মানকুণ্ডুতে রেল অবরোধ হটাতে পুলিশের হুইস্‌ল দাওয়াই, মানতে নারাজ লোকো পাইলটের সঙ্গে কথা কাটাকাটি

বুধবার বিজেপি-র ডাকা বন্‌ধে শহর কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটেছে একাধিক ঘটনা। অন্যান্য জেলার মতো হুগলি জেলাতেও একই ঘটনা ঘটে। তবে এই জেলার মানকুণ্ডু স্টেশনের ঘটনাটি সত্যিই বিরল। রেললাইনে অবরোধ নিয়ে পুলিশ ও লোকো পাইলটের দড়ি টানাটানির সাক্ষী থাকলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও রেল যাত্রীরা। মঙ্গলবার ছাত্রদের ডাকা বন্‌ধে পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে রেল অচলের দাবিতে মানকুণ্ডু স্টেশনে অবরোধ করেন গেরুয়াপন্থীরা। কিন্তু এই অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ একটি কৌশল অবলম্বন করে। সেই কৌশলটি হল কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা।

একজন পুলিশ কর্মী ভেবেছিলেন, রেলের লোকো পাইলট হুইস্‌ল দিলেই অবরোধকারীরা ট্রেন আসছে ভেবে, ভয়ে রেল লাইন ছেড়ে পালাবেন। সেজন্য তিনি স্টেশনে দাঁড়িয়ে যাওয়া ট্রেনের লোকো পাইলটকে বারবার বলেন, ‘আপনি হর্নটা(হুইস্‌ল) মারুন।’ তাঁর জবাবে লোকো পাইলট বলেন, ‘আমি পারব না।’ ফের ওই পুলিশ কর্মী জোরে দিয়ে বলেন,’আরে আমি বলছি তো আপনি হর্ন (হুইস্‌ল) দিন।’ তখন লোকো পাইলট রীতিমতো কঠিন স্বরে বলেন,’শুনুন! আপনি আমাকে প্রটোকল শেখাতে আসবেন না। আপনি রেললাইন ক্লিয়ার করুন। আমি এতো মানুষকে অসুবিধায় ফেলতে পারব না।’ তবে নাছোড়বান্দা পুলিশকর্মী ফের আর্জি জানান,’আরে আপনি হর্ন দিন না!’

বুধবার নজিরবিহীন এই ঘটনায় মানকুণ্ডু স্টেশনে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এই ঘটনা দেখে যাত্রীরা একে একে ভিড় করতে শুরু করেন। কে কার আজ্ঞাবাহী! সেই তামাশা দেখার জন্য হাজির হয়ে যান অনেকে। এরই মধ্যে পুলিশ এবং লোকোপাইলটের কথা কাটাকাটি চলতেই থাকে। ওই পুলিশ কর্মী দাবি করেন, হুইসল দিয়ে যেন রেললাইন থেকে অবরোধকারীদের সরানোর চেষ্টা করেন লোকো পাইলট। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে পুলিশকে পাল্টা ‘নির্দেশ’ দেন ওই রেল চালক। তিনি বলেন, ‘আপনি রেললাইন ক্লিয়ার করুন।’


জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ৮টা ৩০ নাগাদ মানকুণ্ডু স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করে গেরুয়া বাহিনী। যার জেরে অফিস টাইমে আপ ও ডাউন লাইনে রেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দুটি লাইনেই যাত্রী বোঝাই লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিআরপি ও আরপিএফ ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা অবরোধকারীদের হটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ফলে চরম হয়রানির শিকার হন যাত্রীরা। একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় হিন্দ মোটর স্টেশনে। সেখানে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘাত বেঁধে যায়। সেখানে প্লাটফর্মে ফেলে পেটানো শুরু হয়। এই ঘটনায় পুলিশ কার্যত ছিল নির্বিকার। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

প্রসঙ্গত এদিন বিজেপির ডাকা বন্‌ধে হুগলির নানা জায়গায় অশান্তির খবর পাওয়া যায়। জেলার বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইন অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক জায়গায় বন্‌ধের বিরোধিতা করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পাল্টা বিজেপি-ও বন্‌ধের পক্ষে সওয়াল করতেই দুই পক্ষের মধ্যে মারপিঠ বেঁধে যায়। মানকুণ্ডু স্টেশনে এই অবরোধকে ঘিরে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের সরানোর চেষ্টা করতেই তাঁদের দিকে পাল্টা রেল লাইনের পাথর ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। অবশেষে বেগতিক বুঝে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আর সেই সময়েই স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের লোকো পাইলটের সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মীর বচসা বাধে।