জয়ের মার্জিনেও ডায়মন্ড হারবার এক নম্বর হবে, দাবি অভিষেকের

প্রশান্ত দাস: অক্ষয় তৃতীয়ার শুভক্ষণে শুক্রের দুপুরে আলিপুরে জেলাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন অভিষেকের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব ছিল তৃণমূলে৷ অভিষেকের কাটআউটে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পথঘাট৷ সকাল থেকেই তাঁর বাডি়র সামনে কর্মীসমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ঘডি়র কাঁটায় ঠিক সাডে় ১২টা নাগাদ বাডি় থেকে বের হন অভিষেক৷ পরনে ছিল সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট৷ হেঁটে হাত নাড়তে নাড়তে আলিপুর ট্রেজারি বিল্ডিংয়ে পৌঁছন অভিষেক৷ মনোনয়ন মিছিলের পাশাপাশি রাস্তার দুই ধারেও ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ ভিড় করেন অভিষেককে আশীর্বাদ করতে, ফুল ছুঁড়ে অভিষেককে ভালোবাসা উজাড় করে দেন জনসাধারণ৷ অভিষেকের মনোনয়ন মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন জাহাঙ্গীর খান, সওকত মোল্লা, অশোক দেবরা প্রমুখ৷ এদিন মনোনয়ন দাখিল করে বেড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, “দক্ষিণ কলকাতায় আমার জন্ম হলেও, কর্ম আমার ডায়মন্ড হারবারে৷ আর এই ডিএম অফিসটা যেহেতু দক্ষিণ কলকাতায় পড়ে তাই এটি আমার পাড়া বলাই চলে৷ আমার নিজ কেন্দ্র ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার মানুষেরা যেভাবে সমর্থন দেখিয়েছেন, আশীর্বাদ করেছেন তাতে আমি ধন্য৷ ডায়মন্ড হারবারে বিগত দশ বছরে উন্নয়নের অশ্বমেধের ঘোড়া যেভাবে ছুটেছে, তাকে আগামীদিনেও ত্বরাণ্বিত রাখবো, মনোনয়ন দাখিল করে এই শপথ নিলাম৷”

এরপরই সন্দেশখালি ইসু্যতে অভিষেক আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপিকে৷ “স্বাধীনতার পর এটি সবচেয়ে লজ্জাজনক অধ্যায়”, সন্দেশখালি প্রসঙ্গে আখ্যা তৃণমূল সেনাপতির৷ তিনি বলেন, “আমরা গোধরা, পুলওয়ামা শুনেছিলাম তবে এবার সন্দেশখালি দেখলাম৷ কানে শোনা আর চোখে দেখা দুটি পৃথক জিনিস৷ যাঁরা সামান্য কটা ভোটের জন্য গোটা বাংলাকে দেশের কাছে ছোট করতে পারে, তাঁদের থেকে নিম্নমানের রাজনৈতিক দল আমি ভারতে আগে কখনও দেখিনি৷ বিজেপির সন্দেশখালির বেলুন ফুটো হয়ে গেছে৷ বিজেপি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে ঠিকই, কিন্ত্ত তাতে মহিলাদের দিয়ে সই করিয়ে ভুয়ো অভিযোগ লিখিয়েছেন, মন্তব্য অভিষেকের৷ কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে৷ বিজেপি শ্বেতপত্র তো প্রকাশ করেনি, উল্টে সাদা কাগজ নিয়ে মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে ভুঁয়ো নির্যাতনের অভিযোগ করিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে৷ আমি বিশ্বাস করি, এর জবাব মানুষ ভোটবাক্সে দেবে৷” এদিন সিবিআই, ইডি এর তদন্তকে ‘জটায়ু তদন্ত’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ তাঁর ভাষায়, “একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গুলিহেলনেই বেছে বেছে তদন্ত হয়েছে৷ সেটি আজ গঙ্গাধর কয়াল, রেখা পাত্রের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট৷ এই জল অনেক দূর গড়াবে৷ আমি আমাদের দলনেত্রীকেও অনুরোধ করেছি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে শুনানির সময় যেন সম্পূর্ণ ভিডিও ফুটেজ ডিটিপি করে জমা দেওয়া হয়৷”

মনোনয়ন জমা দিয়ে বেড়িয়ে রাজ্যপালকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, “আপনি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে অভিযোগকারিণীকেই অপমান করলেন৷ আপনার ক্ষমতা থাকলে করিডর এবং চেম্বারের ভিডিও দেখান যখন অভিযোগকারিণী সেখান থেকে বেড়িয়েছিলেন৷ আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়না বলে আপনি যা খুশি তাই করবেন? রাজ্যপাল নিজের ভুল জাস্টিফাই করার জন্য মেয়েটিকে আরও ছোট করেছেন৷” এই তীরেই বিঁধলেন জাতীয় মহিলা কমিশনকেও৷ তিনি বলেন, “এরা একবার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি এই ঘটনায়৷ ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেন নয়, এরা ‘বিজেপি কমিশন ফর ওমেন’ হয়ে গেছে৷ বিজেপি দেশের প্রত্যেকটা কমিশনকে নষ্ট করেছে, এবার দেশের সংবিধানকেও নষ্ট করতে চায়৷” নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করে বলেন, “একদিন আগে বিজেপির এক নেতা মহিলাদের উদ্দেশ্যে কুকথা বলেছেন এঁদের থেকে মহিলা সম্মান শিখতে হবে?” প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্নীতিগ্রস্ত দল আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার কোটি কোটি টাকার প্রসঙ্গও উনি টানেন৷ এবার সেই বিষয়েই বিজেপিকে আক্রমণ অভিষেকের৷ “তৃণমূল একমাত্র দল যারা দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বিজেপি ব্রিজভূষণ সিং, অজিত পাওয়ার, প্রজওয়ালা রেভান্নার মতো দুর্নীতিগ্রস্তদের হয়েই ভোট চায়”, সরব যুবরাজ৷