মমতার কাছে হারলেন মোদি

বাংলায় ২৩টি সভায় ১২টিতে হার, ৭টিতে জয়

নিজস্ব প্রতিনিধি— পশ্চিমবঙ্গে পদ্মের সৌরভ বাড়ানোর জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ বাংলায় ভোট ঘোষণার শুরু হওয়ার আগে থেকে নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়া পর্যন্ত একাধিক সভা ও রোড শো করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ২৩টি সভা করেছেন তিনি৷ কিন্ত্ত শেষ পর্যন্ত জয়ের স্ট্রাইক রেটের চেয়ে হারার অনুপাত অনেক বেশি৷ মোদি যাঁদের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন, সেই বিজেপি প্রার্থীদের ৭ জন শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পেরেছেন৷ হার হয়েছে ১২টি কেন্দ্রের প্রার্থীদের৷ একেকটি সভায় মোদি প্রচার করেছেন একাধিক কেন্দ্রের হয়ে৷ বারাসত, কৃষ্ণনগর, আরামবাগ, দার্জিলিংয়ে সভা করেছেন মোদি৷ বারাসতের সভা থেকে সন্দেশখালির ইসু্যকে আরও বেশি করে উস্কে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ এছাড়া উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ বঙ্গের কৃষ্ণনগর, বোলপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, বারাকপুর, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর, মথুরাপুর, যাদবপুর কেন্দ্রেও সভা করেছেন মোদি৷ কিন্ত্ত ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, ১২টি কেন্দ্রের প্রার্থীদের হয়ে মোদি প্রচার করলেও জয় অধরাই থেকে যায়৷ জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, পুরুলিয়া, মালদহ উত্তর এবং বিষ্ণুপুর আসনের বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন৷ খারাপ আবহাওয়ার কারণে হলদিয়ার সভায় উপস্থিত হতে পারেননি মোদি৷ কিন্ত্ত ঝাড়গ্রাম থেকে ভার্চুয়ালি হলদিয়ার সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী৷ মোদি সভা করার পরেও আরামবাগ, কৃষ্ণনগর, বারাসত, কোচবিহার, বর্ধমান-দুর্গাপুর, বোলপুর, হাওড়া, হুগলি, বারাকপুর, ঝাড়গ্রাম, যাদবপুর এবং মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা৷ আরামবাগ আসন জেতার জন্য মরিয়া ছিল বিজেপি৷ কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে এই আসনে বিজেপিকে হারতে হয়েছিল৷ কিন্ত্ত এবারেও এই আসনও বিজেপির অধরা রয়ে গেল৷ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মিতালি বাগ এবার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন৷ সেই তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন৷ রায়গঞ্জ, বালুরঘাট আসনের জন্য মোদি সভা করেছিলেন৷ এই দু’টি আসনে অবশ্য বিজেপির জয় এসেছে৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বালুরঘাটে জয়ী হন৷ মালদহ উত্তরে সভা করেছিলেন মোদি৷ এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু জয়ী হয়ে মোদির মুখ রক্ষা করেছেন৷ দিলীপ ঘোষের হয়ে মোদি সভা করলেও এবার বিপুল ভোটে হারতে হয়েছে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে৷ গত লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ রাজ্যসভাপতি থাকাকালীন ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি৷ এবার দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র বদল হয়৷ নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও দলের নির্দেশ মেনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হন দিলীপ৷ কিন্ত্ত জয় অধরাই থেকে যায়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের হয়ে সভা করেছিলেন মোদি৷ কিন্ত্ত এই আসনে এবার জয় এল না৷ উত্তরবঙ্গে তৃণমূল এই আসনটি পাওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে৷ দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়িতে মোদি সভা করেছিলেন৷ সেই সভায় ভিড় উপচে পড়ে৷ এই আসনটি অবশ্য ধরে রেখেছে বিজেপি৷ বারাসতের অশোকনগরে সভা করেছিলেন মোদি৷ এই কেন্দ্রেও বিজেপিকে হারতে হয়েছে৷ বারাকপুরে অর্জুন সিংয়ের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন মোদি৷ কিন্ত্ত এই আসনে বিজেপি পিছিয়ে গিয়েছে৷ পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বিষ্ণুপুরে মোদি সভা করেছিলেন৷ এই তিন আসনের মধ্যে দু’টিতে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হলেও, ঝাড়গ্রাম আসনে কিন্ত্ত জয়ী হয়েছে মমতার প্রার্থী৷ স্বাভাবিকভাবে বাংলায় মোদির সাফল্যের চেয়ে পরাজয়ের হারই বেশি৷ এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার কাছে হার মানতে হয়েছে মোদিকে৷