প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েও ইতিহাস গবেষণায় প্রশ্নচিহ্ন মাওবাদী নেতার

বন্ধ হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং

আমিনুর রহমান , বর্ধমান, ৯ জুলাই: শিক্ষায় স্বপ্নপূরণে বাধা দেখা দিল মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের। সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শুধু নয়, প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। মঙ্গলবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং হবার পর তাঁর ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইতিহাস গবেষণার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য কাউন্সেলিং বন্ধ রাখা হল। হুগলি সংশোধনাগারে বসেই প্রাক্তন মাওবাদী শীর্ষ নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম এবার ইতিহাসে পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আর তারপরেই হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অর্ণব প্রবেশিকা দিয়ে যান। আর ওই পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়ম মেনে আবেদন করার কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন সংশোধনাগারে থাকা ওই প্রাক্তন মাওবাদী নেতা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিনশোজন প্রার্থী ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছেন এবছর। তার মধ্যে হুগলি সংশোধনাগারে বন্দী অর্ণব দাম-এর নাম প্রথমেই রয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছিল, তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ফলে তাঁর আর পিএইচডি করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু ভর্তি হতে আসার আগেই শিক্ষায় স্বপ্নপূরণে বাধা দেখা দিল।

এর আগে কোনও জেলবন্দী আসামি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার আবেদন জানিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই বলেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মাওবাদী এই পিএইচডি প্রার্থী সফল হবার পর পরবর্তীতে আর পাঁচজনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নিয়ম মেনেই পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তাঁর ন্যূনতম উপস্থিতিও নজর রাখা হবে। সূত্রের খবর, জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই এর আগে স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট(সেট)-এ সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এক সময়ে রাজ্যের শীর্ষ এই মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম।


রাজ্য কারা দপ্তর সূত্রে খবর, এর আগে কেউ জেলবন্দি অবস্থায় এধরনের কোনও পরীক্ষায় সফল হননি। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ক্যাম্পে মাওবাদী হামলায় ২৪ জন ইএফআর-কর্মী মারা যান। সেই মামলায় ২৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম ছিলেন অন্যতম। কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এসকে দামের ছেলে অর্ণব ছোট থেকেই মেধাবী বলেই পরিচিত। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়গপুর আইআইটি-থেকে পড়াশোনা করেছেন। মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব ২০১২ সালে হঠাৎ-ই ধরা পড়েন আসানসোল থেকে। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই ওই গেরিলা নেতা অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন। জেল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক হন। প্রায় ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে সম্পূর্ণ করেন স্নাতকোত্তর পাঠ। তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, অধ্যাপনা করতে চান। তাই ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট(নেট)-এ বসার আবেদন জানিয়েছিলেন।

কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিনি সেই পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেই সময় প্রায় ৪০ বছর বয়সী প্রাক্তন ওই মাওবাদী নেতা এরপর সেট পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানান। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে অবশেষে সেই পরীক্ষা দেন অর্ণব। হুগলির জেলে বসেই অর্ণব তাঁর পাশ করার খবর পান। মার্কশিটও পেয়ে যান হাতে। সেই মার্কশিট তিনি বাড়িতে স্পিড পোস্টে পাঠিয়েও দেন। এরপর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সদস্য রঞ্জিৎ সুর সরকারের কাছে আবেদন জানান, “অর্ণব গবেষণা করতে চায়। ওর মতো রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। আর ততদিন সরকার নিশ্চিত করুক, যাতে অর্ণব গবেষণা-সহ ভবিষ্যতের পড়াশোনোর সমস্ত সুযোগ পান।” সেই আবেদনের পর এবার অর্ণব গবেষণা করার ছাড়পত্র পেয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ কারণে কাউন্সেলিং বন্ধ করে দেওয়ার খবরে তাঁকে রীতিমতো হতাশ করেছে বলে সূত্রের খবর। যদিও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, কবে কাউন্সেলিং হবে, তা এখনই জানানো যাচ্ছে না।