মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির কংগ্রেস, তবে গরহাজির তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিনিধি– তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসলেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। তবে এই অনুষ্ঠানে কোন দল থাকবে এবং কোন দল থাকবে না, তা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল জল্পনা। তবে জল্পনা বেশি দূর গড়ানোর পূর্বেই রবিবার কংগ্রেসের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, দলের তরফে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। শনিবারই খড়্গের কাছে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণপত্র আসে। সেই মতো খড়্গে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। তবে কংগ্রেস শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র তৃতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস শপথে উপস্থিত ছিল না।

তৃণমূল কেন ছিল না অনুষ্ঠানে, শনিবারই এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। শনিবারের দুপুরে কালীঘাটে ভোট পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত সাংসদ, রাজ্যসভার দলীয় সাংসদ, জেলা সভাপতিগণ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় সাফ জানান, “(আমন্ত্রণ) আসেওনি। যাবও না। অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে যে সরকার তৈরি করছে, তাকে আমি শুভেচ্ছা জানাতে পারছি না! দেশের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি যে, দেশের মানুষ তাঁকে ভোট দেয়নি।” অর্থাৎ মমতার বক্তব্য অনুযায়ী, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ আসেনি তাঁর কাছে (শনিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত)। এলেও তিনি যেতেন না।

তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে পাঠানো হয় আমন্ত্রণপত্র, তা সত্ত্বেও তৃণমূলের তরফ থেকে কেউই উপস্থিত ছিলেন না অনুষ্ঠানে। এই বিষয়টি রবিবার স্পষ্ট করেন কলকাতা উত্তরের নবনির্বাচিত সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শনিবার রাতে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু আমার দলের তরফে ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”


কংগ্রেস সূত্রে খবর, সৌজন্যতার খাতিরেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য শরিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই খড়্গের উপস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। প্রথমে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে জয়রাম রমেশ এবং কে সি বেণুগোপাল জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের কাছে কোনও আমন্ত্রণপত্র আসেনি। যদি আমন্ত্রণ মেলে, সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া ব্লক সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অন্যান্য বিরোধী দলেরও কেউ কেউ আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁরাও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রবিবাসরীয় সকালে শপথের পূর্বে রাজঘাটে গিয়ে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকেও। ওয়্যার মেমোরিয়ালে গিয়ে শহিদদের স্মরণও করেছেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন মোদী। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। মোদীর পাশাপাশি তাঁর পরিষদীয় সদস্যেরাও শপথ গ্রহণ করেন রবিবার সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু-সহ একাধিক রাষ্ট্রনেতা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৪টি আসন। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ফলে কিছুটা চাপ কাটিয়ে উঠে রবিবার নতুন সরকার গড়ে এনডিএ।