা এই অফিসার৷ এতদিন যে সব জায়গায় দলের জন্য হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটতেন নবীন, বয়স এবং নানা রোগে কাবু মুখ্যমন্ত্রী এবার সেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন পান্ডিয়ানের উপর৷ দায়িত্ব পেয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন বিজেডির এই নেতা৷ দ্রুততার সঙ্গে অর্জন করেছেন তুমুল জনপ্রিয়তা৷ লোকের মুখে মুখে ছডি়য়ে পডে়ছে তাঁর সবার কথা মন দিয়ে শোনার বিশেষ গুণ৷ পান্ডিয়ান বলেন কম, শোনেন বেশি৷ চাকরিতে থাকাকালীন তাঁর সম্পর্কে বলা হত, তিনি এমন একজন দায়িত্বপূর্ণ অফিসার যাঁকে কোনও ব্যাপারে তাগাদা দিতে হয় না৷


নবীনের জোড়া শঙ্খে ফুঁ দেওয়ার আহ্বানকে সরকারিভাবে দলের তরফে বলা হচ্ছে, বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়ার মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সভাপতি ওই কথা বলেছেন৷ যদিও বিজেডির অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের সরকার গড়ার স্লোগান মোটেই নতুন নয়৷ আর ওড়িশায় লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার ভোটও এবারই প্রথম একসঙ্গে হচ্ছে না৷ এর আগে চারবার জোড়া ভোট দিয়েছেন রাজ্যবাসী৷ আর সেই কারণেই বিজু জনতা দলের অনেকেই মনে করছেন জোড়া শঙ্খ বলতে নবীন আসলে নিজেকে এবং পান্ডিয়ানকে বুঝিয়েছেন৷ অর্থাৎ দলকে বার্তা দিয়েছেন পান্ডিয়ানকেই তিনি উত্তরসূরি করার পক্ষে৷

লক্ষ্য করার যে, বিজেডির প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি এবারের নির্বাচনে নবীনের থেকেও বেশি আক্রমণ শানাচ্ছে পান্ডিয়ানের উদ্দেশে৷ গেরুয়া শিবিরের আক্রমণের প্রধান কথাই হল, ‘বহিরাগত’ পান্ডিয়ানই ওড়িশার সব সমস্যার মূলে৷

তাঁকে ‘নবীনের ক্লার্ক’ বলে কটাক্ষ করে পদ্ম শিবির অভিযোগ করছে, পান্ডিয়ানের আপত্তিতেই বিজেপি-বিজেডি বোঝাপড়া শেষ পর্যায়ে এসেও বানচাল হয়ে যায়৷ প্রতু্যত্তরে পান্ডিয়ান বলেন, বিজেপি আমাকে ‘নবীনবাবুর ক্লার্ক’ বলে কটাক্ষ করে থাকে৷ নবীন পট্টনায়েকের মতো ওজনদার নেতার দল বিজেডি৷ অন্যদিকে বিশ্বের এক নম্বর দল বলে দাবি করা বিজেপির মধ্যে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে কী করে আমার মতো একজন ক্লার্ক বানচাল করতে পারে ?

সরকারি আমলার চাকরি থেকে আগাম অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া এই অফিসারকে বিজেপি ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করে ওড়িশাবাসীর মন ভোলাতে চাইছে৷ কারণ, পান্ডিয়ান জন্ম সূত্রে তামিল৷ কাজের সূত্রে তিনি বছর কুডি় আগে ওড়িশায় আসেন৷ তাঁর স্ত্রীও ওড়িশা ক্যাডারের আইএএস অফিসার৷ বিজেপি প্রচার করছে অসুস্থ নবীনবাবু তামিল পান্ডিয়ানকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে বেছে নেবেন৷ দলে এখন তিনিই শেষ কথা৷ নবীনের আস্থাভাজন পান্ডিয়ান ‘উত্তরসূরি’ প্রসঙ্গ এডি়য়ে বলছেন, ‘ওড়িশা আমার কর্মভূমি, প্রভু জগন্নাথ আমার দেবতা আর নবীনবাবু হলেন গুরু৷ ’

ক্ষমতায় থাকলে নবীন এখনই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন না এটা স্পষ্ট৷ কিন্ত্ত ভবিষ্যতে তিনি যদি মুখ্যমন্ত্রীর আসন পান্ডিয়ানের দিকে এগিয়ে দেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই এমনটাই মনে করছেন বিজেডির নেতাদের একাংশ এবং ওড়িশার মানুষ৷ সেক্ষেত্রে এই তামিল অফিসারই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি জন্মসূত্রে সেই রাজ্যের বাসিন্দা নন এবং সেখানকার প্রধান ভাষা তাঁর মাতৃভাষা নয়৷ যদিও নবীন এবং অনেক ওডি়য়াভাষীর তুলনায় পান্ডিয়ান ওই ভাষাটি যথেষ্ট ভাল রপ্ত করেছেন৷ ওড়িশার ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতির বুঝদার জন্মসূত্রে তামিল এই অবসরপ্রাপ্ত আমলা৷