সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য, সুখেন্দু শেখরকে তলব লালবাজারের

তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সুখেন্দু শেখর রায়কে নোটিস পাঠাল লালবাজার। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। হঠাৎ কেন তৃণমূলের রাজসভার সদস্য ও দলের মুখপত্র জাগো বাংলার সম্পাদককে নোটিস পাঠাল লালবাজার। আর জি কর কাণ্ডের আবহে রাজ্যের ৮ থেকে ৮০ সবার মধ্যে এই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। তবে এবিষয়ে লালবাজার জানিয়েছে, সমাজ মাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন সুখেন্দু শেখর রায়। সেজন্য তাঁকে তলব করা হয়েছে। একটি পোস্টে তিনি, আরজি করের ঘটনার তিন দিন পর হাসপাতালে ডগ স্কোয়াড যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক মাধ্যমের সেই পোস্টে প্রশ্ন করেছেন, কেন এই বিলম্ব। পুলিশের দাবি, এই তথ্য ভুল। ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে আদৌ দেরি করা হয়নি। সে বিষয়েই রবিবার বিকেলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকা হয়। তবে সুখেন্দুবাবুর তরফে কলকাতা পুলিশের এই তলবে কোনও সাড়া পাওয়া যায় নি। তিনি রবিবার বিকেলে লালবাজারে হাজির হননি।

প্রসঙ্গত রাজ্যের একাংশের মতে, আর জি কর কান্ড নিয়ে ভুল পোস্ট করে যদি সাধারণ নেটিজেনদের তলব করতে পারে পুলিশ, তাহলে সুখেন্দু শেখর কেন বাদ যাবেন। সাংসদ হওয়ার জন্য তাঁকে ছাড় দেওয়ার কোনও প্রসঙ্গই থাকতে পারে না। বরং রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে সমাজের ওপর তাঁর দায় ও দায়বদ্ধতা অনেকাংশে বেশি।

এদিকে রাজনৈতিক মহলে জলঘোলা শুরু হয়েছে সুখেন্দুকে নিয়ে। সম্প্রতি আর জি কর কাণ্ডে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সুখেন্দুর একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। এছাড়া শনিবার রাতে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করেছেন। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করেছেন। ওই পোস্টে ডগ-স্কোয়াড নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন।


পোস্টে সুখেন্দু লিখেছেন, “সিবিআইকে স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে। কে বা কারা, কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছিল, তা জানার জন্য আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। কেন সেমিনার হলের কাছে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হল? কার প্রশ্রয়ে ‘রায়’ এত ক্ষমতা পেল? কেন ঘটনার তিন দিন পর স্নিফার ডগ ব্যবহার করা হল? এমন বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে। এর উত্তর দিতে হবে ওঁদের।”

এই ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের ১২ ঘন্টা যেতে না যেতেই সুখেন্দুকে তলব করা হয়েছে। লালবাজারের বক্তব্য, ঘটনার দিনই হাসপাতালে স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। শুধু তাই নয়, মোট দুই দিন ডগ স্কোয়াড হাসপাতালে গিয়েছিল। ৯ তারিখের পর ১২ আগস্টেও পুলিশ-কুকুর নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সুখেন্দুর এই ভুয়ো তথ্য প্রচারের কারণেই লালবাজারে তাঁকে তলব করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আর জি করের বক্ষ বিভাগের সেমিনার হলে জুনিয়র মহিলা ডাক্তারের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর সমাজমাধ্যমে নানা গুজব ছড়িয়েছে। যা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এবিষয়ে সিপি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি জানান, ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার বন্ধ না করলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। এদিকে আরজিকর-এর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের মহিলারা পথে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। যার জন্য নেওয়া হয় ‘রাত দখল’ কর্মসূচি। ঠিক হয় স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ১৪ আগস্ট বুধবার কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে মেয়েরা সারারাত মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল ও অবস্থান বিক্ষোভ করবে। সামাজিক মাধ্যমে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া দেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় দাবি করেন, তিনিও একজন মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। সেজন্য তিনিও এই রাত দখল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। যা নিয়ে রাজ্যে নানারকম রাজনৈতিক জল্পনার সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য সুখেন্দু বাবু সেই রাত দখল কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না বলে জানিয়ে দেন।