মঙ্গলে এসে পুজো দেবেন তারাপীঠ মন্দিরে
খায়রুল আনাম: জেলায় থেকেও দলের জেলা নেতৃত্ব যে অঙ্কের সমীকরণে দাগ বোলাতে পারেননি, সেটাই করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ লোকসভা ভোটের প্রচারে বীরভূম সফরে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় প্রকাশ্য জনসভা করবেন, তা নিয়ে দলের জেলা কোর কমিটি একাধিক বৈঠক করে জানিয়ে দেয় যে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের রামপুরহাট মহকুমার হাঁসন বিধানসভা এলাকার হাঁসনে প্রকাশ্য জনসভা করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার এসে নামবে এখানকার চিলা মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে৷ বুধবার ৩ এপ্রিল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠে দলের কর্মী সম্মেলনে এসে এখানেই হেলিকপ্টার থেকে নেমেছিলেন৷ এখানকার একটি লজে তাঁর যে কর্মী সম্মেলন হয় তাতে মাত্র ১৯৩ জন প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন৷ তখনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিলো যে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠে এসে দলের তিনবারের তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়ের সমর্থনে এখানে একটি জনসভা করবেন তাঁকে চতুর্থবারের জন্য সংসদে পাঠাবার লক্ষ্যে৷ বুধবার ১০ এপ্রিল রাত্রে দলের জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয় যে, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তীর দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জনসভা করবেন৷ তারপরই দলের জেলা নেতৃত্ব তারাপীঠ যাওয়ার রাস্তার পাশে বেলে গ্রামের পাশের ফাঁকা মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য জনসভা করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে কাজ শুরু দেন৷ জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকরা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা এসে ওই মাঠ পরিদর্শন করে যান৷ মঞ্চ নির্মাণের কাজেও হাত পড়ে৷ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে বৈঠকও করেন৷ কিন্ত্ত শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল গিয়ে হাঁসন বিধানসভার তারাপীঠ লাগোয়া কড়কড়িয়া জয়তারা বিদ্যাপীঠের পিছনের জমিতে প্রকাশ্য জনসভা করবেন৷ এবং সেখানেই অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণ করতে হবে৷ আর এই বার্তা আসার পরেই হাতে সময় কম থাকায় চরম তৎপরতার সাথে রবিবার ২১ এপ্রিল ভোর থেকেই এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য জনসভার জন্য মঞ্চ নির্মাণের কাজে হাত পড়েছে৷ মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল দুপুর ১২ টা নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার এখানে এসে পৌঁছবে৷ এখানে জনসভা সেরে তিনি তারাপীঠ মন্দিরে গিয়ে মা তারাকে পুজো দিয়ে বেলা ১ টার সময় এখান থেকে ফিরে যাবেন৷ এক ঘণ্টার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানকার কর্মসূচী শেষ করবেন৷
প্রকাশ্য জনসভার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁসন বিধানসভা এলাকার এই জায়গাটি কেন বেছে নিলেন, তা নিয়ে বিশ্লেষণও শুরু হয়ে গিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্থান নির্বাচনের নির্যাস-বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, হাঁসনের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ এবারের লোকসভা ভোটে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস–বাম জোটের প্রার্থী৷ সংখ্যালঘু অধু্যষিত এই এলাকায় তাঁর একটা প্রভাব যে রয়েছে তা বিগত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটে স্পষ্ট হয়েছে৷ সংখ্যালঘু অধু্যষিত এই এলাকার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত, আটটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন এবং জেলায় জেলা পরিষদের একটি মাত্র আসন এখান থেকেই দখল করেছে কংগ্রেস–বাম জোট৷ তাই এই জায়গাটিকে জনসভার স্থান হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নেওয়ায় তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে৷ এতদিন পর্যন্ত জেলায় ভোটের সব দায়িত্ব একাহাতে সামলাতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় কেষ্ট অর্থাৎ অনুব্রত মণ্ডল৷ গোরু পাচার মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে৷ সেখানে রয়েছেন তাঁর মেযে সুকন্যা মণ্ডলও৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক সময় বলেছেন, সিবিআই কেষ্টকে বিনাদোষে আটকে রেখেছে৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলায় এসে অনুব্রত মণ্ডল ও সুকন্যা মণ্ডলের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন৷ এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবিষয়ে কোনও বার্তা দেন কী না, সে দিকেও সবার দৃষ্টি থাকবে৷