বুথ ফেরত সমীক্ষায় অনেক এগিয়ে এনডিএ, পিছিয়ে ইন্ডিয়া
নিজস্ব প্রতিনিধি— বুথফেরত সমীক্ষার আভাস সবসময় মেলে, এমনটা কিন্ত্ত নয়৷ লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে ৩০০-র অনেক বেশি আসন পেয়ে ফের এনডিএ নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসছে৷ ৪০০-র বেশি আসনের টার্গেট নিয়ে এবার লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছিল বিজেপি৷ যদিও কোনও বুথফেরত সমীক্ষা ৪০০ কিংবা তার বেশি আসন বিজেপিকে দিচ্ছে না৷ তবে, সিংহভাগ বুথফেরত সমীক্ষা নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তা একপ্রকার পাকা৷ স্বাভাবিকভাবে বুথফেরত সমীক্ষায় গেরুয়ার দাপট বাড়ার আভাস পাওয়া গেলেও স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে মোদির৷ কারণ ৪০০ পারের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে৷
যদিও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেছেন কেন্দ্রে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে জোট এগিয়ে৷ ২৯৫টি আসন আসবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষে৷ কংগ্রেস সভাপতি এই দাবি করলেও, বুথফেরত সমীক্ষায় জোটের ক্ষমতায় আসার কোনও ইঙ্গিতই পাওয়া যায়নি৷ বিজেপি যখন সর্বোচ্চ ৩৬২ থেকে ৩৯২টি আসন পেতে পারে এমন আভাস দেওয়া হচ্ছে, সেই সময় সবচেয়ে বেশি ‘ইন্ডিয়া’ জোট আসন পেতে পারে ২০১টি৷
দক্ষিণ ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ ও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন এক্সিট পোল থেকে৷ কেরল ও তামিলনাড়ুতে বিজেপি বিরোধী দলগুলির ভালো ফল করার সম্ভাবনা৷ যদিও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিজেপির ফল যথেষ্ট ভালো হবে৷ তামিলনাড়ু থেকে মোট ৩৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ১ থেকে ৩টি আসন৷ কংগ্রেস পেতে পারে ৮ থেকে ১১টি৷ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের খাতায় আসতে পারে ভালো সংখ্যক আসন৷ কেরলে ২০টি লোকসভা আসন রয়েছে৷ তার মধ্যে কংগ্রেস একাই পেতে পারে ১২ থেকে ১৫টি আসন৷ এলডিএফ পেতে পারে ২-৫টি আসন৷ এনডিএ পেতে পারে ১ থেকে ৩টি আসন৷
বাংলায় বিজেপির ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে৷ যদিও তৃণমূলের দাবি, ৩০টির বেশি আসন আসবে এই রাজ্যের শাসক দলের ঝুলিতে৷ প্রায় ১৫ বছর পর এ রাজ্যে শাসক দলের ভোট কমছে বলে বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷ তবে, অতীতে এমন অনেক নির্বাচনে দেখা গিয়েছে বিশেষত বাংলার ক্ষেত্রে বুথফেরত সমীক্ষার হিসেব মেলেনি৷ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন৷ গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্য ভোটের পরিমাণ ছিল ৪০.৬ শতাংশ৷ তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন৷ সেই সময় তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল ৪৩.৭ শতাংশ ভোট৷ কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন৷ বামেরা একটি আসনও পায়নি৷ এবার বাম ও কংগ্রেসের ভোটের হার খুব একটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই৷ উল্টোদিকে তৃণমূলের ভোট কিছুটা হলেও কমতে পারে৷ যদিও এ ধরনের সমীক্ষাকে খুব একটা আমল দিচ্ছে না রাজ্যের শাসক দল৷ কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার আমজনতার জন্য যে ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়েছে, তাতে করে রাজ্যের শাসক দলের ভোটবাক্সে বসন্ত আসবে, এমনটাই দাবি করা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে৷
অন্যদিকে দিল্লিতে আম আদমি পার্টি ধুয়েমুছে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশে বিজেপি ভালো ফল করতে চলেছে৷
উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেতে পারে ৬৯ থেকে ৭৪টি আসন৷ ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ৬ থেকে ১১টি৷ কর্নাটকে বিজেপি পেতে পারে ২০ থেকে ২২টি আসন, কংগ্রেস ৩ থেকে ৫টি৷
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে বিজেপি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল ভালো ফল করার জন্য৷ সেই চেষ্টা ফলপ্রসু হয়েছে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ গুজরাতে ১৯৯৫ সাল থেকে বিজেপির সরকার রয়েছে৷ কংগ্রেস বার বারই ভরাডুবির মধ্যে পড়েছে এই রাজ্যে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রাজ্যেরই বাসিন্দা৷ একসময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোদি৷ সেই গুজরাত ধরে রাখাটাই এবার বিজেপির কাছে বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছিল৷
২০১৪ সালে ২৬টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসনই পেয়েছিল বিজেপি৷ সেই সময় বিজেপির প্রাপ্য ভোট ছিল ৫৯.১০ শতাংশ৷ কংগ্রেসের প্রাপ্য ভোট ছিল ৩২.৯০ শতাংশ৷ ২০১৯ সালে বিজেপির ভোট আরও বাড়ে৷ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্য থেকে ২৬টির মধ্যে ২৬টিতেই জয়লাভ করেছিল৷ ২০২২-এ গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ১৭টি৷ এবারে গুজরাতে ভালো ফল করতে চলেছে বিজেপি, এমনই তথ্য উঠে আসছে বুথ ফেরত সমীক্ষায়৷
রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ফল যথেষ্ট ভালো হবে, এমনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ রাজস্থানে ২৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি তথা এনডিএ ১৯টি আসন জিততে পারে, ইন্ডিয়া জোটের ঝুলিতে যেতে পারে ৫টি আসন৷ বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস বলছে, তেলেঙ্গানাতে বিজেপি ভালো ফল করবে৷ তেলেঙ্গানায় মাত্র একটি আসন পেতে পারে কেসিআর-এর দল৷ তেলেঙ্গানায় মোট ১৭টি লোকসভার আসন রয়েছে৷ দক্ষিণের এই রাজ্যে বিজেপির আসন গতবারের তুলনায় বাড়বে৷ স্বাভাবিকভাবে দেশজুড়ে মোদি ম্যাজিকের পাশাপাশি রামমন্দির নির্মাণ এবং তাকে সামনে রেখে ভোটের মেরুকরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের লড়াই ভালোভাবেই নিয়েছে আমজনতা৷