এনডিএ জোটের নবগঠিত মন্ত্রিসভায় মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কমল৷ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাতজন মহিলা৷ এঁদের মধ্যে দু’জন পূর্ণমন্ত্রী, বাকিরা রাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এর আগের মন্ত্রিসভায় ছিলেন ১১ জন মহিলা মন্ত্রী৷ এবার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নির্মলা সীতারমন এবং অন্নপূর্ণা দেবী৷ রাজ্যসভার সদস্য নির্মলা আগে প্রতিরক্ষা এবং অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন৷ অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ড কোডার্মার দু’বারের সাংসদ অন্নপূর্ণা দেবী গত মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন৷ এবার তাঁর পদোন্নতি হয়েছে৷ নির্মলা ও অন্নপূর্ণা বিগত দু’টি মন্ত্রিসভাতেই ছিলেন৷
এছাড়া রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন অনুপ্রিয়া প্যাটেল, শোভা কারান্দলাজে, নিমুবেন বানভানিয়া, রক্ষা খাড়সে এবং সাবিত্রী ঠাকুর৷ আপনা দলের (সোনেগাল) একমাত্র সাংসদ অনুপ্রিয়া প্রথম মোদি মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন৷ দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের আমলে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন৷ অন্যদিকে, কর্নাটকের বিজেপি নেত্রী শোভা গত মন্ত্রিসভায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন৷ এবারও তাঁকে মন্ত্রিসভায় রেখে দিলেন প্রধানমন্ত্রী৷
নিমুবেন বানভানিয়া এবারই প্রথম মন্ত্রী হলেন৷ আগে গুজরাতের ভাবনগরের মেয়রের দায়িত্ব সামলেছেন৷ পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ রক্ষারাবে কেন্দ্রের তিনবারের সাংসদ তিনি৷ ধরের দু’বারের সাংসদ সাবিত্রী ঠাকুরও এই প্রথমবার মন্ত্রী হলেন৷
নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি সদস্য উত্তরপ্রদেশের৷ এই রাজ্য থেকে মোট ৯ জন মন্ত্রী হয়েছেন৷ তবে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সংখ্যা মাত্র এক৷ রাজনাথ সিং ছাড়া বাকি সকলেই রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন৷ মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি সদস্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের রাজ্য বিহার৷ সেখান থেকে আটজন মন্ত্রী হয়েছেন৷ তবে ক্যাবিনেট সদস্যের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিহার৷ সেখান থেকে চারজন পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র৷ এখান থেকে মোট ৬ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও, পূর্ণমন্ত্রী মাত্র ২ জন৷ গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মনসুখ মাণ্ডব্য ও সি আর পাতিল৷ হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু তিনজন করে এবং ওড়িশা, অসম, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’জন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন৷
বিহারের চারজন পূর্ণমন্ত্রীর মধ্যে তিনজনই শরিক দলের৷ এর মধ্যে রয়েছেন হামের জিতনরাম মাঝি, জেডিইউ’র লালন সিং এবং এলজেপি’র চিরাগ পাসোয়ান৷ বিজেপির একমাত্র গিরিরাজ সিং ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছেন৷ মধ্যপ্রদেশের তিনজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মধ্যে আছেন শিবরাজ সিং চৌহান, বীরেন্দ্র কুমার ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া৷ মহারাষ্ট্র থেকে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন নীতিন গডকড়ি ও পীযুষ গোয়েল৷ তামিলনাড়ু থেকে ফের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছেন নির্মলা সীতারমন ও এস জয়শঙ্কর৷
নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ২০ জন পুরনো মন্ত্রী জায়গা পাননি৷ এর মধ্যে পাঁচজন টিকিটই পাননি৷ আর ১১ জন হেরে গিয়েছেন৷ বাকি চারজন জিতলেও শিঁকে ছেড়েনি তাঁদের৷ ‘হেরো’ মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছেন স্মৃতি ইরানি৷ গত মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন অনুরাগ ঠাকুর৷ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ এবারও হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর থেকে জিতেছেন তিনি৷ তবে মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি তাঁর৷
নির্বাচনে হারের ফলে স্মৃতি ইরানি বা রাজীব চন্দ্রশেখর যেমন মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, আবার হেরে গিয়েও মন্ত্রী হয়েছেন পাঞ্জাবের রভনীত সিং বিট্টু ও এল মুরুগান৷ বিজেপির দুই বর্ষীয়ান নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ ও রাজীবপ্রতাপ রুডি বাদ পড়েছেন মোদির মন্ত্রী তালিকা থেকে৷ বিপুল ভোটে জিতলেও বিহারে শরিক দলগুলিকে জায়গা করে দিতেই এই ছাঁটাই৷
মন্ত্রিসভার এইসব বাধ্যবাধকতা নিয়ে যাত্রা শুরু করল মোদির নেতৃত্বে এনডিএ জোট৷ কতদিন মসৃণভাবে পথ চলা যাবে, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন৷ এই সরকারের দিকে এখন আরএসএসের তীক্ষ্ণ নজর৷ তবে মহিলা মন্ত্রীর সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মোদির মেরুকরণে সংখ্যালঘুরা (বিশেষ করে মুসলিমরা) যে ব্রাত্য তা আরও একবার প্রমাণিত হল৷