দিল্লিতে মমতার নারী ব্রিগেড নজর কাড়বে

সংসদে মহিলা প্রতিনিধি পাঠানোয় বিজেপির থেকে এগিয়ে তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিনিধি— ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের রেকর্ড ভেঙে বাংলার বুকে এক নয়া রেকর্ড গড়লো তৃণমূল কংগ্রেস৷ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গে ধূলিসাৎ হয়েছে গেরুয়া বাহিনী, ফের জয়ের মুকুট উঠলো তৃণমূলের মাথায়৷ বিজেপি বধের পেছনে দায়ী কি তৃণমূলের নারী শক্তি? এবারও এ রাজ্য থেকে নারী-ব্রিগেড চলেছে সংসদের পথে৷ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯ টি আসনে জয়ী তৃণমূল৷ তার মধ্যে ১১ জনই নারী৷ নারী শক্তিতেই ভর করে বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল তৃণমূল৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ভাষায়, “নারী শক্তি সঙ্গে না থাকলে কোনো কার্যেই সফলতা আসে না৷” তাঁর কথাই যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হলো৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বর্তমান ভারতের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর দাপটও চোখ ধাঁধানো৷ তাঁরই আশীর্বাদ নিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে নেমেছিলেন তৃণমূলের মহিলা প্রার্থীরা৷ নারী ‘সুপার পাওয়ার’ এ ভর করেই বাংলা জয় করেছে তৃণমূল, দাবি রাজনৈতিক মহলের৷ এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের একাধিক নতুন মুখের চমক রয়েছে, একইভাবে রয়েছে পুরনো মুখও৷ সবথেকে বড় চমক, কৃষ্ণনগরে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তথা সাংসদ মহুয়া মৈত্র৷ যাঁকে ঠিক ভোটের মুখে বহিষ্কার করা হয়েছিল সংসদ থেকে৷ ৬ লাখের বেশি ভোটে জিতে সদর্পে আবারও সংসদ ভবনে পা রাখতে চলেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ৷

লোকসভা, বিধানসভা থেকে পুরসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচন যে স্তরেরই হোক না কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হিসাবে সবসময়ই এগিয়ে রাখেন মহিলাদের৷ নারী ব্রিগেড মমতার অন্যতম ভরবিন্দু৷ রাজ্যসভাতেও তাঁর মহিলা প্রতিনিধি একাধিক৷ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও রয়েছেন একাধিক মহিলা মুখ৷ ২০১৯ সালে দু’বারের তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় বিজেপিকে উপহার দিয়েছিলেন হুগলি৷ রচনা বন্দোপাধ্যায় রাজনীতিতে ‘ডেবিউ’ করেই মমতাকে ফিরিয়ে দেন এই কেন্দ্র৷ প্রথম রাউন্ডেই রচনা ‘দিদি নং ওয়ান’ হন হুগলি থেকে৷ অন্যদিকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে মেদিনীপুরে বিজেপি প্রার্থী করেছিল অগ্নিমিত্রা পালকে৷ জুন মালিয়া সেই আসন ছিনিয়ে মমতার ঝুলি পরিপূর্ণ করেছেন৷ মমতাকে নিরাশ করেননি রাজনীতিতে নতুন মুখ সায়নী ঘোষও৷ সায়নী যাদবপুরের সাংসদ হয়ে স্বল্প বয়সেই পাড়ি দিচ্ছেন সংসদে৷


তাছাড়াও কলকাতা দক্ষিণ থেকে মালা রায়, বারাসাত থেকে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, উলুবেডি়য়া থেকে সাজদা আহমেদ, বীরভূম থেকে শতাব্দী রায়, জয়নগর থেকে প্রতিমা মণ্ডল, বর্ধমান পূর্ব থেকে শর্মিলা সরকার এবং আরামবাগ থেকে মিতালী বাগ এবার ঝড় তুলবেন দিল্লির বুকে৷ এক নয়, দুই নয়, দশেরও বেশি মহিলা জনপ্রতিনিধি! অন্যান্য রাজনৈতিক দলে এমন চিত্র দেখা যায়না৷ শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের মহিলা সাংসদ ৩৮%৷ অন্যদিকে বিজেপিতে চিত্রটা অন্যরকম৷

বিজেপি নারী ক্ষমতায়ন বা নারী সশক্তিকরণের কথা বললেও তাঁদের মহিলা সাংসদ মাত্র ১২%৷ নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বিজেপি কে ছাড়িয়েছে তৃণমূল৷ লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী সহ এক গুচ্ছ নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্প এনে বঙ্গ নারীদের সুদিনের মুখ দেখিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার৷ বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এই চিত্রটা ভিন্ন৷ তপশিলি অত্যাচার এবং নারী নির্যাতনে সর্বদাই এগিয়ে থাকতে দেখা যায় উত্তরপ্রদেশকে৷ সেই দিক থেকে বিচার করলে, এনসিআরবি -এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের মধ্যে কলকাতা সর্বাধিক সুরক্ষিত শহর৷ সুতরাং নারী ক্ষমতায়নে বিজেপিকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷

মমতা বন্দোপাধ্যায় ৩৪ বছরের ‘বাম অপশাসন’ উৎখাত করে ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে প্রথমবার বাংলায় সরকার গঠন করেন৷ উল্লেখ্য, মমতা বন্দোপাধ্যায় ছিলেন একজন অতিসাধারণ পরিবারের লড়াকু নারী৷ নিজ সংগ্রামের কথা তিনি বহুবারই বলেছেন বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে৷ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, নারীরা রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন না করলে দেশে পরিবর্তন আনা অসম্ভব৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে সেই ভাবধারায় বেড়ে উঠেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও৷ নারীশক্তিতে ভরসা রাখেন তিনিও৷ দলের মুখ হিসেবে নারীদেরই এগিয়ে রাখেন মমতা-অভিষেক৷ তাই দেশের যে প্রান্তেই ছুটে যেতে হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই গুরুদায়িত্ব দিয়ে থাকেন কখনও বারাসাতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে আবার কখনও কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে৷

নির্বাচনের মুখে একাধিক বার মহিলা তৃণমূল প্রার্থীদের বাসভবনে ইডি, সিবিআই হানা দিলেও মুখ থুবড়ে পড়েননি তাঁরা, বরং সময় নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন৷ এমনকি শেষমেষ জয়ের মুকুট পরে যোগ্য জবাবও দিয়েছেন ‘বাংলা বিরোধীদের’৷