• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

মমতার ওবিসি সংরক্ষণকে তোষণের রাজনীতি বলে দুষলেন মোদী

দিল্লি, ২৪ মে: এর আগে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের করা ওবিসি সংরক্ষণ নীতি বাতিল হতেই ফের সুর চড়ালেন মোদী। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া জোটকে দোষারোপ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মমতা সরকারের বাতিল হওয়া সংরক্ষণ নীতিকে তোষণের রাজনীতি বলে দাবি করেন। প্রসঙ্গত ২০১০ সালের পরে যেসব

দিল্লি, ২৪ মে: এর আগে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের করা ওবিসি সংরক্ষণ নীতি বাতিল হতেই ফের সুর চড়ালেন মোদী। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া জোটকে দোষারোপ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মমতা সরকারের বাতিল হওয়া সংরক্ষণ নীতিকে তোষণের রাজনীতি বলে দাবি করেন।

প্রসঙ্গত ২০১০ সালের পরে যেসব ওবিসি শংসাপত্র রাজ্য সরকার দিয়েছিল তা বাতিল বলে জানিয়ে দেয় আদালত। আদালত এদিনের রায়ে জানায়, এই সময়ে যেসব ওবিসি শংসাপত্র ইস্যু হয়েছে, তা যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়নি। সেজন্য ওই শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। তবে সেই সঙ্গে আদালত এটাও জানিয়ে দেয় এই শংসাপত্র দেখিয়ে যেসব কর্ম প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন এবং যেসব ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে অগ্রাধিকার পেয়েছেন, তাদের পাওয়া সেই সুবিধা বাতিল করা হবে না।

এদিকে এই রায়ের পরের দিনেই গর্জে ওঠেন মোদী। তিনি বলেন,”আদালত ইন্ডিয়া জোটের গালে থাপ্পড় মেরেছে।” আজ ফের হরিয়ানার অন্য একটি নির্বাচনী জনসভা থেকে মমতার উদ্দেশ্যে মোদী বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন হাইকোর্টের নির্দেশ মানবেন না। মুসলিমদের ওবিসি-র সংরক্ষণ দেবেনই। আসলে কংগ্রেস, তৃণমূল–সহ ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। সে জন্যই তারা দেশের বিভাজন করেছে। ভারতকেও মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে চায়। ইন্ডিয়া জোট সাম্প্রদায়িক। তারা জাতপাতের রাজনীতি করে এবং পরিবারবাদী।”

উল্লেখ্য, ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় শোনার পর মমতা বলেন, এই রায় বিজেপির রায়। এই রায় মানব না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার একটি নির্বাচনী সভায় বলেন, ‘‘কেন ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নিতে হয় ভোটের সময়? কয়েকজন বসে আছেন। বেরিয়েই বলছেন, আরএসএস করি। করো, কে বারণ করেছে! হঠাৎ করে একজন বললেন, ১৫ লাখ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল। না, বাতিল হবে না। গরমের ছুটি শেষ হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আপনি এ-তে খেলেছেন, আমি বি-তে খেলব। আপনি সি-তে খেলার চেষ্টা করলে আমি জ়েড-এ খেলব। খেলা হবে। ওবিসি-র মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, তফসিলি, আদিবাসী সবাই আছে। আসল কারণ কী জানেন? ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মুসলিমরা তফসিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে। এটা কখনও হয়? কেউ কারও অধিকার কেড়ে নিতে পারে?’’

এর আগে কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে ওবিসিদের জন্য ধার্য সংরক্ষণ মুসলিমদের হাতে তুলে দেবে। আজ মোদী এই প্রসঙ্গে ফের লাগামছাড়া আক্রমণ শানালেন। তিনি বলেন, “ইন্ডিয়া-জামাত জোট তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করেছে, বাংলায় হাইকোর্টের নির্দেশে তার পর্দা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। বাংলায় রাতারাতি এরা মুসলমানদের ওবিসি শংসাপত্র দিয়েছিল। ওবিসি-র জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষণ অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বণ্টন করছিল। আপনারা বলুন, আজ যদি আদালত না থাকত, তা হলে জনজাতি-দলিতরা কী করতেন? আমি প্রতিটি তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসিভুক্ত
মানুষকে ভরসা দিচ্ছি, যত দিন মোদী জীবিত রয়েছে, কোনও মাই কা লাল তাঁদের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বঞ্চিত মানুষের অধিকারের চৌকিদার মোদী।”

তবে শুধু যে মোদী একাই মমতাকে এই আক্রমণ করেছেন এমন নয়। তাঁর সরকারের দেওয়া ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে আক্রমণ করেছেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, বলিউড অভিনেতা ও বিজেপির প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তী এমনকি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। নাড্ডা আজ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, “সকলেই জানেন যে, পশ্চিমবঙ্গে মমতার সরকার ওবিসি কোটার অধীনে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করে ওবিসি সার্টিফিকেট এবং ওবিসি সংরক্ষণ দিয়েছিল। যা কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করেছে।” একইভাবে পুরুলিয়ায় বিজেপির দলীয় প্রার্থীর প্রচারে মিঠুন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘রায় মানব না, তা তো হয় না। আদালতের রায় আপনাকে মানতেই হবে।’’

এদিকে যোগী আদিত্যনাথ বুধবার ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আজ শুক্রবার একটি প্রচার সভায় বলেন, সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ অনুমোদন করে না। যোগী তাঁর সরকারি বাসভবনে সংবাদ মাধ্যমকে এদিন বলেন, তৃণমূল সরকার জোর করে তুষ্টি করণের রাজনীতি করছে। তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের ১১৮টি শ্রেণীকে জোরপূর্বক ওবিসি ক্যাটেগরিতে ঢোকাতে চাইছে। ইন্ডি জোট অবশ্যই দেশের সার্বিক কল্যাণের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এই প্রচেষ্টা নিন্দনীয়।”

এদিন যোগী তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে ব্যাখ্যা করেন, অতীতে সংরক্ষণ শুধুমাত্র তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতিদের জন্য করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মণ্ডল কমিশন সামাজিক অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণীকে ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় আনে। তিনি বলেন,“ভারতীয় সংবিধান কখনও ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণকে অনুমোদন দেয়না। বাবা সাহেব আম্বেদকর বার বার সতর্ক করেছিলেন যে, আমাদের দেশ ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়েছে। সেজন্য আমরা এমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি করব না, যাতে দেশকে পুনরায় বিভাজনের পথে ঠেলে দেয়।’’