গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন মোদি, নীতিগতভাবে পদত্যাগ করুন: মমতা

মধুছন্দা চক্রবর্তী: লোকসভা ভোট প্রচারের সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ইস বার মোদিবাবু পগার পার’৷ মঙ্গলবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, চারশো পার তো দূরস্ত, এককভাবে ম্যাজিক ফিগার পর্যন্ত ছুঁতে পারার সম্ভাবনা নেই নরেন্দ্র মোদির দলের৷ এদিন সন্ধেয় কালীঘাটের বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো দাবি করলেন, নীতিগতভাবে নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ করা উচিত৷ একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরও পদত্যাগ দাবি করলেন মমতা৷ এদিন তিনি নরেন্দ্র মোদিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না দেওয়ার জন্য দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানালেন৷ বললেন, জনতাই ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’৷ বেশিরভাগ এক্সিট পোলের আশঙ্কাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বাংলায় তৃণমূল যে গতবারের তুলনায় বেশি আসন পেয়েছে, সেজন্য বাংলার মানুষকে সব ভাষায় শুভেচ্ছা জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷

এদিন ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সহযোগিতা করার বার্তাও দিলেন মমতা৷ জানালেন, জোটের শরিক দলের অখিলেশ যাদব, শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরেদের ফোন করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী এবং হেমন্ত সোরেনের স্ত্রীকেও ফোন করেছেন৷ শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রাহুল গান্ধি এবং সোনিয়া গান্ধিকেও৷ যদিও গান্ধি পরিবারের কাছ থেকে কোনও পাল্টা জবাব আসেনি, মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত৷ আজ বুধবার ইন্ডিয়া জোটের যে বৈঠক রয়েছে, সেখানে তিনি নিজে যেতে না পারলেও অভিষেক বন্দ্যোাপাধ্যায়কে পাঠাবেন বলে জানিয়ে দিলেন মমতা৷ কারণ সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘জেনুইন’ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার প্রথমেই সেই খবর দিয়ে মমতা অভিষেককে অভিনন্দন জানালেন৷ এদিন একসঙ্গে হাতে হাত রেখে ভিকট্রি চিহ্ন দেখিয়ে ছবি তুললেন মমতা -অভিষেক৷

মমতা এদিন স্বীকার করলেন, এক্সিট পোলের মিথ্যে প্রচারে একসময় তাঁর মনেও বাংলায় তাঁদের জয় নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল৷ কিন্ত্ত তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ চোখ মানুষের মনের ভাষা পড়তে পেরেছিল৷ তিনি বুঝেছিলেন, মানুষ তাঁকে ফেরাবে না৷ এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো একাধিক ইসু্যতে মোদি সরকারকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷


এর মধ্যে ছিল ইডি, সিবিআই হামলা করা, বাংলার মানুষকে বঞ্চনা করা ইত্যাদি৷ মোদি সরকার মিথ্যে প্রচারের জন্য এত বিজ্ঞাপনের টাকা কোথায় পেল, তারও জবাবদিহি চাইলেন৷ যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকথা-কুকথা বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আগামী দিনে মানহানির মামলা করার পথে তৃণমূল যাবে বলেও ইঙ্গিত দিলেন৷ মোদি সরকার গড়লেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আগামীদিনে সংসদে যথেচ্ছাচারে বিল পাশ করতে পারবে না৷ সংবিধানকে পরিবর্তন করতে পারবে না৷ দেশ সুরক্ষিত থাকবে৷ এই কারণে এদিনের লোকসভা ভোটের ফলাফলে তিনি খুব খুশি বলে জানিয়ে দিলেন৷ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার নির্বাচনে বিজেপির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সামনে আনেন৷ যেভাবে সন্দেশখালি ইসু্যকে সামনে এনে বাংলার মানুষকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে তার নিন্দা করেন৷ মঙ্গলবার তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির পারমর্শেই এমন সব রিটার্নিং অফিসারকে বাংলার নির্বাচনে এনেছেন, যাঁরা তৃণমূল প্রার্থী জয়লাভ করলেও তাঁদের শংসাপত্র দিতে গড়িমসি করছেন৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র এবং আরও চার-পাঁচটি কেন্দ্রে তিনি পুনর্গণনার জন্য আবেদন করবেন৷ নির্বাচন পরবর্তর্‌ী হিংসার মোকাবিলা করার জন্য আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ যার ব্যয়ভার বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকেই৷ এই নির্দেশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, এই অর্থ তিনি বাংলার মানুষের উন্নয়নে ব্যয় করতে পারতেন৷ এদিন মমতা ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, বাংলায় কংগ্রেস-বামফ্রন্ট আলাদাভাবে না লড়লে তারা আরও কয়েকটি আসন বেশি পেত৷ বিজেপিরও আসন সংখ্যা কমত৷ তবে বাংলায় যে ফলই হোক না কেন, আগামীদিনে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে মমতা থাকবেন এবং নরেন্দ্র মোদির একতরফা গণতন্ত্রকে হত্যা বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলে জানিয়ে দেন৷ বাংলার বকেয়া আদায়ে আগামীদিনে দিল্লির বুকে ফের আন্দোলন সংঘবদ্ধ করার ইঙ্গিত দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷