লোকসভার নেতা নির্বাচিত হলেন মোদী, বিকেলেই রাষ্ট্রপতির দরবারে এনডিএ

দিল্লি, ৭ জুন:  আজ, শুক্রবার সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে সংসদীয় বৈঠকে সামিল হল বিজেপি সহ এনডিএ-এর শরিক দলগুলি। জয়ী সাংসদদের নিয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নীতীশকুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু সহ বিজেপি ও অন্যান্য শরিকদলের শীর্ষ নেতারাও। তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব পেশ করেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং। সেই তিন প্রস্তাবকে সমর্থন জানান নীতিন গাদকারি ও অমিত শাহ। বৈঠকে দুই বড় শরিক নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশকুমাররা নতুন সরকার গঠনে মোদির ওপর আস্থা জানিয়ে তাঁকে লোকসভার নেতা নির্বাচনে সমর্থন জানান। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, আজ বিকেলেই এনডিএ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের আবেদন জানাবে। আগামী ৯ জুন, রবিবার শপথ নেবে জোট নির্ভর তৃতীয় মোদী সরকার।

এদিন সেন্ট্রাল হলে সর্বসম্মতভাবে নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হয় মোদীর সেই আত্মবিশ্বাসী ভাষণ। তিনি এদিন তাঁর প্রত্যয়ী ভাষণে এনডিএ-র সমস্ত সাংসদদের নতুনভাবে উজ্জীবিত করে তোলার চেষ্টা করেন। মোদী ভাষণের প্রথমেই তাঁর ওপর শরিকদলগুলির প্রতিনিধিদের আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “সরকার চালানোর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম।”

মোদী ভাষণের শুরুতেই তিনি কংগ্রেস সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে তুলোধোনা করেন। তিনি বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ করেন। মোদী বলেন, “গত ১০ বছরেও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি কংগ্রেস। ইন্ডিয়া জোট লাগাতার উন্নয়নের বিরোধিতা করেছে। তারা সবরকম আধুনিকতা ও উন্নয়নের বিরোধিতা করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে হিংসার রাজনীতি শুরু করেছে। বিরোধীদের সমালোচনার মুখে যোগ্য জবাব দিয়েছে ইভিএম।”


মোদী  ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র মহাবিজয় বলে দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “ভারতের গণতন্ত্রের উপর আস্থা নষ্ট করতে চেয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু এনডিএ-র ওপর আস্থা রেখেছে দেশের মানুষ। যেখানে একসময় এনডিএ দুর্বল ছিল, সেই দক্ষিণ ভারতেও এনডিএ-র শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।” বলেন,  “শরিকদের সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তি আরও মজবুত হল। সুশাসনই এনডিএ সরকারের মূল মন্ত্র। সরকার চালানোর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম। কিন্তু এর সঙ্গেই চাই সর্বসম্মতি। যাকে ভিত্তি করেই এগোবে এনডিএ। দেশের মানুষ জানে আমরা হারিনি, হারব না।”

এদিন মোদিকে নেতা নির্বাচন করার পর শুরু হয় অভ্যর্থনার পালা। সেরকমই একটি মুহূর্তে মোদির চেয়ে বয়সে বড় নীতীশকুমার ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যান। তখন মোদী তাঁর হাত আটকে দেন। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।

নীতীশকুমার মোদির ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে বলেন, “এদিক-ওদিকে যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কোনও লাভ হয় না। তাই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর আপনার নেতৃত্বে সকলে কাজ করবেন। সকলে এগিয়ে যাবেন। আর সব দলের নেতারা খুশি। তাঁদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি আমি। আমরা সবাই ওঁনার সঙ্গেই থাকব। উনি যা করবেন, সেটা সবাই মিলে মেনে আমরা চলব।”

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি চাইছিলেন যে আজই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেন শপথ নিয়ে নেন মোদী। যদিও শেষপর্যন্ত নীতীশের সেই মনস্কামনা পূর্ণ হচ্ছে না। আগামী রবিবার সন্ধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মোদী।

নীতীশ বলেন, “এবার যাঁরা জিতে গিয়েছেন, তাঁরা আগামী নির্বাচনে হেরে যাবেন। সেটার বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। ওঁরা কখনও দেশের জন্য কাজ করেননি। ওঁরা কখনও দেশের উন্নতির কথা ভাবেননি। আপনার (মোদী) নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে দেশ।”