মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবেন না, কেন বারবার বলছেন রাহুল?

পুলক মিত্র

ভোটপর্বের শুরু থেকেই রাহুল গান্ধি বারবার জোরের সঙ্গে বলে আসছেন যে, নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না৷ কংগ্রেসের হিসেব অনুযায়ী, এবার সরকার গড়ার ম্যাজিক নম্বর ২৭২ পেরোতে পারবে না বিজেপি৷ কংগ্রেসের ভোটকৌশলীদের ধারণা, বিজেপি এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে হারতে চলেছে৷ কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলি মহারাষ্ট্র, বিহার উত্তরপ্রদেশ, বিহার, কর্নাটক, রাজস্থান এবং হরিয়ানায় ব্যাপকভাবে হারতে চলেছে৷

অন্যদিকে, দিল্লি, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং আসামেও বেশ কয়েকটি আসন হাতছাড়া হবে বিজেপির৷


আরও একটি মজার বিষয় হল, কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, তেলেঙ্গনায় দুটি আসন বাড়তি পেতে পারে বিজেপি৷ এছাড়া, ওড়িশাতেও বিজেপি একটি আসন বেশি পেতে পারে বলে কংগ্রেসের ধারণা৷ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আমরা মনে করি না যে, বাংলায় বিজেপির আসন এবার বাড়বে৷ ২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি৷ এবার ওরা বড়জোর ১৪-১৫টি আসন পেতে পারে৷ ওড়িশায় বিজেপি ও বিজেডি নেতা কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক চরম তিক্ততায় পৌঁছে গিয়েছে৷ এবার বিজেপিকে নিজের শক্তির জোর দেখাতে চান নবীন পটনায়েক৷’’

কংগ্রেসের ওই নেতার দাবি অনুযায়ী, গোটা দেশে ৫ থেকে ৬টি নতুন আসনে বিজেপি জয়ী হতে পারে৷ কিন্ত্ত বিপুল সংখ্যক আসনে গেরুয়া শিবির হারতে চলেছে৷ অন্তত ৬০-৭০টি আসনে বিজেপি হারবে বলে ওই নেতার দাবি৷

‘‘সেই কারণে রাহুল গান্ধি এবং আমাদের দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলে আসছেন, মোদি এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না৷ ঘটনা হল, প্রতি দফার নির্বাচনে বিজেপি পিছিয়ে পড়ছে এবং শেষ পর্বের ভোটের পর অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারে’’, বললেন ওই নেতা৷

একই ভাবনার শরিক হয়ে কংগ্রেসের আরেক নেতা বললেন, বিহার, কর্নাটক এবং হরিয়ানায় বিজেপি এবার অনেক আসন হারাবে৷ তাঁর মতে, ‘‘মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশে নাটকীয়ভাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে৷ নীচু তলা থেকে যে সব তথ্য আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই ভোটে মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন৷ মহারাষ্ট্রে আমরা দেখছি, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্রছাত্রীরা গ্রুপ তৈরি করে মোদির রাজনীতি ও প্রতিশ্রুতিভঙ্গ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলছেন৷ কিছু কিছু এলাকায় মোদির বিরুদ্ধে স্রোত লক্ষ্য করা গেছে৷’’

অন্যান্য ইসু্যর মধ্যে রয়েছে, উদ্ধব ঠাকরের প্রতি সহানুভূতি, গুজরাতের দুই নেতা মোদি ও অমিত শাহের মহারাষ্ট্র-বিরোধী মনোভাব৷ এছাড়া কংগ্রেস, শিব সেনা ও শরদ পাওয়ারের মিলিত শক্তি বিজেপিকে আরও সমস্যায় ফেলেছে৷ ওই নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, “বিজেপি নেতারাও বলছেন, ৪৮টি আসনে আড়াআড়ি বিভাজন হবে৷ আমাদের স্থানীয় নেতাদের বিশ্বাস, মহা বিকাশ আগাড়ির আসন সংখ্যা এবার ৩০ ছাড়িয়ে যাবে৷ এর অর্থ হল, এনডিএ-র বিপুল পরাজয়৷”

এই নেতা আরও বলেছেন, উত্তরপ্রদেশেও ভালো কিছু আশা করছে কংগ্রেস৷ “আমরা আশা করেছিলাম, বিজেপিকে ৬০-৭০টি আসন পাওয়া থেকে আটকাতে পারব৷ কিন্ত্ত ইন্ডিয়া জোটে মায়াবতীর যোগদানের অনীহা অত্যন্ত হতাশাজনক ছিল৷ কিন্ত্ত হঠাৎই বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে৷ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং অগ্নিবীর এখন বড় ইসু্য হয়ে উঠেছে৷ রামমন্দির পিছনে চলে গিয়েছে৷ বিজেপির সংবিধান পরিবর্তনের বার্তা দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে৷ মায়াবতীর নিষ্ক্রিয়তা এবং ভাইপো আকাশ আনন্দকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় দলিত ভোটাররা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, মায়াবতী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চান না৷”

তিনি বলেন, দলিত এবং তরুণদের মধ্যে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ অগ্নিবীর প্রকল্প এবং জাঠ ও রাজপুত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ রাজস্থানেও কংগ্রেসের পক্ষে সহায়ক হবে৷ “রাজস্থানে আমরা ৬ থেকে ১০টি আসন পেতে পারি৷ উত্তরপ্রদেশে পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটেছে৷ কেউ কেউ বলছেন, আমরা ৪০টি আসনে জিততে পারি৷ তবে হিসেব বলছে, ৩০টি আসনে আমরা জিতছি৷ রামমন্দিরের উন্মাদনা সত্ত্বেও বিজেপির আসন সংখ্যাকে ৫০-এর মধ্যে আটকে রাখতে পারলে, অবশ্যই বড় সাফল্য হবে”, বললেন ওই নেতা৷

কংগ্রেসের দলীয় সূত্র বলছে, কংগ্রেস একা অন্তত ১১৫টি আসনে জয়ী হতে পারে এবং বিরোধী জোটের আসন সংখ্যা ২৫০-এর গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ যদি তা হয়, তবে বিজেপির সঙ্গে থাকা নির্দল প্রার্থী এবং আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন আদায়ের জন্য লড়াই চালাতে হবে৷

অন্য এক নেতা বলেন, “বিজেপি একেবারে পর্যুদস্ত হবে, এমনটা আমরা মনে করছি না৷ ২৩০টির মতো আসন পেলে, ওরা-ও সরকার গড়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবে৷ কিন্ত্ত উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে ওরা যদি খুব খারাপ ফল করে, তবে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে৷ গুজরাতে বিজেপির শক্তিক্ষয়ের ইঙ্গিত মিলেছে৷ আমরা সেখানে আমরা কমপক্ষে তিনটি আসনে জয় আশা করছি৷ লড়াই তীব্র হলেও, আরও দুটি আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস৷ যদি গুজরাতে আমরা ৫টি আসনে জয় পেতে সক্ষম হই, তবে গোটা দেশের ছবি বদলে যাবে৷ ”

কংগ্রেস ইতিমধ্যে প্রকাশ্যেই মোদিকে “বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী” বলতে শুরু করেছে৷ এখন কংগ্রেসের এই হিসেব কতটা মিলবে, তা একমাত্র ৪ জুন জানা যাবে৷ কংগ্রেস যা মনে করছে, ফল হয়তো তার চেয়ে খারাপও হতে পারে৷ কারণ, রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মতো করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অঙ্ক কষে থাকে, যার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই৷

তবে ৪০০-র বেশি আসনে জেতার যে স্লোগান বিজেপি তুলেছিল, তা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে৷ কংগ্রেস নেতা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষা প্রয়োগ থেকেই তা অনুমান করতে পারছেন৷ তাঁর শরীরী ভাষাতেও সেই আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে না৷ উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে নাটকীয় পরিবর্তনই বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে৷