অখিলকে বরখাস্তের নির্দেশ মমতার, হুঁশিয়ারির পরই মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দলের নির্দেশে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন অখিল গিরি। ইতিমধ্যেই লিখে ফেলেছেন ইস্তফাপত্র। সোমবার তা জমা দেবেন তিনি। মহিলা বন আধিকারিককে কুকথা বলার অপরাধে অখিলের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নির্দেশে রবিবার সকালে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী টেলিফোনে অখিলকে জানিয়ে দেন, যে মহিলাকে তিনি অপমান করেছিলেন, তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং দলের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে হবে। এর আগে দলের নির্দেশে অখিল ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে শুধুই দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়নি দল। তারপরেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। অখিলের আচরণে এবার মমতার নির্দেশে বড়ো সিদ্ধান্ত দলের।

মমতার ভাষায়, “কোনও পরিস্থিতিতেই জনতাকে অপমান করা যাবে না।” এবার নিজের কড়া সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই মমতা দলকে বুঝিয়ে দিলেন, দলীয় নেতা-মন্ত্রীর অপরাধের জেরে তাঁদের অন্তিম পরিণতি কী হতে পারে। পাশাপাশি, রাজ্য প্রশাসনকেও মমতা দিলেন একটি প্রচ্ছন্ন বার্তা। আধিকারিকেরা নির্ভয়ে কাজ করুন, সরকার এবং শাসকদল পাশে আছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সকালেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরেই অখিলকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে ওই মহিলার ঘাড়েই দায় চাপিয়ে শুধু দুঃখপ্রকাশ করেন অখিল। তাতেই আরও কড়া সিদ্ধান্ত নেন মমতা।

তবে নিজের কর্মকাণ্ডে এতটুকু অনুতপ্ত নন, স্পষ্ট জানিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী। ইস্তফার কথা জানিয়ে অখিল বলেন, “আমি মন্ত্রী হিসাবে যা বলেছি, তাতে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। তাই দল আমাকে সরে যেতে বলেছে। তবে কারও কাছে আমি ক্ষমা চাইব না। মন্ত্রিত্ব ছাড়া আমার কাছে বড় ব্যাপার নয়।”


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শনিবার কাঁথির মহিলা বন আধিকারিককে কুকথা বলে নানা হুমকি দিয়েছিলেন মন্ত্রী। ‘জানোয়ার’, ‘বেয়াদব’ জাতীয় শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি ওই মহিলাকে পেটানোর হুমকিও দিয়েছিলেন অখিল। মূলত, তাজপুরে সমুদ্র সৈকতে গাছ কেটে বেআইনিভাবে দোকানপাট বসানো হয়েছিল। সেই দোকানপাটগুলোই ভেঙে দেন স্থানীয় রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ। তার জেরেই শনিবার ওই মহিলা অফিসারকে কুকথা শুনিয়েছিলেন কারামন্ত্রী। অখিল গিরির এমন আচরণে শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও। বিরোধীরা তো বটেই, পাশাপাশি দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বগণও অখিলের কার্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে নিজের আচরণের জন্য পরে দুঃখপ্রকাশ করে অখিল বলেন, “তাজপুরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মন্ত্রী হিসাবে আমি আলোচনা করতে বলেছিলাম। নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। বন আধিকারিককে আমি যে কথা বলেছি, তা অনুচিত। মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে ওই কথা আমার বলা ঠিক হয়নি। পরবর্তীকালে তার জন্য আমি দুঃখও পেয়েছি। আমি এই কথা বলার জন্য অনুতপ্ত।”

এখানেই শেষ নয়, এরপরই ওই মহিলার উপর দায় চাপিয়ে অখিল বলেন, “রেঞ্জার মনীষা সাউ কারও কথা শোনেননি। তাঁর জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেদিন আমি ওখানে গিয়ে সামাল না দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেত। গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এই রেঞ্জারকে জেলা প্রশাসনের কেউ পছন্দ করেন না। ঘটনার জন্য তিনিই দায়ী।” এতেই আরও ক্ষুব্ধ হন মমতা। এর আগে দেশের মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে উদ্দেশ্য করে কুকথা বলার অভিযোগ উঠেছিল অখিল গিরির বিরুদ্ধে। সে সময় তৃণমূলের তরফে অখিলের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি অখিলকে ডেকে সতর্কও করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার তাঁর অন্যায় বরদাস্ত না করে অখিলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।