২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে লড়াই সংবিধান বাঁচানার পাশাপাশি গরিবদের জন্য সংরক্ষণ, জমি, জঙ্গল ও কর্মসংস্থানের অধিকার রক্ষার৷ কেননা, নরেন্দ্র মোদি ঠিক করেই ফেলেছেন এবার ক্ষমতায় এসে শুধু সংবিধান বদল নয়, পুরোপুরি বাতিলই করে দেবেন৷ যদি সংবিধান বাতিল হয়, তাহলে দেশবাসী বিশেষত গরিব, দলিত, আদিবাসীদের জন্য যে অধিকার বর্ণিত আছে, তাও বন্ধ হয়ে যাবে৷ তখন রাজত্ব করবেন ২০ থেকে ২৫ জন ধনকুবের৷ আদানির মতো ধনকুবেররা চাইছেন আদিবাসীদের জমি-জঙ্গল৷ মোদি ক্ষমতায় এলে সেটাই হবে৷ বিমানবন্দর, বিদু্যৎকেন্দ্র, পরিকাঠামো ক্ষেত্র ইতিমধ্যে ২০-২৫ জন ধনকুবেরের হাতে তুলে দিয়েছেন মোদি৷
মোদির আমলে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে৷ গত ১০ বছরে কোনও কর্মসংস্থান হয়নি৷ কাজের জন্য আদিবাসীদেরও ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে৷ আদিবাসীদের ঋণ মকুব না হলেও ২২ জন ধনকুবেরের ১৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে৷ সাধারণ মানুষ যে হারে আয়কর দেন, আদানিও সেই একই হারে কর দেন৷ অথচ দেশের সাধারণের জন্য কোনও সুবিধা নেই, স্বাচ্ছন্দ্য একাই ভোগ করেন আদানির মতো শিল্পপতিরা৷ বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ অথচ নোটবন্দি এবং জিএসটি’র ঠেলায় ক্ষুদ্রশিল্প এবং কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ আর এই ব্যবস্থার ফয়দা লুটছে আদানিরা৷
নির্বাচনে হার নিশ্চিত বুঝেই মোদি সহ বিজেপি নেতারা এখন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি পাকিস্তানকেও টেনে আনছেন তাঁদের ভাষণে৷ হিন্দু-মুসলিম বলে মানুষকে উস্কানোর চেষ্টা করছেন৷ সাম্প্রদায়িক উস্কানির সঙ্গে দেশে অরাজকতা দেখা দেবে বলেও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ বিজেপি দলের মধ্যেও চাপ বাড়ছে৷ মোদির প্রাক্তন মন্ত্রী অসমের নগাঁও কেন্দ্রে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ রাজেন গোঁহাই বলেছেন, ‘সারা দেশেই বিজেপির ফল খারাপ হবে৷ নেতৃত্বের ভুলের জন্য নীচের তলার কর্মীদের খেসারত দিতে হবে৷’
বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপকভাবে দলিতদের সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি৷ দলিত-অনগ্রসর-আদিবাসী জাতিদের তথাকথিত ‘নিম্নবর্গের হিন্দুত্বের’ সমীকরণেই কয়েকটি রাজ্যে জিতেছিল বিজেপি৷ এবার একাধিক সমীক্ষায় সেই সমীকরণ ভাঁটা পড়ার খবরে বেশ বিপাকে বিজেপি নেতৃত্ব৷ তাই খ্রিস্টান ও হিন্দু আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে, ‘ঘর ওয়াপসি’ আর ধর্মান্তকরণকে ইসু্য করার চেষ্টায় নেমেছে আরএসএস-বিজেপি৷
সুরাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে গণতন্ত্রকে আরও একবার মোদি-শাহ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেও গুজরাতে রাজপুত ও ক্ষত্রিয়দের টানা বিক্ষোভে বিজেপির ঔদ্ধত্য ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে৷ অন্যদিকে গোষ্ঠী কোন্দল ও যৌন কেলেঙ্কারির আবহে কর্ণাটকেও বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি-জেডি(এস) জোট৷
কর্ণাটকের হাসান কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী প্রোজ্বল রেভান্নার হয়ে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি৷ ভোটের ঠিক ৭২ ঘণ্টা আগে একটি পেন ড্রাইভ প্রকাশ্যে আসে৷ এতে ছিল প্রোজ্বলের মহিলাদের শ্লীলতাহানির ভিডিও৷ বাড়ির কাজের মহিলা, দলীয় কর্মীদের স্ত্রী, এমনকি মহিলা পুলিশ কর্মীদেরও যৌন শোষণ করেছেন প্রোজ্বল৷ কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হয়ে যেতেই ভোট মেটার পরই প্রোজ্বল বিদেশে চম্পট দেয়৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে বিজেপির নীচু তলার নেতারা এবার প্রচারে হাতিয়ার করেছেন ধর্মীয় বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িকতাকে৷ বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় ছড়ানো হয়েছে উগ্র হিন্দুত্বের বিষ৷ সমাজে মেরুকরণ প্রগাঢ় করতে পরিকল্পিতভাবে তোলা হয়েছে মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত ‘লাভ জিহাদ’, মুসলিম তোষণ ও বিকশিত ভারতের গল্প৷ বাস্তবের জমিতে যার কোনও অস্তিত্ব নেই৷ দশ বছরের রাজত্বে উন্নয়নের কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি নেই বলেই উগ্রহিন্দুত্বের জিগির তুলেছেন মোদি৷ সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ মোদি সরকার৷